১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভিন দেশ : বিচার ও সাম্য সবার অধিকার Ñ অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

-

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অস্কারজয়ী হলিউড তারকা তিনি। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূতও। তার মানে অভিনয় বা চিত্রজগতে থেকেও সব সময় দৃঢ়কণ্ঠে কথা বলেন মানবতার পক্ষে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেন প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও। নারীর স্বাধীনতা বিষয়ে দ্য হলিউড রিপোর্টার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার বহু নারী। এমনকি অনেক উৎখাতেরও শিকার। যেটুকু করার স্বাধীনতা রয়েছে নারীদের, তার চেয়ে অনেক কমই ভোগ করে তারা। অথচ মেয়েদের মতপ্রকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে আমাদেরই সমাজ। এমনকি অনেক সময় নারীর মেধা, ক্ষমতা, প্রভাব ইত্যাদিকে অস্বীকারও করে কথিত আধুনিক এ সমাজ। তবুও আমাদের নারীর স্বাধীনতা, অধিকার, কর্তব্য ইত্যাদির জন্য কাজ করে যেতে হবে। তাহলে হয়তো আমাদের আওয়াজ ঠিকই এক সময় পৌঁছে যাবে কাক্সিক্ষত স্থানগুলোতে। সম্প্রতি জোলি বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মানবতার কথাই বলে গেছেন। এমনকি বিশ্বের শিশুদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্যও নিঃস্বার্থ কাজ করে যাচ্ছেন অস্কারজয়ী এ তারকা।
তিনি বলেন, এ তথ্যটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গোটা বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতন ও ক্ষতির শিকার। আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই সততার সাথে। আমি মনে করি, বিচার ও সাম্য সবার অধিকার। আমাদের সবার বিশ্বাস রাখা উচিত, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলেই তার পাশে অপর কেউ দাঁড়াবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত কম্বোডিয়ার ওপর লারা ক্রফট; টম্ব রেইডার (২০০১) ছবি নির্মাণের সময় মানবিক সমস্যাগুলো তিনি তীক্ষèতার সাথে বুঝতে পারেন। এর পরই সারা বিশ্বে মানবিক বিপর্যয়ের বিশাল ধারণা পেয়ে যান তিনি। এরপর বাড়ি ফিরে জোলি ইউএনএইচসিআরের সাথে যোগাযোগ করেন আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোর সংবাদ সংগ্রহের ব্যাপারে। মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে এমন অঞ্চল সম্পর্কে অধিকতর তথ্য সংগ্রহের জন্য সারা বিশ্বের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। প্রাথমিকভাবে ১৮ দিনের মিশন নেন। পরবর্তীকালে যা দেখেন, তার শোকগাথা বর্ণনা দেন। ইউএনএইচসিআরের জরুরি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জোলি পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া আফগান শরণার্থীদের জন্য এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেন। সংস্থাটি এ পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে যে সাহায্য পেয়েছে, তার মধ্যে জোলির অনুদানই সবচেয়ে বড়। মানবকুলের বিপদের সময় তিনি সারা বিশ্ব চষে বেড়ান এবং মানব উন্নয়নে সব ব্যয় নিজস্ব তহবিল থেকে মেটান। এ কারণে ২৭ আগস্ট ২০০১-এ জেনেভায় সংস্থাটি সদরদফতরে তাকে ইউএনএইচসিআরের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর নামে ভূষিত করে। পরের দশকে অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুত ব্যক্তিদের শরণার্থী শিবিরের প্রায় ৪০টি মিশনে অংশ নেন, যে মিশনে ছিল ৩০টি দেশ।
বিশ্বভ্রমণের সব ঘটনা তিনি মাইট্রাভেলস নামক বইতে সংরক্ষণ করেন। ওই সময় বিয়ন্ড বর্ডারস নামে মানবীয় একট নাটক মুক্তি পায়। জোলি সিদ্ধান্ত নেন, মিডিয়া যেসব বিষয় আলোকপাত করেনি, সেসব ক্ষেত্রে ভ্রমণ করবেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষেত্রগুলোতে ভ্রমণ করে খ্যাতি অর্জন করেন। যেমন সুদানে দারফুর যুদ্ধের সময় দারফুর অঞ্চল, দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধকালে সিরিয়া-ইরাক সীমান্ত পরিদর্শন করেন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনী ও অন্যান্য বহুজাতিক বাহিনীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। কাবুলে আফগান যুদ্ধের সময় যুদ্ধাহতদের দেখতে যান। ভ্রমণ, সাহায্য, লোকবল নিয়োগ প্রভৃতি ব্যাপারে প্রশিক্ষণও আছে তার। এসব ব্যাপারে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করেন।
তিনি স্পেশাল এনভয় টু হাইকমিশনার অ্যান্তেনিও গুতেরেস পদে পদোন্নতি পান এবং এই পদে প্রতিষ্ঠানটির তিনিই প্রথম। তার প্রসারিত ভূমিকায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে বৃহৎ শরণার্থী শিবিরগুলোর ওপর নজর রাখার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। পদোন্নতি পাওয়ার পর বিশেষ দূত হিসেবে ইকুয়েডর যান, সেখানে কম্বোডিয়ার শরণার্থীদের সাথে দেখা করেন। সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণে শরণার্থীদের অবস্থা নিরূপণের জন্য জর্দান, লেবানন, তুরস্ক, ইরাক এবং প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া ভ্রমণ করেন। এরপরও বিশ্বের ১২টি ক্ষেত্র তিনি পরিদর্শন করেন এবং শরণার্থীদের অবস্থার ব্যাপারে সুপারিশ করেন।
