১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জন ম্যাককেইন : দেশে নায়ক, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবাজ

পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে তরুণ ম্যাককেইন মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগদান করেন - সংগৃহীত

যুদ্ধবন্দী থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ৮১ বছর বয়সী অভিজ্ঞ মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন গত শনিবার ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেছেন। পানামা খালের ঠিক পাশেই অবস্থিত মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ম্যাককেইনের পিতামহ ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর চার তারকা ব্যাজধারী অ্যাডমিরাল এবং তার বাবাও ছিলেন দেশটির নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। জন ম্যাককেইন হয়তো নিজেও মার্কিন নৌবাহিনীর একজন অ্যাডমিরাল হতে পারতেন।

পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে তরুণ ম্যাককেইন মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং একজন নেভাল পাইলট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর কিছুকাল পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দেশের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ম্যাককেইনও ভিয়েতনামে গমন করেন। সামরিক বাহিনীর হয়ে অংশগ্রহণ করা জীবনের প্রথম যুদ্ধেই তিনি বেশ কয়েকবার মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। মার্কিন যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে দায়িত্বপালন করার সময় ১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ফরেসটালে ভুলবশত একটি মিসাইল বিস্ফোরিত হলে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং ১৩৪ জন নাবিক নিহত হন।

এর ঠিক তিন মাস পর একটি তার চালানো যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় এবং জন ম্যাককেইন উত্তর ভিয়েতনামের একটি লেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। লেকের পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও বিরোধী পক্ষ ম্যাককেইনকে লেক থেকে উদ্ধার করে বন্দী করে। তাকে ভিয়েতনামের হোয়া লো করাগারে বন্দী রাখা হয় এবং এই কারাগারটি পরবর্তীতে ‘হ্যানয় হিলটন’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী পরবর্তী পাঁচ বছরেরও বেশি সময় সেখানে বন্দী থাকার পর ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তির অধীনে মুক্তি পান। বন্দী থাকার সময় সেখানে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে জীবনের পরবর্তী দিনগুলোতে ম্যাককেইন ছিলেন যেকোনো ধরনের নির্যাতনের তীব্র বিরোধী ও সমালোচক। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার সময় সন্ত্রাসী সন্দেহে যে কাউকে অভিযুক্ত করার বিরুদ্ধে ছিলেন জন ম্যাককেইন।

কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা ম্যাককেইনের যুদ্ধবাজ পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করতে পারেনি। ১৯৮৭ সালে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার পর উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়াকে সমর্থন করেন তিনি। এমনকি পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন হামলারও তীব্র সমর্থক ছিলেন তিনি।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভাষণের সময় সিনেটে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোপভকারীদের পুলিশ দিয়ে দমন করার নির্দেশ দেয়া ছাড়াও তাদের ‘দুর্বল’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এ ছাড়া সিনেটর ম্যাককেইন ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সমর্থক ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের সমর্থক ছিলেন।

তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের পর নিজের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে জন ম্যাককেইন বলেন,‘আমি দীর্ঘ দিন ধরেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, জেরুসালেমই ইসরাইলের সত্যিকার রাজধানী।’

ফিলিস্তিনি মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর ইসরাইলের বর্বর ও নৃশংস হামলার দৃঢ় সমর্থক ছিলেন ম্যাককেইন। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলার সময়ও ইসরাইলের পাশে ছিলেন জন ম্যাককেইন। উল্লেখ্য গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো ২০১৪ সালের ইসরাইলি হামলায় দুই হাজার ২৫০ জনেরও বেশি মুসলিম নিহত হয়, যার বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক মানুষ।
স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য মার্কিন গণমাধ্যমের একাংশ ম্যাককেইনকে ‘বাউণ্ডুলে’ বা ‘ভবঘুরে’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। পাশাপাশি তিনি তার ভয়ঙ্কর মেজাজ ও তির্যক মন্তব্যের জন্যও সমালোচিত।

১৯৯৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটনের কিশোরী মেয়ে চেলসিকে ‘কুৎসিত’ বলে আখ্যায়িত করেন ম্যাককেইন। এ ছাড়াও নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির দুইজন নারী সিনেটরকে উদ্দেশ করেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের মাদার তেরেসা আশ্রম থেকে তার স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইন এক শিশু মেয়েকে দত্তক নেন। এয়ারপোর্টে সিন্ডি যখন শিশু ব্রিজিতকে কোলে নিয়ে আসছিলেন জন ম্যাককেইন বাবার ভালোবাসা, স্নেহ এবং মমতা দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেন। সিন্ডি বলেন, সেদিন তার (ম্যাককেইনের) মুখে যুদ্ধবাজ কঠোর কোনো সিনেটরের প্রতিচ্ছবি নয়, একজন বাবার ভালোবাসা ফুটে উঠেছিল। তবে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় বুশ প্রচারণা শিবির ব্রিজিতকে জন ম্যাককেইনের কৃষ্ণাঙ্গ অবৈধ সন্তান বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়ার পর প্রাইমারিতেই হারেন তিনি। পরবর্তীতে কনভেনশনে সিন্ডি ম্যাককেইন ব্রিজিতের হাত ধরে তাকে নিজেদের মেয়ে বলে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে দত্তক নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।

২০০০ সালের রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০৮ সালে সারাহ পলিনকে রানিং মেট হিসেবে নিয়ে বারাক ওবামার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে যান জন ম্যাককেইন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কংগ্রেসে দায়িত্ব পালন করা জন ম্যাককেইন ট্রাম্পের ওবামাকেয়ার বাতিল করে দেয়ার বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেন। পাশাপাশি ট্রাম্পের মুসলিম দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞারও বিরোধী ছিলেন তিনি। গণমাধ্যমের ওপর ট্রাম্পের তোপের জবাবও দিয়েছিলেন কঠোরভাবে।

২০১৭ সালেই তার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তিনি দায়িত্ব কমিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। গত ২৪ আগস্ট তার পরিবার ম্যাককেইনের শারীরিক অসুস্থতার অবনতির ঘোষণা দেয়ার এক দিন পরই মারা যান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
মুন্সীগঞ্জে ২ পক্ষের হামলা পাল্টাহামলায় আহত ৭ শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে বড়াল বন্ধ সেচ কার্যক্রম ও নৌপথে ব্যবসা সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না : নাছিম দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জি এম কাদেরের আইআরজিসিকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন দেখেন না সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান বেতাগীতে সরকারি চাল দামি প্যাকেটজাত করে বিক্রি কোপেনহেগেনের ঐতিহাসিক স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন ওমরাহ ভিসার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের হুঁশিয়ারি বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ কাশ্মিরে নৌকাডুবিতে ৪ জনের মৃত্যু উজিরপুরে মাদক মামলায় জামিনে এসে সাংবাদিকের ওপর হামলা

সকল