১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টার্গেট রাশিয়া ও চীন : পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র 

টার্গেট রাশিয়া ও চীন : পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র  - ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়া ও চীনকে চাপে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া ১৯৮৭ সালের ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, ফের এমন অভিযোগ করে এ কথা বলেছেন তিনি।

এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধকালীন ওই মার্কিন-রুশ চুক্তিটিতে পারমাণবিক অস্ত্রবহনে সক্ষম মধ্যবর্তী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতে শুরু করলে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘লোকজনের চেতনা ফিরে না আসা পর্যন্ত’ যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেছেন, ‘চীন, রাশিয়া থেকে শুরু করে যেই এ খেলা খেলতে চায় এ হুমকি তাদের সবার জন্য, রাশিয়া ওই চুক্তির উদ্দীপনায় বিশ্বাসী নয় অথবা চুক্তিটিতেই বিশ্বাস করে না।’ 

অন্য দিকে আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন রুশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করছেন। সেখানে আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়া পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা রাষ্ট্রগুলোর জন্য ‘গুরুতর ধাক্কা’ হবে বলে বোল্টনকে সতর্ক করা হয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেছেন, আইএনএফের বিষয়ে ‘পারস্পরিক’ ক্ষোভ নিরসনে ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করতে ‘প্রস্তুত’ আছে। বোল্টনের সফর শুরুর সময়ই মস্কো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পারমাণবিক শক্তির ভারসাম্য ধরে রাখতে তারাও পদক্ষেপ নিতে পারে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, ‘এই ইস্যুতে আমেরিকান পক্ষের ব্যাখ্যা শোনা দরকার আমাদের। চুক্তিটি পরিত্যক্ত হলে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে রাশিয়া।’

তিন দশক আগে স্নায়ুযুদ্ধের শেষদিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান মিখাইল গর্ভাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান আইএনএফ চুক্তিটি করেছিলেন। ওই চুক্তিতে পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পুতিনের হুঁশিয়ারি
রয়টার্স ও বিবিসি
 
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ঐতিহাসিক অস্ত্রবিস্তার রোধচুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়ার চেষ্টা মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে এবং বিশ্বকে আরো বিপজ্জনক স্থানে পরিণত করবে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৭ সালের মাঝারি পাল্লার পরমাণু অস্ত্র (আইএনএফ) থেকে সরে গেলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। কারণ আইএনএফ বাতিলের অর্থ কী? এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে প্রকাশ্যে এ ধরনের অস্ত্র নির্মাণ শুরু করবে। আর এ ক্ষেত্রে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে রাশিয়া ও অন্য দেশও প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাশিয়ার সাথে আলোচনা করতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে মস্কো পৌঁছার সময় পেশকভ এ মন্তব্য করলেন। দুই দিনের এ সফরে বোল্টন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথেও সাক্ষাৎ করবেন। চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ক্রেমলিনের প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

চীন ও ফ্রান্সের বিরোধিতা
চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যাওয়ার মাধ্যমে ভুল করছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনাইং বলেন, আমরা এ প্রত্যাহারের বিরোধী। এ দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইনামুয়েল ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পকে বলেছেন, পরমাণু চুক্তিটি ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ বলেছেন, ১৯৮৭ সালের পরমাণু অস্ত্র চুক্তি বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের প্রচেষ্টার বিপরীত।


আরো সংবাদ



premium cement