২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রিক্তার মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন

-

পঞ্চগড় জেলার ডোকরোপাড়া মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও পঞ্চগড় সদরের ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীমা আক্তারের বড় মেয়ে সাইদা আক্তার রিক্তার মৃত্যু নিয়ে তার স্বামীর বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের শোল্টহরী গ্রামে নানা গুঞ্জন উঠেছে। জেলার বোদা-আটোয়ারী রাস্তাসংলগ্ন কলকুঠি বাজারের দক্ষিণে এক কিলোমিটারের মধ্যেই শোল্টহরী গ্রাম। ওই বাজারে চায়ের দোকানে চা পানের সময় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল রিক্তার বিভীষিকাময় দাম্পত্য জীবন তথা রিক্তার ওপর চলা স্বামী মখলেছার রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের অবর্ণনীয় করুণ কাহিনী। শোল্টহরী গ্রামের মৃত খামির উদ্দীনের ছেলে মখলেছার রহমানের সাথে প্রায় ১৮ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তার। তখন রিক্তার বিয়ের বয়স হয়নি। পরিবার থেকে খালাতো ভাই মখলেছার মাস্টারের সাথে বিয়ের কথা বলায় রিক্তা না করেনি। সামাজিকভাবে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি এসে কয়েক মাস যেতে না যেতেই রিক্তার ওপর শুরু হয় যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার বাবার বাড়ি পঞ্চগড় শহরের ডোকরোপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল সে। দেবীপুর ইউনিয়নের ওই ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপস-মীমাংসায় তিনি কয়েকবার উপস্থিত থেকে রিক্তাকে শ্বশুরবাড়ি ফিরিয়ে আনেন। কেমন করে যে কী হয়ে গেল। খুবই দুঃখজনক, সন্তান দু’টির জন্য তিনি সমবেদনা জানান। এ দিকে রিক্তার মৃত্যুতে বাবার বাড়ি ডোকরোপাড়ায় শোকের ছায়া। বৃদ্ধ বাবা-মা নয়নের মণি রিক্তাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। রিক্তার বড় মেয়ে মেমোরি নবম শ্রেণীতে আর ছেলে তুষার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। জানা যায়, ১৭ অক্টোবর সকালে হঠাৎ রিক্তা অসুস্থ হয়ে পড়লে মখলেছার তাকে বোদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে। কর্তব্যরত ডাক্তার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে নিয়ে গেলে রিক্তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন দেখে ডাক্তার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় রিক্তার মৃত্যু হয়। রিক্তার বাবা রংপুরে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন। প্রথম জানাজা পঞ্চগড়ে, দ্বিতীয় জানাজা স্বামীর বাড়ি শোল্টহরীতে হয়ে ওই গ্রামে ১৯ অক্টোবর রাতে তাকে দাফন করা হয়। রিক্তার বোনের স্বামী মকলেছুর জানান, বিয়ের পর থেকেই রিক্তার ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন। দাম্পত্য কলহের বর্ণনা রিক্তা আমাকে অনেকবার বলেছে। রিক্তা তার সন্তানদের রেখে কখনো বিষপান করতে পারে না। মখলেছারের পরিবারের বক্তব্যÑ রিক্তা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। দাফনের পর লোকজনকে প্রকাশ্যেই বলতে শোনা গেছে, সুদখোর মখলেছার টাকা ছাড়া কিছু চিনল না!
তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলেও অনেকে জানান। মকলেছার বোদা উপজেলার নতুনহাট সফিউদ্দীন আহম্মেদ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আত্মহত্যার বিষয়টি স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে চায় না। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।’ রিক্তার বাবা-মার দাবি রিক্তাকে শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement