ভিক্ষা করি না কামাই করে খাই
- এস আর শানু খান
- ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
নড়াইল-মাগুরা জেলার সীমান্তে বড় বিলবোর্ডে বড় করে লেখা ভিক্ষুকমুক্ত নড়াইল জেলা। লেখাটা চোখে পড়তেই মনের ভেতর নানা ধরনের কোমল অনুভূতি জাগ্রত হয়। ভিক্ষুকমুক্ত কথাটার আসল মানে ভিক্ষা করার মতো মানুষ নেই। তাও আবার দু’ভাবে নেয়া যেতে পারে। যেমন জোর করে ভিক্ষাবৃত্তিকে পরিহার করা মানে ভিক্ষা করাকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। প্রশাসনিকভাবে বাধা দেয়া। এমন হলে অবশ্য ভিক্ষুকে নানা সুবিধা থেকে হবে বঞ্চিত। তাদের অসহায়ের বেড়াজালে ঘেরা জীবন হয়ে উঠবে আরো শোচনীয়। যেটা মানবিকতাকে পরিহাস করবে। একটু গভীরভাবে ভাবতে গেলে একটা জিনিস কিন্তু উপলব্ধি করা যায় অতীব সহজে।
ভিক্ষা করাটা আসলে সহজ কাজ নয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পাতা। শত শত মানুষের কাছে হাত পেতে গুটিকয়েক জনের কাছ থেকে কিছু পাওয়া আর বাকি সবার কাছ থেকে নানা উপহাস। উদ্ভট সব কথাবার্তা সত্যি মেনে নেয়ার নয়। আমরা সামান্য কারো কাছে টাকা ধার চাইতে গেলেও নানাভাবে লজ্জা বোধ করি। নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রতিহত করতে কষ্ট হয়। তাহলে একজন মানুষ কতটা অসহায় ও নিরুপায় হলে ভিক্ষা করতে আসে ভাবাই যায় না।
যাহোক দেশের সরকার বিভিন্ন মঙ্গলকর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে দেশকে উন্নত থেকে উন্নততর করার যে প্রয়াস পেয়েছেন তার মধ্যে দেশ থেকে ভিক্ষুক নিবারণ করা অন্যতম। নানাবিধ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ভিক্ষুকদের স্বাবলম্বী করে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এরই মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা ভিক্ষুকমুক্ত বিশেষণে বিশেষায়িতও হয়েছেন। তন্মধ্যে নড়াইল জেলা অন্যতম। নড়াইল শহরে বিভিন্ন স্থানে যেসব মানুষকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভিক্ষা করতে দেখতাম এখন সেসব লোককে বিভিন্ন কাজ করতে দেখে ভাল লাগে। অন্ধ কয়েকজনকে দেখি গাড়িতে উঠে বাদাম বিক্রি করেন। কেউ বা আবার পেপার। কেউ আবার শসা, আমড়াসহ বিভিন্ন সিজিনাল জিনিস বিক্রি করেন। সে দিন ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে নড়াইল শহরের প্রাণকেন্দ্র রূপগঞ্জ শপিং মার্কেটে চোখে পড়ল একটা সৃজনশীল মেসেজ। অবশ্য প্রথম দেখাতেই এটি চোখে পড়েছিল না। আমি শুধু দেখেছিলাম বৃদ্ধ মহিলার সামনে একটা ওজন মাপার মেশিন ও গলায় কিছু লেখা একটা কাগজ ঝোলানো। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখলাম বৃদ্ধা মহিলা মানুষ ডাকছেন ওজন মাপার জন্য। মানুষ ওজন মাপছেনও বটে। গলায় ঝুলানো কাগজটাও ভালো করে দেখলাম। সেটাতে লেখা ‘ভিক্ষা করি না ওজন মাপুন সাহায্য করুন’। আমি উনাকে দেখিয়েই কয়েকটা শট নিলাম। যাতে উনার আগ্রহটা বাড়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে উনার কিছু গল্প শুনলাম। ঈদের কেনাকাটা হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করতেই বললেন কেনাকাটা করব যে বাজান টেয়া কই পাবো। গ্রামের এক বড়লোক জাকাতের একখান শাড়ি দিছে ওটাই আমার কেনাকাটা। ফিতরার টাকা পেয়েছেন কি না বলতেই বললেন পেয়েছি। কয়েকজন দিছে। সংসারে সদস্য সংখ্যা শুনতেই উনি কথাটা এড়িয়ে গেলেন। আমি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
অবশেষে জানতে চাইলাম এই ওজন মেপে রোজ কত টাকা রোজগার হয়? উনি কিছুটা হতাশার হাই তুলে বললেন মানুষের টাকার অনেক দাম বাবাজি। এটা ওটা করে হাজার টাকা নষ্ট করলেও ২-৫ টাকা নষ্ট করে ওজন মাপাতে তারা আগ্রহী না। অথচ এই দুই-পাঁচ টাকা যে আমার জন্য কত প্রয়োজন সেটি যদি বুঝত তাহলে এমনটা করত না। রোজা আছেন বলতেই বললেন আল্লাহর দোয়ায় সবই আছি। সামনের গুলোন ও থাকব। বহু বছর রোজা ছাড়ি না।
এখন তো জায়গায় বসে থাকি। জেলা ভিক্ষক নিবারণ ফান্ড থেকে এই মেশিনটা কিনে দেয়ার আগে তো সারা শহর এ বাড়ি সে বাড়ি পায়চারী করে ভিক্ষা করে বেড়াতাম। তখনো রোজা ছেড়েছি বলে মনে পড়ে না। ভিক্ষা করে বেঁচে থাকা ও এমন নিজে ইনকাম করে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বৃদ্ধা চাচী একটু গুটিয়ে বসে বললেন, ‘সত্যি কথা কি আব্বা আগে এক দিনে যে কামাই হতো এখন হয়তো এক সপ্তাহেও সেটা হয় না।
আগের রমজানে দিনেই ইনকাম হতো কত শত টাকা অথচ এই রমজানে হয়েছে তার কয়েক ভাগের এক ভাগ তবুও নিজের রোজগারের টাকার মধ্যে রয়েছে এক অন্য রকম শান্তি। অন্য রকম তৃপ্তি। কষ্টে কাটুক তবুও ভালো আছি। সবচেয়ে বড় কথা বাবাজি এখন আমি বলতে পারি ‘আমি ভিক্ষা করি না, কামাই করে খায়’। বাকি জীবনটা এভাবেই কাটাতে চাই আল্লাহ চাইলে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা