২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইউরোপকে দেখে নেব, কঠিন হুমকি ট্রাম্পের

ইউরোপকে দেখে নেব, কঠিন হুমকি ট্রাম্পের - সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যদি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললে এর জন্য কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ইউরোপীয় বাণিজ্য শরীকদের ব্যাপারে আমেরিকার নীতি কেমন হবে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সব কথা বলেছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বুল্টন গত মে মাসে ইউরোপের যেসব দেশ পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে তাদেরকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ইরানের ব্যাপারে ইউরোপ কি ধরণের পদক্ষেপ নেয় তার ওপর ইউরোপের সাথে মার্কিন আচরণের বিষয়টি নির্ভর করছে।

তেহরানকে পরমাণু সমঝোতায় ধরে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে। ওই প্রস্তাব প্রকাশের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ওয়াশিংটন ততই বিচলিত হয়ে পড়েছে। আর তাই ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য এখন পাল্টা ইউরোপকে হুমকি দিচ্ছে ওয়াশিংটন যাতে ইরানে কেউ পুঁজি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।

বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকা নিজের স্বার্থের জন্য ইউরোপীয় মিত্রদেরকেও তোয়াক্কা করছে না। তবে ইউরোপীয়রাও এটা বুঝতে পেরেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেবল নিজের স্বার্থেই এসব হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ১৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির অজুহাতে ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় ইউরোপ এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে।

পরমাণু ক্ষেত্রেও একই বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপ তাদের স্বার্থে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও এ চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমেরিকার কোনো স্বার্থ অর্জিত হয়নি দাবি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৮ মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান। এমনকি ইউরোপীয়রাও যাতে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায় সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ইরানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে দেখে নেয়ার যে হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন তা এরই আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।

যাইহোক, ইউরোপ পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ইরানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তাদের মতে, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর যে চুক্তি হয়েছে তা কেবল পরমাণু ক্ষেত্রেই প্রয়োজন তা নয় একইসঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বিরাট গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাটোতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি রবার্ট হান্টার বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড সফরকে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বিশেষ বার্তা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এ সফর ইরানকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা এবং পরমাণু সমঝোতা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার সুযোগ এনে দিতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি শুধু ইউরোপ নয় বরং সারা বিশ্বের জন্য হুমকি। এর ফলে কেবল আমেরিকাই বিশ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

ইউরোপ ফের ঊনবিংশ শতকের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ঝুঁকিতে

ইউরোপের ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী ও চরম ডানপন্থী রাজনীতিকরা ফের সব বন্ধনমুক্ত সার্বভৌমত্বের যুগের স্বপ্ন দেখছেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যার চূড়ান্ত অবসান ঘটেছিল।  ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোঁয়ার্তুমি ও ইউরোপের মিত্রদের হুমকি প্রদানের খবর প্রায় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। আন্তঃআটলান্টিক জোট ভেঙে পড়তে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ইতালির ঘটনাবলি এবং অন্যান্য দেশে ইইউ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান থেকে মনে হচ্ছে ইউরোপ তার ঐক্যের শৃঙ্খল ভেঙে চুরমার করে দিতে যাচ্ছে। বস্তত মহাদেশটির দেশগুলো স্বপ্নের ঘোরে উনবিংশ শতকের ভূরাজনৈতিক পঙ্কিলতার দিকে হাঁটছে এবং সেখানকার পাকে আটকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে যে, ইউরোপীয় সম্পর্কের মূলনীতি ছিল ‘ক্ষমতাধরদের ঐকমত্য’। ক্ষমতাধর দেশগুলো হলোÑ গ্রেট ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি (এক সময় ১৮৭১ সালে দেশটি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল) এবং বলকানের ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হওয়া সত্ত্বেও ওসমানি খেলাফত।

১৯১৮ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। এ দেশটি বাদে অন্যসব শক্তিধর দেশ ফের অস্থির অবস্থার মধ্যে রয়েছে। রাশিয়া উনবিংশ শতকের ভৌগোলিক সম্প্রসারণবাদী নীতির লক্ষ্য অর্জনে বিংশ শতকের প্রচারণা কৌশল এবং একবিংশ শতকের সংকর রণকৌশল প্রয়োগ করছে। তুরস্ক ন্যাটো অংশিদারদের তোয়াক্কা না করেই স্বাধীননীতি অনুসরণ করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার প্রয়োজনীয় শর্তাবলি অবজ্ঞা করছে। ক্ষমতা ও সম্পদ নিয়োজিত করতে না পারলে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি দ্বিতীয় লিগে পরিণত।

ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন পুনরায় অধিকতর স্বায়ত্তশাসিত ও বিচ্ছিন্ন শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রেক্সিয়াটদের ‘সম্রাজ্য ২.০’ উদ্ভট কল্পনা সত্ত্বেও তার ক্ষমতা বেশ কমে গেছে। এর ফলে ইউরোপের নেতৃত্বের মূল জার্মানির হাতের মুঠোয় এসে গেছে। শরিকদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই দেশটি স্বাধীনতা ও অভিবাসী প্রশ্নে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সর্বশেষ মঞ্চে ফিরে এসেছে ফ্রান্স। ফ্রাসোঁয় মিতেরার পর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্ভবত পরিস্থিতিকে সবচেয়ে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

উনবিংশ শতকের ইউরোপের দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন জোট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চেয়ে নিজেদের লক্ষ্যার্জনে সক্রিয় থেকেছে। বিশেষ করে রাশিয়া তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। ক্রেমলিন ইউক্রেন সরকারকে বাদ দিয়েই পশ্চিমের সাথে দেশটির ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পাশ্চাত্য এতে রাজি হয়নি। প্রধান আলোচক গ্রুপ ‘নরম্যান্ডি ফরম্যাট’ উনবিংশ শতকের ভাবনায় এতে কেবল রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে ইইউকে এর বাইরে রেখেছে কারণ গ্রুপটি কেবল তার সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। আর ইইউ বলতে জার্মানি ও তার মিত্রদের বোঝাচ্ছে। তাদের বিসমার্ক স্বপ্ন রয়েছে।

ইইউর অভ্যন্তরে বড় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূমিকায় জার্মানি ইউরো সঙ্কট নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তৎসত্ত্বেও ইইউ উনবিংশ শতকের থেকে এক ভিন্ন জগৎ। ছোট ছোট দেশগুলোর অধিকার, ভোট ও কথা রয়েছে তারাও ফের তা প্রয়োগের স্বপ্ন দেখছে।

উনবিংশ শতকের ভূরাজনৈতিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন কেবল ছোট ছোট দেশগুলোকে দুর্বল করে তুলবে, যা দেশগুলোর সম্পর্কে ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করবে। ‘ক্ষমতাধরদের ঐকমত্য’ ও তাদের সাথে সংযুক্ত ছোট ছোট দেশগুলো বড় ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তির ধারক হয়, যা জোট শক্তির স্থায়ী ভারসাম্য সৃষ্টি করে। জার্মানির উইলহেম দ্বিতীয় ১৮৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অট্টো ভন বিসমার্ককে বরখাস্ত করার সময় বিসমার্কের উদ্যোগে রাশিয়ার সাথে বিশেষ চুক্তিও বাতিল করেন। ওই চুক্তিতে এর আগের ইউরোপীয় সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত ছিল। 

বর্তমানে ইউরোপে ফের অস্থিতিশীল অবস্থার উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে ভøাদিমির পুতিন ও রজব তাইয়েব এরদোগানের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে তারা উত্তম বন্ধু। এই বন্ধুত্বে তাদের স্বার্থ ভালোভাবে রক্ষিত হচ্ছে। ক্রিমিয়া দখলের সময় রাশিয়া ২০ বছর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তি উপেক্ষা করে, যাতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে জন্মগ্রহণকারী ইইউর প্রতিষ্ঠাতারা এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। ১৯১৪ সালে এই সমৃদ্ধ মহাদেশ কিভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত হয় তা দেখেছিলেন। তারা ইউরোপীয় প্রকল্পের আকারে একটি দৃঢ় ও স্থায়ী ইউরোপ গঠন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রতিষ্ঠাতাদের একজন জিন মনেট বলেছিলেন, ‘মানুষ ছাড়া কোনো কিছু করা সম্ভব নয় এবং প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো কিছুকেই স্থায়ী রূপ দেয়া যায় না।’

দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ইইউ সদস্যরা উনবিংশ শতাব্দীর অনর্থক তাস খেলাকে কাবের নিয়মকানুনের ভিত্তিতে একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ স্থায়ী আলোচনাপ্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করে। এটা হয়তো তেমন উদ্দীপনাময় ছিল না। কিন্তু তা ছিল অনেক বেশি স্থিতিশীল। এতে বেঁচে যায় বিশাল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং ইইউর অভ্যন্তরে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে বাস্তবে শূন্যে এসে দাঁড়ায়। বাস্তববাদী বিসমার্ক বিপদ বুঝেছিলেন।

এক সময় তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ভুগেছিলেন এই আতঙ্কে যে, জার্মান সাম্রাজ্য একসময় বেষ্টিত হতে পারে শত্রুদের দ্বারা। তিনি এটিকে বর্ণনা করেছেন জোটের সমস্যা হিসেবে। তিনি ইউরোপীয় কূটনীতির অস্থিরতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছি একটি জ্বলন্ত রডের মাথায়। আমরা যদি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা গভীর খাদে পড়ে যাব। 
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান


আরো সংবাদ



premium cement
‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি

সকল