২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মেক্সিকো সীমান্তে সৈন্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন সৈন্যদের ফাইল ছবি - সংগৃহীত

পেন্টাগন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রায় ৮শ’ সৈন্য মোতায়েন করতে যাচ্ছে। সামরিক বাহিনী ‘জাতীয় জরুরি’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং অভিবাসন প্রত্যাশী শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে সহায়তা করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এই ঘোষণার দেয়ার পর পেন্টাগন এসব সেনা মোতায়েন করছে। বৃহস্পতিবার দুই মার্কিন কর্মকর্তা একথা জানান। খবর এএফপি’র।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি থেকে এসব সৈন্য নেয়া হবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এসব নতুন সৈন্য মোতায়েনের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার নির্দেশনা পত্র স্বাক্ষর করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সৈন্য দলে চিকিৎসক ও প্রকৌশলী থাকবে। তারা মূলত লজিস্টিক সহায়তা দেবে।

মধ্য আমেরিকা বিশেষ করে হন্ডুরাস থেকে হাজার হাজার অভিবাসী ধীর গতির কারাভানে করে মেক্সিকো অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসায় এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেবে না এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আরো পড়ুন: চলছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পথে
মধ্য আমেরিকার ক'টি দেশ থেকে শত শত মানুষের এক কাফেলা এখন মেক্সিকো অতিক্রম করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে অনেক শিশু, যাদের বাবা-মা নিজ দেশের দারিদ্র্য, অপরাধ, আর সহিংসতা থেকে শিশুদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

জাতিসঙ্ঘ বলছে, গোড়াতে এই বহরে লোক ছিল ১০০০ জন । এখন এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭,০০০ জনে। পর্যবেক্ষকরা একে 'জনস্রোত' বলে বর্ণনা করেছেন।


ফটোসাংবাদিক এনকার্নি পিনদাদো গুয়াতেমালা-মেক্সিকো সীমান্ত থেকে এদের অনুসরণ করেন। এই দলটি গত ১৩ অক্টোবর হন্ডুরাসের অপরাধ-জর্জরিত শহর সান পেদ্রো সুলা থেকে যাত্রা শুরু করে। সেখান থেকে তারা পায়ে হেঁটে গুয়াতেমালার সীমান্ত অতিক্রম করে।

তাদের শেষ লক্ষ্য আমেরিকায় যাওয়া যেখানে, তারা বলছেন, অপরাধ জগত থেকে দূরে তারা নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, তিনি এই কাফেলাকে কোনমতেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেন না। আগামী ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-মেয়াদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি এই ইস্যুটিকে রিপাবলিকান পার্টির স্বার্থে ব্যবহার করে ভোট চাইছেন।

টুইটারে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "যখনই দেখবেন কোন কাফেলা বা মানুষ অবৈধভাবে ঢুকছে বা ঢোকার চেষ্টা করছে, তখনই মনে রাখবেন যে ডেমোক্র্যাটরা দেশের অভিবাসন আইনে পরিবর্তন করতে দেয়নি।"

আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন যে "অপরাধী এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন" এই কাফেলায় যোগ দিয়েছে। যদিও তিনি এই কথার কোন ব্যাখ্যা দেননি।

এই জনবহরে যে অভিবাসীরা রয়েছেন, তাদের একজন একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। এতে লেখা ছিল "অভিবাসন কোন অপরাধ নয়।"

এরা গত সপ্তাহে পায়ে হেঁটে গুয়াতেমালা পার হন এবং মেক্সিকোর সীমান্তে গিয়ে পৌঁছান। এই এই কাফেলার বেশিরভাগ যাত্রী এসেছেন হন্ডুরাস থেকে। অনেকের ব্যাক-প্যাকে হন্ডুরাসের পতাকা লাগানো ছিল।

এরা যখন সীমান্তে বিভাজনকারী সেতুর কাছে এসে পৌঁছান তখন ওপারে অপেক্ষা করছিল মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা এবং সেনা সদস্য।

মেক্সিকোর সরকার এর আগে বলেছিল যে এই বহরে যাদের কাছে কোন পাসপোর্ট কিংবা সঠিক ভিসা নেই তাদের আটক করা হবে।

তবে দিনের শেষে তারা শুধুমাত্র ৩০০ লোকের কাগজপত্র যাচাই করতে পেরেছিল।

ছয় দিন ধরে বিরতিহীন হাঁটার পর প্রচণ্ড গরমে কোন কোন যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সীমান্তের এপারে অপেক্ষমান এই অভিবাসীদের অনেকেই পুলিসের আচরণে ক্ষেপে ওঠেন। এরপর শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, ঢিল ছোঁড়া, এবং পুলিশের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ। এই হট্টগোলের মাঝে বেশ কিছু শিশু তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সীমান্তে ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৬০০ লোককে মেক্সিকোতে ঢুকতে দেয়া হয়। বাকিরা ভিন্ন উপায়ে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেন।

কোনো কোনো অভিবাসীকে ভেলায় করে উদ্ধার করা হয়।

যারা মেক্সিকোতে ঢুকতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। তারা কাছের শহর সিউদাদ হিডালগো জড়ো হন। এসময় স্থানীয় লোকজন নাচগান করে তাদের স্বাগত জানায়। শহরে যে স্কয়ারে অভিবাসীরা রাত কাটান কিছু স্থানীয় বাসিন্দা তাদের জন্য খাবার, পানি এবং কাপড়চোপড় রেখে আসেন।


আরো সংবাদ



premium cement