১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জের প্রথম নারী আইনজীবী জেসমিন আরা

-


‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রথম নারী সলিসিটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের প্রথম নারী আইনজীবী জেসমিন আরা বেগম। তিনি জুডিসিয়াল সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবেই প্রথম তা নয়, তিনি তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জের প্রথম নারী আইনজীবীও। সততা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতাই তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে।
জেসমিন আরা বেগমের জন্ম ১৯৬০ সালে সুনামগঞ্জ শহরে। বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী অ্যাডভোকেট সুনাওর আলী ও মা সমাজ সেবিকা রাশেদা মাজেদা খানমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকসম্পন্ন করে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ ও ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করার পর সেন্ট্রাল ল’ কলেজে ভর্তি হয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলা বারে তিনি আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। সে সময় সুনামগঞ্জ জেলা বারে কোনো নারী আইনজীবী ছিলেন না। এমনকি দেশের উত্তর প্রান্তের হাওরবেষ্টিত এই জেলার নারীরা পড়াশোনায়ও পিছিয়ে ছিলেন।
পরে জেসমিন আরা বেগম সপ্তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী জজ হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দেন। পর্যায়ক্রমে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মুন্সীগঞ্জ ও শেরপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। সলিসিটর হিসেবে পদায়ন হওয়ার আগে সর্বশেষ তিনি কর্মরত ছিলেন কুমিল্লায় জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে। ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের চাকরিজীবনে তিনি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইন উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত কাজের বাইরে তিনি বাংলাদেশ উইমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা ও ছোট বোনকে হারানোয় জেসমিন মায়ের কাছে মানুষ হয়েছেন। পরিবারে অভাব-অনটন ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। তবে বরাবরেরই মেধাবী এই নারী কখনো দমে যাননি। আদালতে বিচারকের কঠিন দায়িত্ব পালন করলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি নরম মনের মানুষ। গল্প ও ছড়া লিখেন, অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসেন। ‘কবুতরের ডিমখেকো সুরমা’ ও ‘সৃজন মনি সোনার খনি’ নামে তার দু’টি শিশুতোষ গল্পের বই প্রকাশ পেয়েছে। জেসমিন আরা বেগমের স্বামী ড. মোহাম্মদ সাদিক সরকারের সাবেক সচিব এবং বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। উচ্চপদস্থ এই আমলাও একজন স্বনামধন্য কবি। এই দম্পতির দুই সন্তান কাজিম ইবনে সাদিক ও মাসতুরা তাসনিম সুরমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে পড়াশোনা শেষে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এ ছাড়া জেসমিন আরার বড় বোন অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার বেগম সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। জেসমিন আরা বেগম বলেন, প্রথম নারী হিসেবে সলিসিটর পদে দায়িত্ব পেয়ে ভালো লাগছে। জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। এ জন্য পরিবার, সহকর্মী, শুভাকাক্সক্ষীসহ সবার সহযোগিতা ও শুভকামনাই পথচলার পাথেয় হয়ে থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement