২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাতালকন্যাদের সুখ-দুঃখ

-


এবার ঈদ করতে গ্রামে যাই পরিবারের সবাই, পুরো সপ্তাহ থাকা হয় কুড়িগ্রামে। মাত্র এক দিনের জন্য যাওয়া হয় ভুরুঙ্গামারী। এখানেই দেখা হয় চাতলকন্যাদের সাথে। চাতালে ধান শুকানো থেকে চাল করার সব কাজ করে এসব চাতালকন্যারা। দিনটি ছিল ঈদের দুই দিন পর। কিন্তু চাতালকন্যাদের মধ্যে ঈদের আমেজ ছিল না। ঈদ কেমন কেটেছে জানতে চাইলে তারা জানান, শুধু ঈদের দিন বন্ধ ছিল। তাও বৃষ্টি ছিল বলে। এ সময় বন্ধ রাখলে বা থাকলে মালিকের আর ওদেরই ক্ষতি। কাজ করলে টাকা আসবে। দৈনিক হিসেবে কাজ করে ওরা সবাই। মরিয়ম, নাসরিন, হালিমা, রাহেলা, ছকিনা ও হাজেরার সাথে কথা হয়। নিজেদের কথা বলেন ওরা।
কেউ কেউ অভাবের তাড়নায় মালিকদের কাছে থেকে আগেই টাকা নিয়েছেন, ধানের সময় কাজ করে পুষিয়ে দেবে বলেন। ঈদের আগে লাগাতার বৃষ্টি থাকায় তাদের কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন রোদ আছে। আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই কাজ চলছে লাগাতার।
পাশের আরেকটি চাতালে যাই, এখানকার কাজ ও মজুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় ওরা জানান, আশপাশে শতাধিক চাতাল রয়েছে, এসব চাতালে চর এলাকাসহ এখানকার কয়েক শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এক চাতালের সাথে অন্য চাতালের শ্রমিকের মজুরির মিল নেই। এসব এলাকায় তেমন কোনো নির্ধারিত মজুরি নেই। এখানে অনেক চাতালে তাদের মজুরি নির্ধারিত হয় ধানের মাঠ হিসেবে। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় একটি মাঠ উঠতে সময় লাগে দু-তিন দিন। মাঠ উঠলেই কেবল একজন শ্রমিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি এবং দৈনিক খোরাকি বাবদ দেড় থেকে দুই কেজি ভাঙা চাল পায়। চাতাল বন্ধ থাকলে বা চাতালে কাজ না থাকলে তারা কোনো মজুরি পান না। চাতাল শ্রমিক মরিয়ম জানান, প্রতিদিন এখানে যত ধান শুকানো হয়, তা এখানকার গ্রামবাসীর নয়। এখানকার চাল শহরেও যায়। চালকল মালিক ও চাতাল মালিকদের গুদামে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। মরিয়মের মা আগে এখানে কাজ করতেন। মায়ের বয়স হওয়ায় এখন মরিয়ম কাজ করেন। মা-মেয়ে দু’জনের সংসার। সেই ছোটবেলায় বাবা মারা যান। চাতালে কাজ করেই চলে যায় ওদের দিন।
মরিয়মের মতো এখানকার সব চাতালকন্যাই হতদরিদ্র পরিবারের। কারো বয়স ১৭-১৮ কারো ৩০-৩২ হবে। তবে বয়সের চেয়ে তাদের বেশি বয়সীই মনে হয়। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন, যা পায় তা নিয়েই হাসিমুখে বাড়ি যান। পরিবারের মুখে হাসি ফোটান। কারো বাবা নেই, কারো স্বামী নেই। আবার কেউ আছেন যাদের স্বামী শহরে কাজ করেন। এখানে চর এলাকার অনেকেই কাজ করেন, ওরা পরিশ্রম বোঝেন না, বোঝেন কাজ। কাজ করলেই টাকা পাওয়া যাবে। কেউ কেউ ছোট সন্তানও সাথে নিয়ে আসে। গাছের ছায়ায় সন্তান বসিয়ে রেখে কাজ করে। ছকিনা এখানে কাজ নিয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে। এর আগে শহরে গৃহশ্রমিকের কাজ করতেন। ভালো লাগেনি বলে গ্রামে চলে যান, এখন রোজ হিসাবে কাজ করেন এখানে।
এসব শ্রমজীবীই নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের ভাগ্য কিছুটা হলেও পরিবর্তন করছেন। সাথে উন্নয়ন করেছেন দেশের অর্থনীতির। অর্থনৈতিক উন্নয়নের হিসাবে যাদের তালিকা করা হয়, সেই তালিকায় মরিয়ম, নাসরিন, হালিমা, রাহেলার কথা কি উঠে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement