২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইমিগ্রেশন আইন সহজ করছে ব্রিটেন : বাংলাদেশীরাও আবেদন করতে পারবেন

-

ছয় মাসের ব্যবধানে আবারো ইমিগ্রেশন আইনে ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দিলো ব্রিটেন সরকার। এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা ব্রিটেনে শিক্ষা শেষে কাজ করে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন সরকার ঘোষণা করে পড়াশুনা শেষে সেদেশে দুই বছর কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর ওয়ার্ক পারমিট ( কর্মী) ভিসার ক্ষেত্রে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড বেতন দেয়ার যে শর্ত রয়েছে, সেটি এ মাসে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন ভিসা চালুর পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস )। ২০২০ সালে যারা ব্রিটেনে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে যাবেন, নতুন অভিবাসন নিয়মের অধীনে তারা ‘পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট’ (পিএসডব্লিউ) সুবিধা পাবেন। তবে নতুন অভিবাসন নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলে, শুধুমাত্র এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করা বিদেশি শিক্ষার্থীরাই এই সুযোগ পাবেন।

অভিবাসন নিয়ম বদলের ঘোষণা দিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘এই পরিবর্তনের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন এবং যুক্তরাজ্যে নিজেদের কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন।’

ব্রিটেনে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনের পর চাকরির সুযোগকে ‘পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ’ (পিএসডব্লিউ) বলা হয়। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা, জীবনযাপন কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এতদিন সেখানে পড়াশোনা শেষে অবস্থান করা কঠিন ছিল। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি ও পরে দুই বছর কাজ করলে সেখানে পড়ালেখার খরচের অনেকটাই সহনীয় হয়।

ব্রিটেনে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৩২ লাখ টাকা) বেতন দেওয়ার যে শর্ত রয়েছে, সেটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বরিস জনসন বলেন, ব্রেক্সিট ( ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ) পরবর্তী সময়ের জন্য সরকার যে অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সেখানে আয়ের ওই শর্ত তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গত এক দশক ধরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর অভিবাসন নীতি থেকে অনেকখানি সরে এল। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা, প্রকৌশল, রেস্তোরাঁ খাতসহ বিভিন্ন কাজে বিদেশি কর্মী নিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা দূর হবে।

এদিকে, ৩১ জানুয়ারি ইউরোপিয় ইউনিয়নের ( ইইউ) জোট থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ঘটবে। তবে বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে নতুন সম্পর্ক নির্ধারণের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ মাস অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান সম্পর্ক অটুট থাকবে। ৩১ ডিসেম্বর ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়ার প্রত্যাশা সরকারের। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন অভিবাসন নিয়ম চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ব্রিটেন সরকার।

নতুন অভিবাসন নিয়মের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশের জনগণ। ব্রেক্সিট পরবর্তী নতুন অভিবাসন নিয়ম হবে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের জন্য সমান। অস্ট্রেলিয়ার আদলে পয়েন্ট ভিত্তিক নিয়ম চালু করা হবে। এ নিয়মে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইংরেজি দক্ষতা, সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নেওয়া হবে। বর্তমানে ইউরোপিয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিকদের পয়েন্ট ভিত্তিক নিয়ম মেনে ব্রিটেন যেতে হয়। কিন্তু ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নাগরিকেরা চাইলেই ব্রিটেনে পাড়ি জমাতে পারেন।

গত সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘ব্রিটেন-আফ্রিকা বিনিয়োগ সম্মেলনে’ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী অভিবাসন নিয়ম পাসপোর্ট নয়, মানুষকে প্রাধান্য দেবে। পয়েন্ট ভিত্তিক ওই নিয়ম কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ‘মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সরকার নতুন অভিবাসন নিয়মের খসড়া প্রকাশ করবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য নতুন ভিসা চালুর পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছে ব্রিটেন সরকার। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) জনশক্তির ঘাটতি মেটাতে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে ‘এনএইচএস ভিসা’ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত ১৯ ডিসেম্বর জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের পার্লামেন্ট শুরুর ভাষণে ওই ভিসার কথা নিশ্চিত করেছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জনশক্তি বৃদ্ধি ও তাদের সহায়তায় পদক্ষেপ নিতে হবে আর নতুন ভিসা যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের দ্রুত যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে ’।

ব্রিটিশ সরকারের সংশ্লিষ্ট নথি অনুযায়ী ‘এনএইচ পিওপিল প্লান’ এর আওতায় যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের এনএইচএস তথা হাসপাতাল ও স্বাস্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হবে। আর যারা স্বীকৃত মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে তাদের ‘ফার্স্ট ট্র্যাক’ ভিসা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তাদের ফিসা ফি কমবে আর ব্রিটেন যাওয়ার বিস্তারিত সহায়তা দেওয়া হবে।

জনসনের সরকারের কর্মসূচি নির্ধারক ভাষণে ১৯ ডিসেম্বর রানী এলিজাবেথ বলেন, একটি আধুনিক, ন্যায্য, পয়েন্ট ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা সারা বিশ্ব থেকে দক্ষ কর্মীদের স্বাগত জানানোর মাধ্যমে ব্রিটেনের অর্থনীতি, জনগোষ্ঠী ও সরকারী সেবায় অবদান রাখা হবে।
রানী এলিজাবেথের ভাষণে সরকারের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নও রয়েছে। ভাষণে বলা হয়, মন্ত্রীরা ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করবে। এছাড়া রানীর ভাষণে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট দফতর বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement