২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাথরুমের পাইপও সোনা দিয়ে তৈরি করেছেন বিলাসী ট্রাম্প

বাথরুমের পাইপও সোনা দিয়ে তৈরি করেছেন বিলাসী ট্রাম্প - সংগৃহীত

ট্রাম্পের এয়ারফোর্সের ওয়ানের রঙ পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। এতদিন ধরে নীল এবং সাদাই ছিল বিমানটির রঙ। এখন যুক্ত হচ্ছে লালও। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানকে নতুন রঙে দেখা যাবে। আর তা হল- লাল, সাদা, নীল। উড়োজাহাজটির পরবর্তী মডেলের রঙ করা হবে এ যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার এ তিন রঙের সমন্বয়ে।

সম্প্রতি সিবিএসে প্রচারিত হওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে থাকবে এয়ারফোর্স ওয়ান। এটাই হবে সেরা। আমি চিন্তা করছি, লাল, সাদা এবং নীল রঙই হচ্ছে এর জন্য যথার্থ।

ট্রাম্প একজন ধনকুবের। ম্যানহাটনবাসীকে বিলাসবহুল জীবনযাপন শিখিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিলাসী জীবনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ ভার্সাই প্রাসাদের আদলে গড়ে তোলা ঝকঝকে তকতকে ট্রাম্প টাওয়ার। ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ারটি পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয় ১৯৮৩ সালে। টাওয়ারটিতে শুধু থাকার ব্যবস্থা করা হয়নি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড দোকানের রিটেইল স্টোরসও রয়েছে এখানে।

হোয়াইট হাউজের আগে ৫৮ তলা ট্রাম্প টাওয়ারের সব থেকে ওপরের তিনটি তলায় স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে বাস করতেন তিনি। ঠিকানা, ম্যানহাটন ৭২১-৭২৫ অ্যাভিনিউ। ওই তিনটি তলাকে রাজপ্রাসাদের অনুকরণে সাজিয়েছেন ট্রাম্প। তার প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে সোনার ও সোনার জল করা মূর্তি ও অন্যান্য সজ্জা। সেই অ্যাপার্টমেন্টের বাথরুমের পাইপও সোনা দিয়ে তৈরি!  ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ ও হীরার টুকরো খচিত মার্বেল পাথরের দেয়াল যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে দেবে নিমিষেই। ফুলদানি থেকে শুরু করে ঝাড়বাতি কিংবা সাজসজ্জার যা কিছুই চোখে পড়বে তার প্রতিটিতেই ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সোনার পরশ। বাড়ির প্রতিটি কোণেই রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া।

ট্রাম্পের বসার ঘরের অন্দরসজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে গ্রিক রূপকথার বিভিন্ন চরিত্র আর দৃশ্যের অঙ্কন। পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবিও সাজানো হয়েছে ঘরের বিভিন্ন দেয়ালে। বসার ঘরের সেন্টার টেবিলে ঠিক মাঝখানটায় বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের ছবি রেখেছেন ট্রাম্প। হয়তো বাবার প্রতি ভালোবাসা আর সম্মাননার বহিঃপ্রকাশ এটি। অন্দরের যেসব জায়গায় কফি টেবিল ব্যবহার করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি হাইলাইট করা হয়েছে বর্ণিল সব ঝাড়বাতির আলোয়। সুদৃশ্য কারুকাজ করা বাটিতে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে নানা স্বাদের ক্যান্ডি। কেউ যদি চান তবে ক্যান্ডির স্বাদ নিতে নিতে ফ্যাশন আর বিলাসী দুনিয়ার খোঁজখবর নেবেন, তবে তার জন্য প্রতিটি কফি টেবিলে রাখা হয়েছে একটি করে ভোগ বা ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিন।

যে টেবিলে ট্রাম্প আর তার স্ত্রী মেলানিয়া ভোজ সারেন, তার আভিজাত্য বর্ণনা করার মতোই বটে! সকালের শুরুতে গোল্ড রিমড গ্লাসে চুমুক দিয়েই ব্রেকফাস্ট সারেন ট্রাম্প। সোনায় মোড়ানো ট্রেতে সাজানো থাকে চায়ের কাপ। যেহেতু দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজই ট্রাম্পকে করতে হয় খুব সময় মেনে, তাই ব্রেকফাস্ট টেবিলের ঠিক মাঝখানে একটি এন্টিক ঘড়ি রাখতে ভোলেননি।

সময় কাটানোর জন্য ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের রয়েছে আস্ত একটা বাগানবাড়ি। ১৯৮৫ সালে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে প্রাইভেট এস্টেটটি কিনেছিলেন ট্রাম্প। বাড়িটির বেশির ভাগ জায়গা ছোট সবুজ গাছপালায় পরিপূর্ণ। প্রায় ২০ একর জায়গার ওপর এই বাগানবাড়ির মধ্যেই রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরের সৈকত। বাড়িটিতে রয়েছে মোট ৫৮টি ঘর, ৩৩টি বাথরুম, ১২টি ফায়ারপ্লেস। রয়েছে স্পা, সুবিশাল সুইমিং পুল, গলফ কোর্স, একটি বিলাসবহুল অতিথি কটেজ ও টেনিস কোর্ট।

ফ্লোরিডার পাম বিচের ৮০ হাজার বর্গফুটের এ বাড়িটিতে থাকতে পছন্দ করেন ট্রাম্প। পাম সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত বাড়িটি ওপর থেকে দেখতে যতটা সুন্দর দেখায়, ভেতরেও ঠিক তেমনি সুন্দর। ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচে থাকা এই বাড়িটিকে একটি এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট ক্লাব বানিয়েছেন। এ বাড়িটি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশাল রাজপ্রাসাদ। বাড়িটিতে তিনটি বোম্ব শেল্টার রয়েছে, যেখানে বোমা হামলা হলে লুকিয়ে থাকা যায়।

নিউ ইয়র্কের বেডফোর্ডে ৩৯ হাজার বর্গফুটের একটি পাথর ও কাচের তৈরি প্রাসাদ রয়েছে ট্রাম্পের। তাতেও রয়েছে ৬০টি ঘর। ১৯৯৬ সালে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ২১৩ একর জমি ও সংযুক্ত সম্পত্তি সেভেন স্প্রিংস কিনেছিলেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিফথ এভিনিউতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভবন রয়েছে। ৬৮ তলার এ ভবনের পেন্টহাউজে তিনি বাস করেন।
ট্রাম্পের পেন্টহাউজে রয়েছে স্বর্ণ ও হীরা খচিত নানা সাজসজ্জা। এমনকি তার অ্যাপার্টমেন্টের দরজাতেও রয়েছে দারুণ সজ্জা। অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরের ফোয়ারা, সিলিংয়ে রয়েছে স্বর্ণখচিত ডিজাইন।

ট্রাম্পের কাছে রয়েছে একটি হেলিকপ্টার, যাতে ১২ জন সফর করতে পারেন। রয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বোয়িং ৭৫৭ জেট বিমান, যাতে ৪৩ জন চড়তে পারেন। বিমানটিকে শোয়ার ঘর থেকে বৈঠকখানা, সবই রয়েছে। বিমানের সিট বেল্ট আটকানোর বাকলগুলোকে ২৪ ক্যারেট সোনার জলে মুড়ানো। বিমানের ভেতর ট্রাম্পের যে বিছানা তৈরি করা আছে তার বালিশগুলোর এমব্রয়ডারিও তার পরিবারের ঐতিহ্য প্রকাশ করে।সোনায় মোড়ানো ব্যক্তিগত বিমান বোয়িং ৭৫৭ বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসী এবং ব্যয়বহুল বিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ট্রাম্পের বিমান রোলস রয়েস ইঞ্জিন দ্বারা চালিত ‘ট্রাম্প ফোর্স ওয়ান’ এর সিটবেল্টগুলো ২৪ ক্যারেট গোল্ড প্লেটেড। বিমানের সিটগুলো প্রয়োজন হলে বিছানায় রূপান্তরিত করা যায়। এর বাথরুম মার্বেল পাথরের তৈরি। শয়নকক্ষের বিছানায় ব্যবহৃত পিলোগুলো ট্রাম্পের পারিবারিক মনোগ্রাম খচিত। বিমানের রয়েছে আলাদা ভিডিও লাউঞ্জ। সেই ভিডিও লাউঞ্জে ৫৭ ইঞ্চি পর্দার টিভি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হবার পূর্বে তিনি নিজের ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বিমানে করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১১ সালে এই বোয়িং বিমানটি কেনেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই বিমানের অন্দরসজ্জায় বিলাসবহুল আধুনিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ঘণ্টায় ৫০০ মাইলের বেশি গতিতে চলা এই বিমানটি ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার কাজেও ব্যবহার করেছিলেন। এই বিমানের বাইরের আবরণে বিশাল অক্ষরে ট্রাম্পের নাম লেখা আছে। ২০১৫ সালে ট্রাম্প তার এস-৭৬ হেলিকপ্টার নতুন করে সাজান। আর এজন্য তার ব্যয় হয় সাড়ে সাত লাখ ডলার। এতে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্লেটিংও করানো হয়।

এছাড়া ট্রাম্পের গাড়ির তালিয়ার রয়েছে ১৯৫৬ সালের রোলস রয়েস সিলভার ক্লাউড, একটি ২০১৫ রোলস রয়েস ফ্যানটম, একটি মেবাখ, ইলেক্ট্রিক ব্লু ল্যাম্বার্গিনি, ফারারি, মার্সিডিজ বেঞ্জ এস ৬০০, এসএলআর ম্যাকলারেন। ম্যাকলারেনটি স্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন ট্রাম্প। 

এককালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইয়টটির মালিক ছিলেন ট্রাম্প। ১৯৯০ সালে নির্মাণ ব্যবসায় মন্দার ধাক্কা সামলাতে সেটি সৌদি এক যুবরাজকে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া তাজমহল ক্যাসিনো নামে ট্রাম্পের কাছে একটা রিসোর্টও ছিল। আটলান্টিক সিটির সেই রিসোর্ট অবশ্য বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

বাইকে চড়ার জন্য একটি কাস্টম বাইক তৈরি করেন ট্রাম্প। এটি ২৪ ক্যারাটের গোল্ড ও অন্যান্য মূল্যবান উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।

২০১১ সালে ট্রাম্প ভার্জিনিয়া রাজ্যের প্যাট্রিসিয়া ক্লুগেস শার্লোটেসভাইল এস্টেট কেনেন। এজন্য তিনি সাড়ে ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। এতে রয়েছে ২৩ হাজার বর্গফুট প্রাসাদ।

ট্রাম্পের অ্যালবেমার্লে এস্টেটে আরেকটি দারুণ বিলাসবহুল প্রাসাদ রয়েছে। এটির আয়তন প্রায় ২৬ হাজার বর্গফুট। এতে ৪৫টি কক্ষ, একটি মুভি থিয়েটার, ঘোড়াশাল, গ্রিনহাউজ ও গেস্ট কটেজ রয়েছে।

ট্রাম্প তার পুত্র এরিখের কাছে হস্তান্তর করেছেন ভার্জিনিয়ার সবচেয়ে বড় আঙ্গুর খেত।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement