পরাজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুলাই ২০১৮, ১১:৫০
ইরানের সাথে সামরিক সংঘাতে জড়াতে পরাজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সাপ্তাহিক ‘ফরেন পলিসি’ এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি দিন দিন ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। বহু সামরিক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ও বহু জঙ্গিবিমান অকেজ হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনেক রণতরী রয়েছে যেগুলো সাগরে নামালে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যাবে। এ অবস্থায় ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত হতে হবে।
ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার বিরোধী মার্কিন সেনা কমান্ডারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
চীনের মহাপরিকল্পনায় দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র
বিবিসি বাংলা, সিএনএন, বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান; ০২ জুলাই ২০১৮
যে কোন দেশের যে কোন দোকানে ঢুকে দশটি পণ্য কিনুন। চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় এসব পণ্যের অর্ধেকই হয়তো চীনে তৈরি। মেড ইন চায়নার এই সাফল্যের পেছনের কাহিনী সবার জানা। এত সস্তায় আর কেউ এত জিনিস তৈরি করতে পারে না।
কিন্তু পণ্যের মান? মেড ইন চায়নার সমস্যাটা সেখানেই। তাদের পণ্যের মান ভালো নয় বলেই বেশিরভাগ মানুষের ধারণা। চীনের আরেকটি ব্যর্থতা, তারা এখনো বিশ্ববাজারে নিজেদের ব্র্যান্ডগুলি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, যেভাবে পেরেছিল আরেক এশিয়ান জায়ান্ট জাপান।
চীনা পণ্যের আরেকটি বদনাম হচ্ছে, তারা আসলে বাজারে চালু নামী-দামী ব্রান্ডগুলোর হুবহু নকল। তাদের কোন নিজস্বতা নেই। কিন্তু চীন এখন মেড ইন চায়নার এই ভাবমূর্তি আমূল বদলে দিতে চায়।
তারা একটা মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। সেই পরিকল্পনার নাম, মেড ইন চায়না : ২০২৫। এই পরিকল্পনাটি নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে।
কী আছে এই পরিকল্পনায়?
চীনের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ম্যানুফাকচারিং খাত। সেই শক্তিকেই এখানে কাজে লাগাবে চীন। তবে এতদিন যেভাবে চলেছে সেভাবে নয়। একেবারেই ভিন্ন কৌশলে।
চীন এতদিন যেভাবে যে ধর-মার-কাট পণ্য তৈরি করে এসেছে, সেখানে একটা আমূল বিপ্লব ঘটানো হবে। পরিকল্পনাটি তিন ধাপের। ২০২৫ সাল সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মাত্র। ২০২৫ সাল নাগাদ চীন যত পণ্য তৈরি করবে; তার সবকিছুর মান তারা বাড়াতে চায়।
শিল্প-কারখানার উৎপাদনে তারা প্রয়োগ করবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এমন কিছু চীনা ব্র্যান্ড তারা তৈরি করতে চায়, যেগুলো কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাকি বিশ্ব।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে ২০৩৫ সাল নাগাদ চীনা কম্পানিগুলো বিশ্বের বাকী সব কোম্পানিকে প্রযুক্তিতে, পণ্য মানে এবং সুনামে ছাড়িয়ে যেতে চায়। এজন্যে তাদের নতুন উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে হবে।
আর ২০৪৯ সালে, আধুনিক চীন যখন তার প্রতিষ্ঠার একশো বছর উদযাপন করবে, তখন তারা ম্যানুফ্যাকচারিং এ বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হয়ে উঠতে চায়।
দশটি গুরুত্বপূর্ণ খাত:
এজন্যে চীন দশটি গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্ণিত করেছে। এর মধ্যে আছে সেমিকন্ডাকটার চিপ থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ, রোবটিক্স থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক কার, হাইস্পীড রেলওয়ে থেকে ওশেন ইঞ্জিনীয়ারিং।
এই মহাপরিকল্পনায় সরকার বিপুল সহায়তা দিচ্ছে সব সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিকে।
এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যা যা দরকার, তার সবই করছে তারা। আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি গবেষণা এবং উদ্ভাবনেও (আরএন্ডডি) সাহায্য করা হচ্ছে।
সামরিক বাহিনী এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে বলা হচ্ছে।
মেড ইন চায়না : ২০২৫ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে চীনা কম্পানি আর চীনা ব্র্যান্ড বিশ্ব বাজারে চীনা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এটাই যুক্তরাষ্ট্রকে বিরাট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
চীনের লেজার আক্রমণে দিশেহারা যুক্তরাষ্ট্র
চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে লেজার রশ্মি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে চীন লেজার ব্যবহার করা হয়েছে। খবর সিএনএন-এর।
সেনা মুখপাত্র বলেন, লেজারের আক্রমণে মার্কিন বিমান ক্ষতিগ্রস্থ হেয়েছে। আর এগুলোর উৎস চীন বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী এমন ঘটনার সন্মুখীন হয়েছে।
সর্বশেষ হামলাটি আগে পূর্ব আফ্রিকার আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে সংঘটিত ঘটনার অনুরূপ বলে মনে হয়। মার্কিন সামরিক বাহিনী যে লেজার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা মার্কিন বাহিনী কাছাকাছি অবস্থিত চীনা সামরিক ঘাটি থেকে এর উৎস বলে মনে করা হয়। সেসময় বিমানের পাইলট আহত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
চীনের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েড মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও অমূলক’ বলে অভিহিত করেছে।
গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র, প্রত্যাখ্যাত ট্রাম্প!
গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফের গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেই সংঘর্ষ বাস্তবে রূপ নিতে পারে এমনই আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আর এমনটাই মনে করে দেশটির ৩১ শতাংশ ভোটার। সম্প্রতি এক মতামত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘Are we in for a second civil war?’ অর্থাৎ আমরা কি দ্বিতীয়বার গৃহযুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়েছি এমনই লিখে সংবাদ পরিবেশন করেছে মার্কিন ওয়েব মাধ্যম www.aol.com, আবার ওয়াশিংটন পোস্টের শিরোনাম-‘A new civil war is already upon us’।
রাসমুসেন রিপোর্টস পরিচালিত মতামত জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৩১ শতাংশ মানুষ মনে করেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ ধরনের গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ১১ শতাংশ মনে করেন এ আশঙ্কা ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে।
ওই জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেট ভোটারদের শতকরা ৩৭ ভাগ মনে করেন যে দেশটির দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ৩২ শতাংশ এমনটা মনে করেন।
এছাড়া মতামত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেছেন। তারা আশঙ্কা করেন ট্রাম্পের নীতির কারণে আমেরিকায় সহিংসতা দেখা দেবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিতীয় টার্মে ৫৩ শতাংশ মার্কিনি যারা তার নীতির বিরোধী ছিলেন তারাও এমন সহিংসতার আশঙ্কা করেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় আমেরিকায় প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের গত মে মাস থেকে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর নীতি গ্রহণ করায় যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী তার প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর এমনই এক সময় এই মতামত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হলো।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতির কারণে দুই হাজারের বেশি শিশু তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢোকার দায়ে অভিযুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম গৃহযুদ্ধের সময়কাল ১৮৬১-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত। এই সংঘর্ষ হল সেদেশে সংগঠিত এক আঞ্চলিক বিরোধ। এতে প্রতিপক্ষ ছিল তৎকালীন মার্কিন ফেডারেল সরকার ও বিদ্রোহী ১১ টি প্রদেশ। দাস প্রথা বিরোধী আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা পরে দেশের ক্ষমতা দখল করে। লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় সেই গৃহযুদ্ধে।
এদিকে জাতিসঙ্ঘের অভিবাসন এজেন্সি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি কেন আইজ্যাকসকে প্রত্যাখ্যান করেছে সংস্থাটি। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির সবশেষ ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটলো। গত ৬৭ বছরে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ মেয়াদ ছাড়া ১৭২ সদস্যের এই সংস্থার নেতৃত্বে থেকেছে আমেরিকানরা।
খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থা স্যাম্যারিট্যান’স পার্স’র আমেরিকান নির্বাহী আইজ্যাকস মুসলিম বিরোধিতার দায়ে অভিযুক্ত, যা সংস্থাটির পক্ষে সমর্থনযোগ্য নয়। তিন পর্বের ভোটাভুটির পর তিনি বাদ পড়ে যান। অন্যদিকে ভোটের লড়াইয়ে সংস্থাটির বর্তমান উপ-প্রধান লরা থম্পসনকে হারিয়ে মহাপরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাবেক কমিশনার অ্যান্তোনিও ভিতোরিনো।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে যুক্ত হওয়া এই সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ১৭২ হলেও এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৪৩টি। বিশ্বের শীর্ষ অভিবাসন কর্মকর্তা বাছাইয়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা-মা ছাড়া হওয়ার মতো বিষয়গুলো নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বের বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলোকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রশাসনের আক্রমণ এবং আইওএম’র শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যক্রমকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাও আইজ্যাকসের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের পলিসি ফেলো জেরেমি কনিন্ডিক এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, আইজ্যাকস প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ট্রাম্প অর্থায়ন কমিয়ে দেন কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আইওএম’র সদস্যরা। তিনি আরো লিখেছেন, তাই বলে যুক্তরাষ্ট্র যখন বৈশ্বিক নেতৃত্ব থেকে সরে আসছে, বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় আঘাত হানছে, শরণার্থী ও অভিবাসীদের ওপর আক্রমণ করছে, তখন শুধু বেশি অর্থ দেয়ার জন্যই কি নেতৃত্ব পেতে পারে আইজ্যাকস?