২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছুটে আসছে ফ্লোরেন্স, আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র

ছুটে আসছে ফ্লোরেন্স, আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের দিকে ঘণ্টায় ২২৫ কিমি বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্স। ইতিমধ্যে এটিকে ক্যাটেগরি ৪ ঘূর্ণিঝড়ের তকমা দেয়া হয়েছে। যা অবস্থা তাতে খুব তাড়াতাড়ি এটিকে ক্য়াটেগরি ৫ অর্থাৎ সর্বোচ্চ ক্যাটেগরিতে মাপা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ যত সময় গড়াচ্ছে ততই শক্তিশালী হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার এই ঘূর্ণিঝড়কে 'অত্যন্ত ভয়ঙ্কর' হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। যেকোনো সময় এটিকে লেভেল ৫-এর তকমা দেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে। সোমবার অন্তত ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। দক্ষিণ ক্যারোলিনা গভর্নর হেনরি ম্য়াকমাস্টার এই নির্দেশ দিয়েছেন।

আবহাওয়া বিদেরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে পূর্ব উপকূলে ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে। এছাড়া পাশের উত্তর ক্যারোলিনার গভর্নরও উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষকে সরে আসতে বলেছেন। পর্যটন স্থলগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এবং ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। পূর্ব উপকূল এলাকা এমনিতেই অত্যধিক বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। তার ওপরে এমন মারাত্মক মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হলে গোটা অঞ্চল বিপর্যস্ত হতে পারে। সেই ভয়টাই প্রশাসনকে তাড়া করেছে।

এই মুহূর্তে বারমুডা থেকে ৫২৫ মাইল দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্স। মঙ্গলবার তা বারমুডা পেরোবে। বৃহস্পতিবার তা বাহামাস পেরোবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে বিধ্বস্ত হতে পারে এমন অঞ্চলের মানুষকে প্রশাসনের কথা শুনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২০০৫ সালে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার আছড়ে পড়ায় ১৮৩৩ জনের প্রাণ গিয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ও যেভাবে গতি বাড়াচ্ছে তাতে ফের একবার আমেরিকার সমস্যা বাড়তে চলেছে।

আরো পড়ুন :

নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর মসজিদ ও গ্যারেজ বিলীন
বোরহান উদ্দিন রব্বানী শরীয়তপুর

পদ্মার ভাঙনে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর, মসজিদ, গ্যারেজ ও পাশের রামঠাকুর সেবামন্দির পদ্মাতে বিলীন হয়ে গেছে। সীমানা প্রাচীরের পর এবার ধীরে ধীরে মূল ভবনের দিকে এগোচ্ছে পদ্মা। প্রতি মুহূর্তে একটু একটু করে গ্রাস করছে। ফাটল দেখা দিয়েছে হাসপাতালের মূল ভবনে। আতঙ্কে ওই হাসপাতালের রোগীরা অন্যত্র চলে গেছেন।

চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে হাসপাতালের মূল ভবন, আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ আরো অনেক স্থাপনা।

এ দিকে গত তিন দিনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১২টি ভবন, ঐতিহ্যবাহী মুলফৎগঞ্জ আলিয়া মাদরাসাসহ শত শত পাকা ও আধা পাকা বাড়িঘর ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ভাঙনে তিন মাসে নড়িয়া উপজেলার চার সহস্রাধিক পরিবারের বিলাসবহুল পাকা, সেমি পাকা ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ কাঁচা-পাকা একাধিক সড়ক বিলীন হয়েছে। গত রোববার সকাল থেকে উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটি গ্রাস করা শুরু করছে পদ্মা। 

১৯৬৮ সালে নড়িয়া উপজেলা সদরের চার কিলোমিটার দূরত্বে মুলফৎগঞ্জ বাজারসংলগ্ন পূর্ব পাশে ৩০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালে ওই হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আবাসিক ভবনসহ ১২টি পাকা ভবন রয়েছে। গত ৩ আগস্ট থেকে হাসপাতালের একটি আবাসিক ভবনে সীমিত পরিসরে ১০ শয্যার কার্যক্রম চালু রাখা হয়। হাসপাতালের ক্যাম্পাসে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি আবাসিক ভবনে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু রাখা হলেও হাসপাতালে প্রবেশের সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় তেমন কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের তিনতলা দু’টি ভবনে যেখানে জরুরি, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ চিকিৎসকদের একটি আবাসিক ভবন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন নদীর তীরে রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো রোগী দেখা যায়নি। হাসপাতালের সামনে দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্তরা বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান ক্ষতিগ্রস্ত ঈমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, গত কয়েক দিনে ৩০০ বছরের পুরনো মুলফৎগঞ্জ বাজারের কয়েকটি ক্লিনিক, শপিংমলসহ দুই শতাধিক দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা খুবই অসহায়। সরকারের এমপি, মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। আমরা এ এলাকাকে দুর্যোগ এলাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুনীর আহমেদ বলেন, রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হওয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালেল মূল ভবনে ফাটল ধরেছে যেকোনো সময় ওটা নদীতে ধসে পড়তে পারে। পদ্মার ভাঙনে হাসপাতালের ১২টি ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। চিকিৎসকদের একটি আবাসিক ভবন নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। হাসপাতালের ১২টি ভবনের নির্মাণব্যয় ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। যার মধ্যে একটি দ্বিতল ভবন বিক্রি করা হলো ৩৫ হাজার টাকায়। ভাঙনের আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এখন সীমিত পরিসরে জরুরি ও বহির্বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। 

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াছমিন বলেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় হাসপাতালের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement