২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প - সংগৃহীত

অতীতের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে তার সাফল্য অনেক বেশি। যদিও ক্ষমতায় যাওয়ার আগে দেয়া প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই তিনি এখনও পূরণ করতে পারেননি। একের পর এক খবরের জন্ম দিয়েছেন, দিচ্ছেন। আমেরিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট এমন নানামুখী আলোচনায় আসতে পারেননি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে তিনি সর্বাধিক আলোচিত প্রেসিডেন্ট। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বলে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন বলছেন, আমেরিকা এর মধ্যেই গ্রেট হয়ে গিয়েছে। পুনর্নির্বাচনের জন্য তার স্লোগান ঠিক করাই আছে। ‘কিপ আমেরিকা গ্রেট’। তবে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমেরিকা এখন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বেশি। আর কাজটা যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরেই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে, তা আমেরিকার সাধারণ মানুষও মনে করছেন।

অধিকাংশ আমেরিকান এখন তার কর্মকাণ্ডে হাঁপিয়ে উঠেছেন। যেসব গোঁড়া সমর্থকের উপর ভর করে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা অবশ্য হাল ছাড়েননি। এমনই দাবি মার্কিন রাজনীতির বিশ্লেষকদের।

ক্ষমতায় আসার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ বাড়াবেন। তার এই একমাত্র প্রতিশ্রুতি তিনি এরই মধ্যে রক্ষা করতে পেরেছেন। দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। তার অন্য প্রতিশ্রুতিগুলোও ঝুলে রয়েছে এখনো। এক কথায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জামানার দু’বছর ‘মিশন একমপ্লিশ’ বলা না গেলেও ‘মিশন ফরগটেন’ও বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআর।

সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে দেয়া বড় প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করতে পারেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধে হম্বিতম্বি করলেও, এখনো তা বন্ধ হয়নি। ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। ভীতি সঞ্চার করতে পেরেছেন। দেওয়াল নির্মাণ আদৌ করতে পারবেন কি না, এ নিয়ে নিশ্চিত নন তার সমর্থকরাও।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। নাফটা চুক্তিসহ চীনাদের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ এখনো কোনো সাফল্যের মুখ দেখেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আয়কর কাটছাঁট আইনের ফলে আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি বাড়বে বলে বলা হয়েছিল।

যদিও মার্কিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের আয়কর কাটছাঁট রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ঘাটতি বাড়াবে। তার প্রণীত ট্যাক্স কাটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্তরা লাভবান হচ্ছে না বলে বলছেন বিশ্লেষকরা। জ্বালানি খাতে পেট্রলিয়ামের বিকল্প হিসেবে কয়লা জ্বালানি বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গৃহীত নীতির জের ধরে আমেরিকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশ। জ্বালানি ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। বারাক ওবামার সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা বাতিলের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে এখনো বিষোদ্গার করলেও, বাতিল করে নতুন কোনো স্বাস্থ্যনীতি তিনি আনতে পারেননি। দেশের শিল্প, কারখানা ও পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা ট্রাম্প বদলে দিতে চেয়েছিলেন। আদালতে এসব আটকে গেছে। রাষ্ট্রীয় আইনে যেসব বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ট্রাম্প সমর্থকরাও। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে পেরেছেন। একইসঙ্গে নানা কারণে বহির্বিশ্বে আমেরিকার ভাবমূর্তিকে বিতর্কে ফেলে দিয়েছেন।

তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি আমেরিকার স্বাধীন সংবাদপত্রকে প্রকাশ্যে ‘ফেক মিডিয়া’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। দাম্ভিকতা আর হোয়াইট হাউসের অস্থিরতায় হাঁপিয়ে উঠেছে আমেরিকার জনগণ। সন্দেহ আর বিদ্বেষ বেড়েছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সংবাদমাধ্যম এবিসি-র সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার মানুষ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত দুই বছরের শাসনকে দুর্বল বলে মনে করছেন। ৬৫ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামকে বিশ্বাসই করে না। তার ৩৪ শতাংশ গোঁড়া সমর্থক এখনো ট্রাম্পের প্রতি আস্থাশীল।


আরো সংবাদ



premium cement