২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আ মি ও ব ল তে চা ই : সৌন্দর্য কি শুধুই রঙে

-

ইদানীং হারুন কাকার সাথে আব্বার গলায় গলায় ভাব। হারুন কাকা পাশের মহল্লার মানুষ হলেও আজকাল আমাদের মহল্লায় তাকে রোজ বিকেলে আসতে দেখা যায়। এখানে আসার একটাই কারণÑ আমার আব্বার সাথে সারা বিকেল বিনোদনমূলক সময় কাটাবেন বলে। আব্বাও অবশ্য এ মানুষটার সাথে ভালোই মিশেছেন। জীবনের বিভিন্ন বয়সে এসে বিভিন্ন মানুষের সাথে রিলেশন হবেই, এটা সৃষ্টির আদিম রহস্য।
একদিন হারুন কাকা আব্বাকে প্রস্তাব দিলেন, ‘আমার ছেলে হামিদের জন্য পাত্রী লাগবে। ভালো মেয়ে পেলে জানাবে। মেয়েকে সুন্দরী হতে হবে না, শিক্ষিত, নম্র-ভদ্র, আর ধার্মিক হলেই চলবে।’ হেসে আব্বা জবাব দিলেন, ‘আচ্ছা ভেবে দেখব।’
ভেবে দেখতে আর বিলম্ব করেননি আব্বা। হারুন কাকার কথানুযায়ী শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র, আর ধার্মিক পাত্রী হিসেবে আব্বা নির্বাচন করলেন ফরিদা আপাকে। আমার বড় জেঠার মেয়ে ফরিদা আপা। স্বভাবে ভদ্র আর ইংরেজিতে অনার্স পাস করা ফরিদা আপার বিয়ের বয়স পার হলেও এখনো বিয়ের ফুল ফোটেনি গায়ের রঙ কালো বলে। তাতে কি, হারুন কাকা তো বলেই দিয়েছেন মেয়েকে সুন্দরী হতে হবে না। তো সব মিলিয়ে আব্বা ভেবে দেখলেন হারুন কাকার ছেলের জন্য পাত্রী হিসেবে তার বড় ভাইয়ের মেয়ে ফরিদাই উপযুক্ত।
ফরিদা আপা, আমার দেখা অতি সাধারণ মেয়ে হলেও ব্যবহার আর মাধুর্যময় কথাবার্তার মাপকাঠিতে অসাধারণ এক নারী। দক্ষ হাতে পুরো পরিবারকে সামলে রাখার অপার ক্ষমতা তার। ভালো ছাত্রী হওয়ায় সবগুলো পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পাস করার রেকর্ড আছে তার। ইংরেজিতে তার চমৎকার জ্ঞান বলে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করেছেন। দারুণ সংসারী ফরিদা আপা শুধু শিক্ষিতই নন, বেশ ধর্মপরায়ণও। নামাজ-রোজা থেকে শুরু করে ধর্মীয় যাবতীয় জ্ঞান তার বিপুল। রকমারি পিঠা-পায়েস বানানোতেও ফরিদা আপার জুড়ি নেই। আমাদের বয়সভারী দাদীজানের সেবা যতেœ তিনি বরাবরই এক পায়ে খাড়া। ফরিদা আপা মনে করেন একজন নাতনী হয়ে দাদীজানের সেবা করাটা তার নৈতিক কর্তব্য।
সেই কর্তব্যপরায়ণ ফরিদা আপা আজো সংসারী হয়ে উঠতে পারেননি, গায়ের রঙ কালো বলে। বিয়ের সম্বন্ধ যে একেবারে আসে না, তা না। বরং গায়ের রঙ কালো বলে সবগুলো সম্বন্ধ বাতিল হয়ে যায়। ফরিদা আপার ভেতরটা পাত্রপক্ষরা কখনো ভেবে দেখে না। বাহিরটা নিয়েই তাদের যত আপত্তি।
সবকিছু বিবেচনা করে আব্বা সিদ্ধান্ত নিলেন হারুন কাকাকে ডাকবেন। তার ভাইয়ের রূপবতী মেয়ে না হোক, গুণবতী মেয়েকে হারুন কাকার সামনে হাজির করবেন। যেহেতু হারুন কাকা পাত্রী সন্ধানে আব্বাকে আহ্বান করেছেন।
২.
আজ শুক্রবার। আব্বা আর হারুন কাকার সামনে মাথায় লাল শাড়ির দীর্ঘ ঘোমটা টেনে সোফায় বসে আছেন ফরিদা আপা। টিÑটেবিলে নানান পদের নাস্তার সমারোহ। সাদা পাঞ্জাবি পরা হারুন কাকা সেসব নাস্তায় মগ্ন না হয়ে পান রাঙানো ঠোঁটে হেসে হেসে নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছেন ফরিদা আপাকে। ঘোমটার ভেতর থেকে সেসব বহুমুখী প্রশ্নের সঠিক জবাব শোনে হারুন কাকা ব্যাপক সন্তুষ্ট। এতক্ষণে হয়তো মনে মনে ফরিদা আপাকে তার ছেলের জন্য হবু বউ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। তাই হয়তো হারুন কাকা পান চিবিয়ে চিবিয়ে এত মিষ্টি করে হাসছেন। কিন্তু সেই হাসি মলিন হয়ে গেল, যখন হারুন কাকা ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা ফরিদা আপার মুখ দর্শন করলেন। বিদায় নিয়ে ফরিদা আপা যখন ভেতরে চলে গেলেন, হারুন কাকা আব্বাকে নিথর গলায় বললেন, ‘আমি বলেছি মেয়ে সুন্দরী না হলেও চলবে, তাই বলে এত কয়লা মুখ? না না, এ মেয়ে আমি কেন, আমার ছেলেও কখনো পছন্দ করবে না। তবে হ্যাঁ, মেয়ে শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমতী বোঝা গেছে।’ ইতিবাচক কোনো সঙ্কেত না দিয়ে শেষ পর্যন্ত হারুন কাকা আব্বাকে দু’দিন পর জানালেন কালো কুশ্রী ফরিদা আপাকে তিনি পুত্রের জন্য আর ভাবতে পারবেন না। ফরিদা আপার মতো এ সমাজে এমন হাজারো নারী আছেন, যাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে সবাই গুরুত্ব দেয়, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে নয়। সবাই তাদের বাহিরটাই দেখে, ভেতরটা নিয়ে কারো গবেষণা নেই।
জোবায়ের রাজু
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement
আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান

সকল