তার ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্বোডিয়ার জন্ম নেয়া এক পালকপুত্র গ্রহণ করেন এবং তার ছেলে দেশে একটি বাড়ি কেনেন। ৩৯ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত বাড়িটি সামলোট ন্যাশনাল পার্কের কাছে কারডামাম পর্বতসংলগ্ন বাটামবাং প্রদেশে অবস্থিত। এলাকাটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের অবৈধ শিকারি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি পার্কের ৬০ হাজার হেক্টর জমি কিনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের এই মহৎ প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে কম্বোডিয়ার রাজা জোলিকে দেশটির নাগরিকত্ব উপহার দেন।
জোলির প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল জাতিসঙ্ঘের উন্নয়ন গন্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটাকে এশিয়ার প্রথম মিলেনিয়াম ভিলেজ তৈরি করা। প্রকল্পের ভেতরে স্কুল, রাস্তা ও সয়াদুধ কারখানা রয়েছে; যা তৈরিতেও তিনি অর্থায়ন করেন। এক সময় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে হারনাস ওয়াইল্ড লাইফ ফাউন্ডেশন দেখভালের দায়িত্ব পান। ফাউন্ডেশনটি বন্যপ্রাণীদের এতিমখানা ও চিকিৎসাকেন্দ্র। ‘বিয়ন্ড বর্ডারস’ ছবিতে দেখা যায়, ফাউন্ডেশনটি কিভাবে কেটি বিপদগ্রস্ত শকুনকে উদ্ধার করে। একজন পার্টনার নিয়ে তিনি আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর উদ্দেশ্য হলো প্রাণী সংরক্ষণে এগিয়ে আসা।
তিনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসা বিপদগ্রস্ত শিশুদের রক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উন্নয়নশীল দেশে এসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য চাপ দেন। ২০০৮ সালের পর থেকে কিডস ইন নিড অব ডিফেন্স বা কাইন্ড নামক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেয়ার কাজ শুরু করেন। শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারেও জোর দেন। এডুকেশন পার্টনারশিপ ফর চিলড্রেন অব কনফ্লিক্টের সভাপতিত্ব করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শিশুদের সহায়তার জন্য অর্থ জোগান ও কৌশল সৃষ্টি করেন। প্রতিষ্ঠানটি ইরাকে শরণার্থী শিশু, দারফুর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত যুবক, আফগানের পল্লী মেয়ে ও অন্য ক্ষতিগ্রস্তদের সমর্থন দিয়েছে। সেখানে তিনি দুই লাখ মার্কিন ডলার দান করেন।
উত্তর-পশ্চিম কেনিয়া কাকুমা রিফিউজি ক্যাম্পে নারীদের শিক্ষা ও আবাসনের জন্য তহবিল দান করেন। ওই সময়ে তিনি কম্বোডিয়ায় আরো ১০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও এইডস আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য ম্যাডক্স চিভান চিলড্রেনস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশেষ সংবাদ তৈরি এবং গণহত্যা ও ব্যাপক নির্যাতন প্রতিরোধে অর্থায়ন করেন। ২০১১ সালে জোলি লিগাল ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠানটি আইনজীবী ও অ্যাটর্নিদের একটি নেটওয়ার্ক, যা তাদের দেশের মানবাধিকার উন্নয়নে আইনি সহায়তা দেয়। জোলি লিগাল ফাউন্ডেশনে ২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পের পর শিশুদের সুরক্ষায় এবং ২০১১-তে লিবিয়ায় অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক অগ্রগতি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন।
ইউকে সরকার কর্তৃক পরিচালিত সামরিক যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রথম কাতারে ছিলেন জোলি। তার এই বিশেষ ভূমিকায় ২০১৩ সালে জি-৮ প্রেসিডেন্সিতে প্রাধান্য পায় তা। বসনিয়া যুদ্ধের ওপর তিনি ‘ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি’ নামক নাটক রচনা করেন। এই নাটক থেকে প্রেরণা ইউকে জোলিকে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে সহায়তা করে। জি-৮এর এক উচ্চ সভায় যৌন নির্যাতন রোধে বক্তব্য রাখেন। অতঃপর চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত যৌন নির্যাতনবিরোধী গ্লোবাল সামিটে সভাপতিত্ব করেন এবং এটাই ছিল এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় সভা, যা ১৫১টি জাতি সমর্থন ও অনুমোদন দিয়েছে। ব্যাপক সফলতার ধারাবাহিকতায় তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পান। উদ্দেশ্য ছিল নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানে সহায়তা করা। জোলির পুরো নাম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ভয়েট। তার আরেক নাম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি পিট।


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল