২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালো খেলোয়াড় হতে চাই

-

তাসলিমা মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন গঙ্গারামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা দিনমজুর মো: আনছার শেখ। কায়ক্লেশের সংসার। অথচ এই তাসলিমা হয়ে উঠেছে স্কুল এবং এলাকার গর্ব। তাসলিমা ফুটবল, ভলিবল থেকে শুরু করে সব খেলায়ই পারদর্শী। স্কুলের স্যাররা তাসলিমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। স্কুলে গিয়ে স্যারদের কাছে তাসলিমা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, সে স্কুল টিমে আসার পর যতগুলো জয় হয়েছে, সবগুলোতে তার অবদান অনস্বীকার্য। কেননা প্রতিটি ম্যাচে রয়েছে তার দুর্দান্ত সব গোল ও অত্যন্ত দক্ষ সব কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে ফুটবল খেলতে নামলে তাসলিমার পায়ের শট দেখার মতো। মেয়েদের খেলায় সাধারণত এমন শট দেখা যায় না। তাসলিমার স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক বাবু কিশোর লস্কর বলেন, এই ছোট্ট তাসলিমার হাতে যে কত জোর সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন, সেটি বোঝা যায় যখন তাসলিমা হ্যান্ডবল খেলতে নামে এবং সবার থেকে ভালোভাবে বুঝতে পারে তার প্রতিপক্ষেরা। স্যার আরো বলেন, তাসলিমার দক্ষতা শুধু হ্যান্ডবল আর ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই স্কুলে আসার পর থেকে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বেশির ভাগ ইভেন্টসে প্রথম স্থান তার দখলে। তাসলিমা দৌড়াতে পারে ভালো, বর্শা, চাকতি ও গোলক নিক্ষেপে পারদর্শী। একটা আনন্দের বিষয় হলো, আমার স্কুলের বয়স ৪৬ বছর। এ ৪৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে গতবার তাসলিমা স্কুলের হয়ে বর্শা ও উচ্চ লাফে বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ক্রীড়া জগতে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। ক্রীড়া শিক্ষক ও আরেকজন শিক্ষক মিলে তাসলিমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বরিশালে। তারা বললেনÑ যেখানেই তাসলিমা অংশগ্রহণ করেছে, সেখানেই এক অন্য রকম চমক দেখিয়েছে বিভিন্নভাবে প্রশংসিত হয়ে। বিভাগীয় পর্যায়েও তাসলিমা প্রথম স্থান অধিকার করার দক্ষতা রাখে; কিন্তু দুর্ভাগ্য কিছু অনিয়ম আর অবহেলা আমাদের সে অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাসলিমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা: তাহেরা বেগম বলেন, তাসলিমা আমার স্কুলের গর্ব। তাসলিমাকে নিয়ে গর্ব করা চলে। তাসলিমার ভেতরে যে তেজ বা ইচ্ছাশক্তি রয়েছে, সেটির সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে সে অনেক ভালো কিছু করতে পারত। চার বোনের মধ্যে তাসলিমা তৃতীয়। তাসলিমার মা মোছা: শুকুরণ বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাসলিমা বাড়ির অন্য সব ছেলের সাথে ক্রিকেট, হাডুডু, ব্যাটমিন্টন, কখনো বা ফুটবল, লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করেছে। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় বাড়ির সব ছেলে ফুটবলের সময় ফুটবল ও ক্রিকেটের সময় ক্রিকেট খেলে। তাসলিমা ওদের অন্তর্ভুক্ত। কোনো খেলা মিস করে না তাসলিমা। তাসলিমার বয়সী ছেলেরাও তাসলিমার সাথে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে পেরে ওঠে না। তাই তো ওকে নিয়ে রোজ খেলা শুরুর আগে চলে কাড়াকাড়ি। তাসলিমার পড়া প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে হেডস্যারের সাথে তাসলিমার কথা বলতেই স্যার বললেন, ওর কথা ভুলতে পারব না। ওই ছোট্ট মেয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের। অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে খেলাধুলা বিষয়ে। এখনো স্কুলপর্যায়ের খেলাধুলায় গেলেই তাসলিমার কথা আলোচনা করেন অন্য সব স্কুলের স্যারেরা। তাসলিমার সাথে কথা হলে বলে, আমার ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই করতে পারি না। নানা সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে আর্থিক সমস্যাই বেশি। তা ছাড়া, আরেকটা কথা। আমার আব্বা কয়েক মাস ধরে খুবই অসুস্থ। বিছানায় পড়েছেন। সংসারের অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। বুঝছি না এবার আমার লেখাপড়াও চালাতে পারব কিনা। আমি স্কুলের হয়ে খেলতে চাই। আমি ভালো একজন খেলোয়াড় হতে চাই।
এবারো মাধ্যমিক স্কুলপর্যায়ে আরো ভালো কিছু উপহার দেবে, সেই আশাই তাসলিমার স্কুল ও এলাকাবাসীর।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement