১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভিন দেশ

চরিত্রের নাম দেয়া হলে অনেক সময় হারিয়ে যেতে থাকে চরিত্রগুলো : অ্যানা বার্নস

এবারের ম্যানবুকার পুরুস্কার জয়ী অ্যানা বার্নস -

অ্যানা বার্নস। তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের নামকরা উপন্যাসিক। এবারের ৫০তম ম্যান বুকার জয়ী। তার তৃতীয় উপন্যাস ‘মিল্কম্যান’ বা দুধওয়ালা লিখে এ সংক্রান্ত ৫০ বছরের ইতিহাসে দেশটি প্রথম পুরস্কার পেলেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘নো বোনস’ ২০০১ সালে লিখে রয়েল সোসাইটি অব লিটারেসি কর্তৃক উইনিফ্রেড হন্টবাই মেমোরিয়াল প্রাইজ লাভ করেন। মোস্টলি হিরো, লিটল কনস্ট্রাকশন লিখেও প্রচুর প্রশংসা পান বিশ্ব সাহিত্য জগতে।
মিল্কম্যানের কেন্দ্রীয় বা মূল চরিত্র প্রায় ১৮ বছরের কিশোরী ‘মিডল সিস্টার’। তবে তেমন ঘনঘটাপূর্ণ নয়, উপন্যাসটির ঘটনা। একটি নামহীন বালিকাকে মেজো মেয়ে হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মেয়েকে তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়সের একজন আধা-সামরিক বাহিনীর লোক প্রণয় করে।
মিল্কম্যানের কাহিনী হচ্ছেÑ ১৯৭০ সালে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে বিক্ষুব্ধ অবস্থায় কিভাবে মানুষ বেড়ে উঠেছে তার সঙ্কলন। দাসরা কিভাবে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সেই কাহিনী। এ দিকে, লিটল কনস্ট্রাকশন উপন্যাসটি প্রায় সব দিকে বাধা, এমন পরিবারে নারীদের জীবন নিয়ে কমিক ও পরিহাস তুলে ধরে। এক উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮ মিল্কম্যান প্রকাশিত হবে। উপন্যাসটি লেখার প্রায় চার বছর আগে তীব্র পিঠ ও কোমরব্যথা, ইংল্যান্ডে আজ এখানে, কাল ওখানেÑ এভাবে বসবাস এবং জীবন বাঁচানোর তাগিদে খাদ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কারণে লেখালেখি করার কোনো সুযোগই প্রায় ছিল না। তিনি রাতে অল্প কয়েক ঘণ্টা ঘুমাতে পারতেন। ২০১৪ সালে নারীর ব্যথা নিয়ে তিনি বলতেন, মিল্কম্যান উপন্যাসটি আমি যথাসময়ে শেষ করতে পারব কি না জানি না। এখনো শল্যচিকিৎসার পর তীব্র ব্যথা অনুভব করি। তিনি বলেন, আমি বেড়ে উঠি নিম্নবিত্ত ক্যাথলিক শ্রমিকদের মধ্যে। মাঝে মধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়েছে দারিদ্র্যতার কারণে। একটি তহবিলের ফুড ব্যাংক ছিল বলে কিছুটা ভরসা বা রক্ষা। জীবিকার সন্ধানে কাজ করতে হয়েছে বিচিত্র ধরনের। এমনকি অর্থের প্রয়োজনে মানুষের বাড়ি পর্যন্ত দেখভাল করতে হয়েছে। তারই ভাগ্যে জুটেছে বুকার জয়ের ৫০ হাজার পাউন্ড পুরস্কার। আর এটিই ঘুরিয়ে দেয় আমার জীবনের মোড়। সাত ভাইবোনের পরিবারটি দেখতে পায় আশার আলো। বলা যায়, তাকে লেখালেখির দিকে টেনে নিয়ে গেছে নিয়তিই। তারপরও তিনি যেন অতীত ভুলে যেতে পারছেন না। অ্যানা বার্নস বলেন, যুদ্ধ না থাকলেও সেই যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতিও যেন ভুলতে পারি না। ভুলতে পারেন না মাতৃভূমির স্মৃতিকেও।
কয়েক বছর আগে বার্নসের মিল্কম্যানের পাণ্ডুলিপি পড়ে ফেরত দিয়েছিলেন জনাকয়েক প্রকাশক। অথচ তার এ উপন্যাসের অগণিত কপি বিক্রি হয়েছে পুরস্কার ঘোষণার আগের সপ্তাহে। পুরস্কার ঘোষণার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি হয়েছে হাজার হাজার কপি। এ সংক্রান্ত হিসাব বা তথ্য বই বিক্রি পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিয়ে লসেন বুকস্ক্যানের সংস্থার লোকেরা আরো জানিয়েছেন, বইটি রয়েছে বুক সেলারের শীর্ষ ৫০ বইয়ের তালিকায় নবম স্থানে। উপন্যাসটির চাহিদা বা পাঠক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছেন এর প্রকাশক। যে কারণে ছাপতে হয়েছে আরো প্রায় সোয়া লাখ বই। সব মিলিয়ে ছাপতে হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার কপি।
উপন্যাসটি লেখার পেছনে একটি কৌশল এঁটেছিলেন লেখক। তা হচ্ছে, এর ব্যবহৃত কিছু ভাষা প্রচলিত নয়। তারপরও যেভাবে হোক, পাঠক তা পড়ছে ও জানছে। সে কারণে অনেকে এটিকে অভিহিত করেছেন ‘চ্যালেঞ্জিং’ হিসেবে। তার এ উপন্যাসটিকে কেন্দ্র করে ভালো ও মন্দ দুই রকমেরই সমালোচনার ঝড় ওঠে সাহিত্য জগতে। তবে প্রশংসাই বেশি। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, উপন্যাসটি লেখক এমন ভাষা ও কায়দায় লিখেছেন, আগে একেবারেই পড়া হয়নি এমন কিছু বা লেখা। অনেকেই ধারণা করেছিল, বইটি নিজেই পাঠক টানবে। অনেকে বলেছেন, যারা রাজনীতি করেন, তাদেরও পড়া উচিত মিল্কম্যান। অনেকে অবাক হয়েছেন এ জন্য, উপন্যাসটি লেখা হয়েছে ব্রেক্সিট এবং হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের (বৈশ্বিক) আগে। তার পরও অনেকে তা পড়ে খুঁজে পেয়েছেন উভয়ের প্রাসঙ্গিকতা বা সংশ্লিষ্টতা।
লেখার মধ্যে চরিত্রদের নাম দেয়া, না দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যানা বার্নস বলেন, চরিত্রদের নাম দেয়া হলে অনেক সময় নানা কারণে হারিয়ে যেতে থাকে চরিত্রগুলো। এতে করে হারিয়েও যেতে পারে পুরো গল্পই। এসব দিকে আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement