২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছয় বছর বয়সেই বাংলাদেশি শিশুর হার্ভার্ডের স্বীকৃতি!

মাত্র ছয় বছর বয়সেই জটিল সব সমস্যার সমাধান করে বিশ্বব্যাপী তাক লাগিয়ে দিয়েছে সুবর্ণ। - ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ছয় বছর বয়সে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশী শিশু সুবর্ণ আইজ্যাক। স্থানীয়দের কাছে সুবর্ণ পরিচিতি পেয়েছে ‘ক্ষুদে আইনস্টাইন’ নামে। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০১৫ সালে হোয়াইট হাউসও স্বীকৃতি দিয়েছিলো এই শিশুকে।

২০১৪ সালে নিউইয়র্ক সিটি কলেজের প্রেসিডেন্ট ডক্টর লিসা কোইকো ছয় বছরের সুবর্ণকে উপাধি দেন ‘আমাদের সময়ের আইনস্টাইন’ নামে। পিএইচডি স্তরের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানের জটিল সব বিষয়ের সমাধান করতে পারদর্শী শিশু শ্রেণিতে পড়া সুবর্ণ। বিরল এই প্রতিভার জন্য ২০১৫ সালে তৎকালীল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছিল সুবর্ণ।

এবার স্বীকৃতি পেল হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গত ২ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ডক্টর ডিল গিলপিন ফাউস্টের কাছ থেকে স্বীকৃতি পত্র পায় বাংলাদেশী শিশু সুবর্ণ।

সুবর্ণ আইজ্যাকের বাবা রাশিদুল বারি স্থানীয় একটি কলেজের গণিত শিক্ষক। তিনি বলেন, এক বছর বয়স থেকেই অন্য শিশুদের চেয়ে কিছুটা আলাদা সুবর্ণ।

মাত্র তিন বছর বয়সেই নিজের মেধাকে জানান দিতে ভয়েস অব আমেরিকায় সাক্ষাতকার দেয় এই শিশুটি। মেধাকে যাচাই করতে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন অধ্যাপক জ্যমিতি, বীজগণিতসহ রসায়নের জটিল বিষয়ের পরীক্ষা নিয়েছেন সুবর্ণের। এই পরীক্ষায়ও সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশী এই শিশুটি।

 

আরো দেখুন : বিহারী ক্যাম্প থেকে মেডিকেল আঙ্গিনায়
মো: জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী), ০৯ অক্টোবর ২০১৮


নীলফামারীর সৈয়দপুরে আটকেপড়া পাকিস্তানি ক্যাম্পের খুশবু এবারে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেল। এই প্রথম বিহারী ক্যাম্পের কোন মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেল। এতে ক্যাম্পের মানুষের মাছে আনন্দ দেখা দিয়েছে। নোংরা পরিবেশে বেড়ে ওঠা বাবাহারা খুশবু মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। তারপরও তাঁর অদম্য ইচ্ছে একদিন ডাক্তার হয়ে আর্ত মানবতার সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে।

সৈয়দপুর আটকেপড়া পাকিস্তানী ক্যাম্প বাঙালিপুর ক্যাম্পের বাসিন্দা খুশবু। সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী কলেজের মেধাবী এই ছাত্রী ভর্তিযুদ্ধে মেধায় সংগ্রাম করে এবার দেশের কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে পেয়েছে পড়ার সুযোগ। খুশবুর এই মেধা যেনো জানান দিচ্ছে, মেধার সামনে কখনো বাঁধা হয়ে উঠে না কোন ভাষা কোন জাত।

কয়েক বছর আগে খুশবু তার বাবা মাহমুদ আলমকে হারিয়েছে। মা নাসিমা তেমন লেখাপড়া জানেন না। তবে মেয়ের লেখাপড়াকে এগিয়ে নিতে মা করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। খুশবুর বড় দুই ভাই নাসিম ও মাসুদ দিনমজুর করে মায়ের গোছানো সংসারে সাহায্যের পাশাপাশি ছোট বোনের লেখাপড়াকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে আসছে।

খুশবুর মা নাসিমা জানান, এখানকার পরিবেশ খুশবুর লেখাপড়ার জন্য মোটেই অনুকূলে ছিল না। তার উপর ওর বাবা মারা গেলে খুশবুর পড়ালেখা এগিয়ে নিতে যেনো ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। কিন্ত তারপরে মেয়ের অদম্য সাহস আর লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছাই এতটা পথ আসতে পেরেছে। কিন্ত মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় আছি।

অদম্য এই মেধাবী ২০১৬ সালে সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী কলেজ থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালেও পায় জিপিএ- ৫। এর আগেও ৮ম শ্রেণিতে সে বৃত্তি লাভ করে। ক্যাম্পের জরাজীর্ন পরিবেশ থেকে মেধার এমন প্রতিফলন দেখে খুশবুর লেখাপড়ায় এগিয়ে নিতে সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী কলেজ কর্তৃপক্ষ খুশবুকে সহযোগিতা। 

বেসরকারি এনজিও ওব্যাট বাংলাদেশ থেকেও খুশবুর লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। ওব্যাট বাংলাদেশ সৈয়দপুর শাখার পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর খুশবুকে স্কলারশীপ দিয়ে বিনামূল্যে কোচিং এর ব্যবস্থা করে।

কথা হয় ওব্যাট প্রধান আনোয়ার খানের সাথে, তিনি জানান এটা খুব গর্বের বিষয় আমাদের জন্য। খুশবুর মেডিক্যালে চান্স পাওয়ায় তার মেডিক্যালে ভর্তি থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ ওব্যাট বহন করবে বলে তিনি জানান।

কথা হয় অদম্য মেধাবী খুশবুর সাথেও, স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া খুশবু দৃঢ় মনোবল নিয়ে শোনান আশার কথা। খুশবু জানায়, আমার বাড়ির আশপাশের প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে লেখা পড়ার করতে খুবই বেগ পেতে হয়েছে। এমনি অনেকদিন গেছে যখন আমি অন্যের বাসায় গিয়ে পড়েছি। যখন রাত হত তখন বাড়ি ফিরে পড়তে বসতাম। অনেক সময় অন্যের বই আর নোট ধার করে পড়তে হয়েছে আমাকে। আমার লেখাপড়ায় আমার মা, ভাই, কলেজ শিক্ষক, ওব্যাট, বিটস্ কোচিং যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে বলে আজ এতদুর এগুতে পেরেছি।

সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী কলেজের অধ্যক্ষ ড. আমির আলী আজাদ মেধাবী খুশবুর ব্যাপারে জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে সে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে আসছে। দীর্ঘ বছরে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমার এই ছাত্রীকে। সে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগি। আমরা শিক্ষকরা তাকে সবদিক থেকে সহায়তার চেষ্টা করেছি, শত প্রতিকুলতার মাঝেও সে তার মেধার যুদ্ধে জয়ী হযেছে। ভবিষ্যতেও তাকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement