২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমেরিকা কখনোই জিততে পারবে না

আমেরিকান নারী সেনারাও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। - ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকা আফগানিস্তানে যুদ্ধে কখনোই জিতবে না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ বিষয়টি বেশ স্পষ্ট করে বলতে শুরু করেছে। গত বছরের নভেম্বরের রিপোর্ট অনুসারে, তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের ৪ শতাংশ অঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে বর্তমান আফগান সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই অথবা উপস্থিতিও নেই। এ ছাড়া ৬৬ শতাংশ অঞ্চলে তালেবানদের রয়েছে সরাসরি ও কার্যকর উপস্থিতি।

বিবিসির রিপোর্টেও দেখিয়েছে, আফগানিস্তানের অর্ধেক জনগোষ্ঠী তালেবান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বাস করে অথবা সেসব অঞ্চল এমন যে, সেখানে তালেবান প্রকাশ্যে তাদের তৎপরতা চালায় ও আক্রমণ পরিচালনা করে। 

বর্তমানে ১৪ হাজার মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতারোহণের পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আরো এক হাজার সেনা পাঠানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে এক লাখ সেনা ছিল। এটা অনুমান করা কঠিন নয় যে, এক লাখ সেনার বিশাল বহর মোতায়েনের পরও যেখানে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ সামান্যই নিতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন সাত ভাগের এক ভাগ সেনা আফগানিস্তানে রেখে কিভাবে তালেবানদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে? 

আফগানিস্তানে ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা অবস্থান করছে। এ সময়ের মধ্যে ব্যয় হয়েছে এক শ’ বিলিয়ন ডলার। আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সিনিয়র সম্পাদক কৃষ্ণাব ক্যালামুরের মতে, এখন তালেবানরা আগের চেয়ে অনেক বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। গত নভেম্বরে জাতিসঙ্ঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমানে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের রেকর্ড যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। 

কলাম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের ডিন স্টিভ কোল তার ‘ইউএস অ্যাফর্টস টু কাউন্টার টেররিজম ইন সাউথ এশিয়া’ বইয়ের পর্যবেক্ষণে কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন, যা খুবই যুক্তিসঙ্গত। তার বইয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা এখনো আফগানিস্তানে কেন অবস্থান করছে, সেখানে আমেরিকার যুক্তিগ্রাহ্য কী স্বার্থ রয়েছে এবং যুদ্ধ কিভাবে শেষ হবে?’ অত্যাবশ্যক এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর এখনো মার্কিন প্রশাসন দিতে পারেনি অথবা আফগানিস্তানে মার্কিন কর্মকাণ্ড থেকে এর উত্তর পাওয়া দুষ্কর। 

গত নভেম্বরে আফগানিস্তানে মোতায়েন এক মার্কিন শীর্ষ কমান্ডার বক্তব্যে এসব প্রশ্নের উপসংহার টেনেছেন এভাবে, ‘আফগানিস্তানের দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের সমাধান তো হয়নি, এটা এখনো চলমান রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে অসমর্থ যে, তার বাহিনী প্রকৃতপক্ষে কী অর্জন করতে যাচ্ছে। কোনো কোনো পর্যবেক্ষক অবশ্য বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সাহস জুগিয়েছে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী তুলে আনার সময়সীমা ঘোষণা করে। মার্কিন বাহিনীর সাথে গত ১৬ বছর যুদ্ধ করে এ বাহিনী (তালেবান) প্রমাণ করেছে, এ বাহিনী আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সক্ষম। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, তালেবান যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

কারণ মার্কিন বাহিনী ১৬ বছর ধরে সেখানে আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করলেও তালেবান নিঃশেষ হয়ে যায়নি, এরা নিয়মিতভাবে যোদ্ধা সংগ্রহ করতে পেরেছে। 
সম্প্রতি এক আক্রমণে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে ৯৫ জনকে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে ১৫৮ জনকে। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি এবং পরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন লরেল ম্যুলার। তিনি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাস্তবভিত্তিক প্রস্থান কৌশলটি প্রণয়ন করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে আসাই মার্কিনিদের জন্য সমাধান।’ 

এ ধরনের প্রস্থানে সফলতার জন্য ম্যুলার বলেছেন, পাকিস্তানি সমর্থন অবশ্যই লাগবে। মার্কিন প্রশাসন ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা পাকিস্তানকে প্রদত্ত দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বন্ধ করে দেবে। এটা বাস্তবসম্মত হবে না বলে ম্যুলার দাবি করেছেন। কারণ, মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানের ভূমিকে তাদের রসদ সরবরাহে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। এটা খুবই সস্তায় করা য়ায়। পাকিস্তানি ভূখণ্ড ব্যবহার না করে অন্য কোনো উপায়ে আফগানিস্তানে রসদ ও অন্যান্য সরবরাহ নিয়ে গেলে প্রচুর খরচ হয়।

পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ওলসনের মতে, ‘পাকিস্তানি সহযোগিতা ছাড়া আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী হবে সাগর তীরে আটকে পড়া তিমির মতো’। অন্য দিকে চীনের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে খুব সুখকর অবস্থায় থাকবে না। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগের অধীনে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। চীন তার এ বিনিয়োগ থেকে সাফল্য উঠিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এর মানে পাকিস্তানে থাকবে চীনের কার্যকর ভূমিকা। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে কিছু করতে চাইলে চীনের ব্যাপারে অবশ্যই ভাবতে হবে। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এভাবে তার বক্তব্যের উপসংহার টেনেছেন, ‘আফগানিস্তানে যুদ্ধটা দীর্ঘস্থায়ী করে দিতে পারে, কিন্তু সেখানে জিতবে না।’

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল