১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তোপের মুখে নীতি বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অভিবাসী শিশুদের মুখে হাসি

তোপের মুখে নীতি বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অভিবাসী শিশুদের মুখে হাসি - সংগৃহীত

তীব্র সমালোচনার পর অভিবাসী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে হোয়াইট হাউস। অভিবাসী পরিবারগুলোকে একসাথে রাখার ব্যাপারে কথা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নীতি বদলানোর চাপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস।

স্থানীয় সময় বুধবার এ বিষয়ে একটি বিল পাস করতেও নির্দেশনা দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, শিগগিরই এমন কিছুতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি যা অভিবাসী পরিবারকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।  ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা পরিবারগুলোকে একসাথে রাখতে যাচ্ছি।’

রিপাবলিকানরা এখন অভিবাসন নীতি নিয়ে হৈ চৈ সামাল দিতে তড়িঘড়ি একটি খসড়া বিল আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানদেরকে বলেছেন, তিনি তাদের পাস করা যে কোনো অভিবাসন বিলে সমর্থন দেবেন। যদিও প্রেসিডেন্ট বলছেন, অবৈধ সীমান্ত পারাপার বন্ধ করাটা জরুরি।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র রাজ শাহ বলেছেন, ট্রাম্প রিপাবলিকানদেরকে বলেছেন, তিনি তাদের অভিবাসন আইন অনুমোদন করবেন। রিপাবলিকান প্রতিনিধি টম কোল বলেন, ট্রাম্প বৈঠকে এতদিনের সুর পাল্টিয়ে এটি পরিস্কার করেই বলেছেন যে, শিশুদেরকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা অবশ্যই কোনো ভালো ব্যাপার না। এটি খারাপই দেখায়।

তবে এই সিদ্ধান্তে আসতে বেশ কষ্টই হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। তিনি যে চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর এই বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার—আপনি যদি সত্যি সত্যি মানসিকভাবে দুর্বল হন তবে পুরো দেশ মানুষে ভরে যাবে। আবার আপনি কঠোর হলে আপনাকে হৃদয়হীন হতে হবে। এটা উভয়সঙ্কট।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে আসা শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার আইন প্রয়োগের কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন সবাই। নিজ দলের নেতাদের তোপের মুখেও পড়েন ট্রাম্প। এমনকি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। মেলানিয়া এই ব্যবস্থাকে অনৈতিক বলে নির্দেশ করেছেন।

এদিকে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, পর্দার আড়াল থেকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প প্রেসিডেন্টকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার আইন প্রয়োগ থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগ করেছেন।

মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা মানুষদের ধরপাকড়র করে হাজার হাজার শিশুকে পরিবার বিচ্ছিন্ন করার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান এ ধর্মগুরু বলেন, লোকরঞ্জনবাদ দিয়ে বিশ্বের অভিবাসী সমস্যার সমাধান আসতে পারে না।

মার্কিন ক্যাথলিক বিশপরা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে শিশুদেরকে তাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা নিজেদের ‘ক্যাথলিক মূল্যবোধের বিপরীত’ এবং ‘অনৈতিক’ বলে বিবৃতি দিয়েছেন।  পোপ ফ্রান্সিস এ বক্তব্যের সাথে একমত বলে জানিয়েছেন।

অভিবাসী বিরোধী অভিযানের তীব্র সামলোচনা করেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটরদের পাশাপাশি খোদ রিপাবলিকান সিনেটররাও। অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে, অভিবাসী শিশুদের আটকের ঘটনাকে বিবেকহীন বলে অভিহিত করেছে জাতিসঙ্ঘ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের সময় শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বন্দি করায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ওই শিশুদের পরিবারসহ বন্দি করা। অথবা পুরো পরিবারটিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া।

অভিবাসন প্রত্যাশী শিশুদের আটক ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখার মার্কিন নীতিকে অমানবিক ও বর্বরোচিত উল্লেখ করে দ্রুত এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছিল মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস ভিদেগারায়। 

বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশুদেরকে বিচ্ছিন্ন করার এই ঘটনাকে অমানবিক, বর্বর ও পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

বন্দি শিশুদেরকে যে মানসিক আঘাত দেয়া হচ্ছে তাতে তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।এসব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, শিশুদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলার সবচেয়ে ভালো উপায় নতুন অভিবাসন আইনে একটা বিধান রাখা। যাতে এমন ক্ষেত্রে পুরো পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘দেশের সীমান্ত সঙ্কট সমাধানে আমাদের কঠোর আইন দরকার। অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে পুরো পরিবারসহ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। অন্য দেশের মানুষের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর লাখ লাখ ডলার ব্যয় করছে কিন্তু তার বদলে যুক্তরাষ্ট্র কিছুই পাচ্ছে না। তবে, কেন আমরা তাদের দায়িত্ব নেব?’

সোমবার ডেমোক্রেট দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা মেক্সিকো সীমান্তবর্তী শিশুদের বন্দিশালা পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে অভিবাসী শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানান, অভিভাবকের কাছ থেকে শিশুদের আলাদা করায় মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। শিশুদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়ার মার্কিন নীতির নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো আশ্রয় শিবির নয় বলেও উল্লেখ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শিশুদের সাথে যা হচ্ছে, তাকে অমানবিক আচরণ বলে এতদিন মনে করেনি মার্কিন প্রশাসন। বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যম মিথ্যা খবর প্রচার করছে বলে দাবি করে আসছিল হোয়াইট হাউজ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগ নেতাকে ইসির শোকজ বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা চরফ্যাশনে স্কুল শিক্ষিকাকে কোপানো মামলার আসামি গ্রেফতার ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল!

সকল