যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে প্রস্তুত চীন

বাণিজ্য যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত অর্থনৈতিক সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীন। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত অর্থনৈতিক উসকানির জবাব দিতে চীন প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে দেশটি। 
গত মাসে চীনের অনেকগুলো পণ্যের ওপর নতুন করে কর বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করায় বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির এই দেশ দু’টির মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরের আগে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে চীনের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ঝাং হানহুই বলেন, আমরা এ ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা এ কে ভয় পাই না। যুক্তরাষ্ট্র যা করছে তা নিশ্চিতভাবে অর্থনৈতিক সন্ত্রাস। বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, চীন সব সময়ই অবরোধ ও শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলোর বিরোধিতা করে। বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হবে না। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই বাণিজ্য যুদ্ধ ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলেও হুঁশিয়ার করেন ঝাং।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করছে। এটি আগামী জুন থেকে কার্যকর হবে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল উপাদান (রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল) রফতানি বন্ধ করে দেবে চীন। এসব পদার্থ দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ প্রযুক্তির সব কিছু তৈরি করে থাকে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, চীনকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। চীন নিজের উন্নয়ন ও স্বার্থরক্ষায় সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র যাতে পরে না বলতে পারে আমরা তাদের সাবধান করিনি। উল্লেখ্য, চীন একাই পৃথিবীর ৯৫ ভাগ রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল উৎপাদন করে। এবং যুক্তরাষ্ট্র আমদানির ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই নির্ভর করে চীনের ওপর।

রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব আরো গভীর করছে চীন : ওয়াশিংটনের সাথে উত্তেজনাকে সামনে রেখে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করতে চলেছেন শি জিনপিং। এ লক্ষ্যে রাশিয়া সফর ও সেখানে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নেবেন শি। জুনের ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এ ছাড়া সেন্ট পিটাসবার্গের বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের এক বৃহৎ সম্মেলনেও বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে তার। এ বিষয়ে ঝাং বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধে বেইজিং ও মস্কোর অবস্থান একই পাশে। চীন ও রাশিয়া নিজেদের অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করছে। এ ছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রেই দেশ দু’টির মধ্যে রয়েছে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া ও চীনকে নানান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের যা করতে হবে তা হলোÑ নিজেদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে এবং দুই দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেয়ার পরিণতি টের পাবে কানাডা’
এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেয়ার পরিণতি বুঝতে পারবে কানাডা, এমনটাই আশা করছে চীন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীনে আটক দুই কানাডীয় নাগরিককে মুক্তির আহ্বান জানান। তার জবাবেই এই বিবৃতি প্রকাশ করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বছর বিশ্ববিখ্যাত চীনা কো¤পানি হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ বিষয়ক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে গ্রেফতার করে কানাডা। এর জবাবে চীনে কানাডীয় নাগরিকদের গ্রেফতার করতে থাকে দেশটির সরকার। এর মধ্যে রয়েছেন কানাডীয় ব্যবসায়ী মাইকেল ¯পাভর এবং সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কোভরিগ।

কানাডা মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করায় চীনও কানাডীয় নাগরিকদের ছেরে দেয়নি। হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে ইরানের একটি কো¤পানির সাথে ব্যবসা করেছে তারা। পেন্স বলেছিলেন, আগামী জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রা¤প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সাথে আটক কানাডীয় নাগরিকদের বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে, এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়Ñ যা হয়েছে তার জন্য দায়ী কানাডা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এখানে কিছুই করার নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি- যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আগুনে ঘি ঢালার পরিণতি এবার বুঝতে পারবে চীন।

সূত্র : রয়টার্স