২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বামী-সন্তানের সাথে রাখি ওবায়েদ

-

বছর ঘুরে আবারো এলো খুশির ঈদ। ৩০ দিন রোজার শেষে ঈদ প্রতিটি ধর্মপ্রাণ নর-নারীর জীবনে মহা আনন্দ বয়ে আনে। তাই ৩০ দিন রোজা রাখতেও যেন অনেক আনন্দ। আর খুশির বার্তা আসবে বলে অপেক্ষার প্রহর গুনি সেটা হচ্ছে ঈদ।
আমি আজ ১৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। আমার শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা এদেশে থাকছে আজ প্রায় ৩৫-৩৬ বছর ধরে। ২০০২ সালে মুসলেহউদ্দিনে (উজ্জল) সাথে আমার বিয়ে হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই আমারও স্থায়ী ঠিকানা এই যুক্তরাষ্ট্র হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম বাবা-মা, ভাই, বোন আত্মীয়-পরিজনকে রেখে এই দেশে থাকতে খুব মন খারাপ হতো। বিশেষ করে ঈদের সময়গুলোতে মনে হতো ছোট বেলার ঈদের কথা। ছোটবেলার খেলা ও সহপাঠীদের ভীষণ মিস করতাম। মায়ের হাতের ফিরনি, পায়েস ও বিরিয়ানি খাওয়ার কথা মনে হলে আত্মাটা যেন শুকিয়ে আসত। সময় গড়িয়ে আমি এখন দুই ছেলে মাহি ও মাহিনের মা। ছোটবেলার সব কিছু ভুলে নতুন করে জীবনকে গড়তে শিখেছি ভিন্ন দেশের ভিন্ন কালচারের মানুষের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমনি করে ধীরে ধীরে আরো আত্মীয়বন্ধুত্ব হলো অন্য বাঙালিদের সাথে। আমরা তখন নিজেরা তৈরি করলাম বাঙালি কমিউনিটি; যেখানে সবাই মিলেমিশে আনন্দ সুখ ভাগ করে নেই। এখানে সবাই ভীষণ ব্যস্ত, সংসার ও জীবনযাপন নিয়ে। এতটুকু সময় নেই কারো। তাই বছরের এই ৩০ দিন রোজা ও ঈদের দিন খুব সুন্দর ও আনন্দে ভরে তুলতে কোনো কার্পণ্য করি না। রোজা এলেই আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সারাদিন রোজা রাখা পর মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাই ইফতারি করার পর। তারাবি পড়ি। আমার স্বামী রেগুলার মাগরিব ও তারাবি পড়েন মসজিদে। আমি সাধারণত তারাবি নামাজ মসজিদে পড়ার চেষ্টা করি। তা না হলে বাসায় তারাবি নামাজ আদায় করি।
আমি আমেরিকার, ফ্লোরিডা শহরের জ্যাকসনভিল এলাকায় বাস করি। খুব সুন্দর আবহাওয়াটা ৯০ শতাংশ বাংলাদেশের মতো। সবুজ গাছপালা। এখানে অনেক বাঙালি মুসলিম পরিবার আছে। আমরা একে অন্যের সাথে আনন্দ উৎসবগুলো পালন করি। তাই এখন আর এতটা খারাপ লাগে না। আমরা বাংলাদেশী মুসলিমরা ছাড়াও পাকিস্তানি আফ্রিকান, আফগানিস্তান, মিডলইস্টের বেশ কিছু মুসলিম পরিবার এখানে বসবাস করে। তাই রোজার সময় মসজিদে ইফতারি দেয়া ও সবাই মিলে ইফতারি খাওয়ার একটা উৎসবের মতো আয়োজন প্রায় প্রতিদিনই হয়। কারণ, মুসলিমরা মনে করে রোজাদারকে ইফতারি খাওয়ানো পুণ্যের কাজ।
তাই প্রতিদিনই মসজিদে কেউ-না-কেউ ইফতারি পাঠায়।
আমাদের ঈদের আনন্দ শুরু হয় ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার পর থেকে। অর্থাৎ ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে আশপাশের বাঙালি মুসলিম শিশু কিশোর ও ভাবী-আপারা সবাই এক সাথে জড়ো হয়ে মেহেদি সন্ধ্যা-চাঁদ রাত পালন করি। হাতে মেহেদি লাগানোর মাধ্যমে। যে ভালো মেহেদি দিতে পারে তাকে স্পেশাল ওনার করে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারপর মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মেহেদি দেয়া। শিশুরা বন্ধুদের নিয়ে খেলা করে। অন্য দিকে ঘরের গৃহিণীরা মিষ্টি, পায়েস ও গোশত রান্নার আয়োজন করতে থাকে। পরদিন ভোরবেলা গোসল করে চলে যায় ঈদগাহে অথবা মসজিদে যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে সব বাঙালিরা ঈদের নামাজ আদায় করে একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে। আমরা মেয়েরাও জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করি। এই ব্যাপারটা বাংলাদেশে থাকতে আমরা কখনো সুযোগ পাইনি, খুবই ভালো লাগে। আমেরিকার ছয়টি শহরে আমার ননদ-ননাস, ভাসুর, শাশুড়ি থাকেন। ঈদের দিন সবার সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সেলফোনের মাধ্যমে। ইচ্ছে থাকলেও গিয়ে কুশলবিনিময় করা সম্ভব হয় না। একেক জনের বাসা যেতে যেতেই ঈদ শেষ হয়ে যাবে দূরত্বের কারণে। তাই একই এলাকার প্রতিবেশীদের সাথেই সব আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement