‘শিশু’ ট্রাম্পকে নিয়ে যেভাবে খেলা চলছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আত্মজীবনী লিখেছেন মাইকেল ডি’অ্যান্টোনিও। ২০১৪ সালে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন, প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মেজাজ যেমন ছিল, এখনো তেমন আছে। ‘মেজাজে তেমন পরিবর্তন আসেনি,’ অ্যান্টোনিওকে বলেছিলেন ট্রাম্প।
এবার গত গ্রীষ্মের এক ঘটনা। গলফ খেলা ট্রাম্পের খুব প্রিয়। সেবার অস্কারজয়ী মুভি ‘গ্রিন বুক’-এর প্রযোজক টেড ভার্চু ও তার ছেলের সাথে গলফ খেলছিলেন ট্রাম্প। একসময় ট্রাম্পের বল পানিতে গিয়ে পড়লে তিনি ভার্চুর ছেলের বলকে নিজের বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন! ওই ছেলের বয়স বিশের কিছু বেশি ছিল।
একবার ভাবুন তো, সামান্য গলফ খেলায় জয়ী হতে ৭২ বছর বয়সি ট্রাম্প তার চেয়ে ৫০ বছরের ছোট এক তরুণের সাথে কী-ইনা করেছেন!
এমন একজন ব্যক্তি কী করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট হলেন, তা আলোচনার সময় আজ নয়। আজ, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বিশ্বের তাবৎ জ্ঞানী-গুনি রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকরা কী বিপদে পড়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে চলবে।
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সময়ে এমন কিছু কাজ তিনি করেছেন, যা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আজকের বিশ্বনেতা ও নাগরিকেরা ঘূণাক্ষরেও চিন্তা করেননি। যেমন প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুসালেমে নিয়ে গেছেন ইত্যাদি।
সেই ট্রাম্প এবার ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন। অনেক আলোচনার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ছয় দেশের সাথে চুক্তি সই করেছিল ইরান। ফলে দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করে রেখেছিল।
কিন্তু ‘শিশু’ মেজাজের ট্রাম্পের একদিন কী মনে হলো, তিনি পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলেন। এক্ষেত্রে তার মেয়ে-জামাই ইসরাইল বিষয়ক দূত জারেড কুশনারের হয়তো কিছু ভূমিকা থাকতে পারে। ইসরাইলের সাথে ইরানের সম্পর্ক যেহেতু খারাপ, তাই ট্রাম্পের চোখে ইরানও খারাপ। ফলে ইরান চুক্তি থেকে সরে আসলে কূটনীতিকভাবে কী প্রভাব পড়তে পারে, সেসব না ভেবেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন তিনি। সেই সাথে ইরানের উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকেন।
ফলে চুক্তির কারণে একসময় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যখন অতীত হয়ে যাচ্ছিল, তখনই আবার তা ফিরিয়ে আনলেন ট্রাম্প।
এই অবস্থায় ইরান বসে থাকবে কেন? তারা বলে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইরান চুক্তির অন্যপক্ষ, বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, যদি চুক্তি রক্ষায় কাজ না করে তাহলে ইরানও চুক্তি লঙ্ঘন করা শুরু করবে।
ফলে ওই তিন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিকরা এখন চুক্তি রক্ষায় দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
ইরান চুক্তির কারণে একসময় বিশ্ব রাজনীতি ও গণমাধ্যমের আলো থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুটি দূরে সরে গেলেও ট্রাম্পের কারণে আবার তা ফিরে এসেছে। শুধুমাত্র ‘শিশু’ ট্রাম্পের মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে বলে, জ্ঞানী-গুনি কূটনীতিকদের ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এখন আবার ভাবতে হচ্ছে।
২০২০ সালে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন ট্রাম্প। সেই সময় পর্যন্ত ইরান ইস্যু জিইয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। ওই নির্বাচনে যদি আবারো ট্রাম্প জিতে যান, তাহলে এই ইস্যুর মেয়াদ আরো চার বছর বাড়বে।
অর্থাৎ বিশ্ব গণমাধ্যম ও কূটনীতিকদের আরো ছয় বছর ইরান ইস্যু নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা