১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদের সকালে পরিবারের সাথে রায়হানা শারমিন

-

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী রায়হানা শারমিন মিশু অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও অমায়িক। ছোট্টবেলা থেকে থেকে ছায়ানটে গান শিখলেও বাবা-মায়ের আদরের বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োক্যামিস্ট্রিতে অনার্স করার পরপরই বিয়ে হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ডা: শামীম হোসেন খানের সাথে। সেটা ১৯৯৬ সালের কথা। তারপর ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনে মাস্টার্স করেন। এর সাড়ে তিন বছর পর ডা: শামিম অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হলে স্ত্রী মিশুকে নিয়ে যান নিজের কাছে। শুরু হয় মিশুর প্রবাসজীবন। ডা: শামিম মেলবোর্নে অবস্থিত গু ঐবধষঃয মেডিক্যাল সেন্টার প্রাইভেট ক্লিনিকের একজন পার্টনার। কয়েকজন ডাক্তার বন্ধু এর প্রতিষ্ঠাতা।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী রায়হানা শারমিনের কাছে জানতে চাইলাম, এত কাজ করে আপনারা এত হাসি-খুশি, আনন্দ-ফুর্তির এনার্জি কোথায় খুঁজে পান? একটু মুচকি হেসে মেয়েটি বলল, আমরা সারা সপ্তাহ স্বামী, বাচ্চা-কাচ্চা, সংসারধর্ম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, এতটুকু ছুটি বা অবসর উৎসবের গল্প পেলেই আমরা সেটা ভীষণভাবে উপভোগ করি। আর তাই সারা সপ্তাহের কষ্টটুকু ওই বিবশবহফ-এই পুষিয়ে নেই। তার সাথে যদি হয় মুসলিম ধর্মীয় কোনো উৎসব তাহলে তো কথাই নেই। আমরা সেটা খুব সুন্দরভাবে পালন করার চেষ্টা করি। এই রোজায় সপ্তাহে অন্তত এক দিন কোনো না-কোনো বাসায় ইফতার পার্টি হচ্ছে। আমরা আশপাশের সবাই কেউ বিরিয়ানি, কেউ ছোলাবুট ভাজি, কেউ পিয়াজু, কেউ বা বেগুনি-চপ অথবা শরবত এক শ’ দেড় শ’ পিস বানিয়ে পাঠিয়ে দেই তারপর সবাই মিলে খেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই। তা ছাড়া, সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আমরা স্পেশালভাবে যে, কারো বাসায় ছোটদের জন্য একটি ইসলামি আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করি। তাতে বড়রাও থাকে। তবে এর উদ্দেশ্য ছোটদের ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা। কারণ, যাদের ছেলে-বেলা ও জন্ম পাশ্চাত্যের দেশে তারা যাতে ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে বড় হতে পারে। অন্তত আর যা-ই হোক মুসলিম ঘরের সন্তান হিসেবে তার কৃষ্টি-কালচার ধর্মীয় প্রজ্ঞা-জ্ঞান তাকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। অস্ট্রেলিয়ায় রোজার সময়টা খুব কম অর্থাৎ ১০-১১ ঘণ্টা, যেটা আমেরিকা বা কানাডায় ১৭ ঘণ্টা। সুতরাং, আমি দিনের সাথে দৌড়ে পারি না। বাচ্চাদের স্কুল, রান্না-বান্না, হাট-বাজার, ইফতারি, তারাবি নামাজ সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠি। প্রতিদিন যেন কম্পিউটারের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হয়।
ঈদের প্রসঙ্গ আসতেই মিশু বললেন, আমাদের ঈদ শুরু হয় চাঁদ দেখার পর সন্ধ্যা থেকে। সন্ধ্যায় সবাই মিলে বছরের শেষ ইফতারি করার পর শুরু হয় মেহেদি সন্ধ্যা, মেয়েরা একজন আর একজনের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেয় আর বিভিন্ন বাংলা চ্যানেলগুলোতে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গান বাজিয়ে শুনতে থাকি আর মেহেদি লাগাই। বাচ্চারাও তালে তালে নাচতে থাকে, হইচই লাফালাফিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মধ্য রাত পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। পরে যার যার ঘরে ফিরে যাওয়া। শুরু হয় ঈদের রান্না বান্না। ঈদের দিন ভোরবেলা ছেলে-মেয়ে সবাই নামাজ পড়তে যায়, আমরা কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আগের থেকেই ব্যবস্থা করে সেখানে গিয়ে নামাজ আদায় করি। গত বছর মেলবোর্নে অবস্থিত দি অলিভ ই-দেবের (রেস্টুরেন্টে) খোলা জায়গায় বিশাল আয়োজন করে আমরা সবাই ঈদের নামাজ পড়েছিলাম। নামাজ শেষে যার যার বাসায় ফিরে গিয়ে এক এক বাসায় বেড়াতে যাই।
কার বাসায় কখন যাওয়া হবে তা আগের থেকে ফিক্সড করে রাখা হয়, যাতে ঈদের দিন সবাই সবার বাসায় বেড়াতে পারে। তবে কারো বাসায়-ই খুব বেশি সময় কাটানো হয় না। তাহলে অনেক বাসায় বেড়ানো যায় না। আবার কেউ কেউ আমার বাসায়ও একটা টাইমে আসে। হয় রাতে, না হয় বিকেলে। আমিও সেইভাবেই সব ব্যবস্থা করে রাখি। গত বছর ঈদে খুব মজার একটা ব্যাপার ঘটল। আমরা অর্ডার করে উঐখ কুরিয়ার সার্ভিস দিয়ে বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজ ‘অরণ্য’ থেকে ২০-২২টা শাড়ি ও পাঞ্জাবি আনালাম এবং ঈদে আমরা একই পোশাকে ঈদের নামাজও পড়লাম বেড়ালাম সবাই মিলে ছবি তুললাম।
দেশী-বিদেশী সবাই অবাক হয়ে আমাদের দেখছিল। মেলবোর্নে আমাদের ঈদ এক দিনে কিন্তু শেষ হয়ে যায় না, মাসখানেক সময় ধরে চলে ঈদের আনন্দ। ঈদের দিন সবার বাসায় দাওয়াত খাওয়া বা খাওয়ানো তো আর সম্ভব না। তাই দূর-দূরান্তের অন্য শহর থেকেই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনে মিলে কোনো একটা বড় রেস্টুরেন্ট বা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয় ঈদ পুনর্মিলনী প্রোগ্রাম। সেখানে ভাড়া করে শিল্পীদের আনা হয় অথবা নিজেদের মধ্যে যারা ভালো গান-বাজনা করেন তাদের নিয়ে চলে গানের জলসা। এভাবেই শেষ হয়ে যায় আমাদের ঈদ উৎসব।


আরো সংবাদ



premium cement