বইপাগল থেকে গল্পকার
- রুমান হাফিজ
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
জন্ম এবং শৈশবের বেশি অংশ কেটেছে গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস। ক্লাসের বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়তে গিয়ে কতবার যে ধরা খেয়ে বকাঝকা খেতে হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু বইপোকা তাসমিনাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। সহপাঠী, আত্মীয় যেখানে যার থেকে পেরেছেন বই সংগ্রহ করে পড়েছেন। তারপরও মেধাবী তাসমিনার একাডেমিক রেজাল্ট অন্য সবার থেকে ভালোই হয়েছে।
কিন্তু মাধ্যমিক পাস করার পরপরই তাকে বিয়ে দেয়া হয়। একরকম জোর করেই। গ্রামের সহজ-সরল পরিবেশে বড় হওয়া তাসমিনার তখন কিছুই করার ছিল না। সাংসারিক জীবন তাকে ব্যস্ত করে রাখলেও মনের ভেতরে একটা চাপা ক্ষোভ সবসময় তাকে তাড়িত করত। চুপিসারে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। শুধু পরীক্ষা এলে পরে নানা বাহানা দেখিয়ে ছুটি নিতে হয়েছে। এভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
এর কয়েক বছর পর স্বামীর প্রবাস জীবনে তাকেও সাথী হতে হয়। চলে যান দুবাইতে। ইচ্ছা ছিল লুকিয়ে কিংবা চুপিসারে যেভাবেই হোক অনার্সে ভর্তি হবেন। এখন আর সেই সুযোগও নেই। প্রবাস জীবনে সাংসারিক ঝামেলা কিছুটা কম থাকায় আবারো বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মে। কিন্তু তখন দেশের বইগুলো সহজলভ্য ছিল না ওখানে। যেটুকু পারা যায় সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি নিজেও টুকটাক লিখতে শুরু করেন। এভাবেই চলছিল তার প্রবাস জীবন।
প্রায় একযুগ প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফিরেন।
প্রবাসে জন্ম নেয়া লেখার অভ্যাসটা দেশে এসেও ছাড়তে পারেননি। বাসায় প্রতিদিন পত্রিকা রাখার সুবিধা গল্প, কবিতা, কলাম, ফিচার এসব পড়ার সুযোগ হয়। মনে মনে ইচ্ছা জাগে নিজের লেখাগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করার। কিছু শুভাকাক্সক্ষীর মাধ্যমে সেই ইচ্ছাটা পূরণ হতে খুব একটা সময় লাগেনি।
দেশের অনেকগুলো পত্রিকার তার লেখা প্রকাশ হতে থাকে। সেই ছোটবেলার বইপোকা স্বভাবটা তাকে এতটাই সাহায্য করছে, যা অকল্পনীয়। তার লেখাগুলোও অন্যদের চেয়ে আলাদা। ছোটদের উপযোগী বেশি লিখলেও বড়দের গল্পতেও তিনি কম যাননি।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ২০১৮ সালের বইমেলায় রুনা তাসমিনার একসাথে দুটো বই প্রকাশিত হয়। প্রকাশনীর খরচেই বের হয়। এটা কি কম কথা!
‘মেঘে ঢাকা চাঁদ’ নামে বড়দের উপযোগী গল্পের বইটা বের করে ঢাকার প্রকাশনী ‘প্রতিভা প্রকাশ’ আর ‘টিয়া হাসে নীল আকাশে’ নামে ছোটদের উপযোগী গল্পের বইটা বের করে চট্টগ্রামের প্রকাশনী ‘শৈলী’।
বই দুটোই পাঠকমহলে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। জীবনের এতসব বৈচিত্র্য নিয়ে তার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে যেমনটা বলছিলেন তাসমিনাÑ
‘একদম ছোটবেলায় আমার বিয়ে হওয়াটা নিয়ে এখনো কষ্ট পাই। কিন্তু কী আর করা, ভাগ্যটা যে আমার এমনি!
পরিবর্তনগুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। পেরেছি আবার কখনো পারিনি। নিজের স্বপ্নের জায়গা থেকে কখনো সরে আসিনি। বিশ্বাস ছিল, আমি পড়ালেখা কমপ্লিট করবই। করেছিও। এর জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। তাতেও আমি খুশি। আর এখন ছোট শিশুদের একটা স্কুলে আছি। খুব ভালো সময় কাটে ওদের সাথে।