২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চোখের জলে দিন কাটে দাদী-নাতনীর

-


প্রায় ১১ বছর ধরে নিখোঁজ একমাত্র সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় আছেন এক দুঃখিনী মা। ছেলে কী অবস্থায় আছে তা জানা না থাকলেও হাজেরা বেগম (৬০) নামে ওই মায়ের আশাÑ এক দিন সে তার বুকে ফিরবে। এ আশা দিয়েই বড় করছেন একমাত্র নাতনী আমিনা আক্তারকেও। জন্মের পর যার সৌভাগ্য হয়নি বাবার মুখ দেখার। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় চরম কষ্টে কাটছে দাদী-নাতনীর সংসার।
জেলার ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামে ধলেশ্বরী নদীতীরে বসবাস করেন হাজেরা বেগম। নিজের বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ার পর অন্যের জমিতে ছোট একটি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এক যুগ আগে মারা গেছেন হাজেরা বেগমের স্বামী। একমাত্র ছেলে আমিন মিয়া নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ১১ বছর। নাতনী আমিনা আক্তারকে (১০) নিয়েই বসবাস করেন তিনি।
নিখোঁজের ছয় বছর পর আমিনের স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে দেন তার স্বজনেরা। সেই থেকে নাতনী আমিনা হাজেরা বেগমের কাছেই বড় হচ্ছে। হাজেরা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। অনেক কষ্টে নাতনীকে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়াচ্ছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সে।
ছেলের বিয়ের সময়কার কয়েকটি ছবিই এখন স্মৃতি হাজেরা বেগমের। সময় পেলেই বের করে তা দেখেন। মা-বাবার ছবি দেখে নাতনী কাঁদে বলে ছবি লুকিয়ে রাখেন তিনি।
ছেলের স্মৃতি আর সংসারের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজেরা বেগম। পাশে বসে কাঁদছিল শিশু আমিনাও।
হাজেরা বেগম বলেন, বয়স হয়েছে। প্রায়ই অসুস্থ থাকি। এ জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। কাজ না করতে পারলে দাদী-নাতনীকে মাঝে মধ্যে না খেয়েই থাকতে হয়।
আমিনা আক্তার জানায়, জন্মের পর বাবাকে দেখেনি সে। দাদীর কাছে ছবি দেখেই বাবাকে চিনেছে। যখন অন্য শিশুদের বাবার আদর পেতে দেখে তখন তার খুব কষ্ট হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানান, হাজেরা বেগম নাতনীকে নিয়ে খুবই কষ্ট করে সংসার চালান। তার স্বামী নেই, সন্তান নেই। বাড়িঘরও নেই। অথচ তাকে বিধবা বা বয়স্কভাতা দেয়া হয় না। মেয়েটির ইচ্ছা লেখাপড়া করার। কিন্তু যেখানে খাবারই জোটে না, সেখানে লেখাপড়া চলবে কিভাবে।
ঘিওর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল আগামীতে হাজেরা বেগমকে বিধবা বা বয়স্কভাতার তালিকায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল