২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুসলিম সংগঠনগুলোর তোপের মুখে ট্রাম্প

মুসলিম সংগঠনগুলোর তোপের মুখে ট্রাম্প - সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইফতারের আয়োজন করে মুসলিমদের তোপের মুখে পড়লেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এবারই প্রথম হোয়াইট হাউজে ইফতারের আয়োজন করলেন তিনি। হোয়াইট হাউজে আয়োজিত এই ইফতারের পরেই নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু ৬ জুন বুধবার আয়োজিত ওই ইফতারে উপস্থিত ছিল না বেশ কয়েকটি শীর্ষ আমেরিকান মুসলিম সংগঠন। এছাড়া হোয়াইট হাউজের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন অনেকে।

ট্রাম্পের আয়োজনে ওই ইফতারে প্রায় ৫০ জন অতিথি অংশ নেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূত। একই সাথে এই ইফতারের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজের বাইরে প্রতিবাদ করেছেন বেশ কয়েকজন আমেরিকান মুসলিম। তারা হোয়াইট হাউজের বিপরীতে অবস্থিত লাফায়েত্তে পার্কে বিকল্প ইফতারের আয়োজন করেন।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স-এর এক পরিচালক রাবর্ট ম্যাকাউ বলেন, একবছর ইফতার আয়োজন না করে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, কঠোর যাচাই প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের ওপর নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের এই ভণ্ডামি আমরা তুলে ধরতে চাই। এতো কিছু পরও আমরা বন্ধু বলে দেখাতে হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তাদের ইফতারে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ইফতার শেষে অনেক সাংবাদিক টুইটারে লিখেছেন, প্রার্থনায় নেতৃত্ব দেয়া ইমাম ছাড়া আমন্ত্রিতদের মধ্যে কোনো আমেরিকান মুসলিম ছিলেন না। এমনকি রিপাবলিকান ও ট্রাম্প সমর্থক মুসলিম গোষ্ঠীগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমেরিকান মুসলিমস ফর ট্রাম্প নামের সংগঠন জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস শুধু মুসলিম রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

ট্রাম্প অনুষ্ঠান শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ দিয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রশংসা করে। ট্রাম্প বলেন, ইফতারে পরিবার ও বন্ধুরা এক হয় শান্তি উদযাপনের জন্য। এক হয়ে কাজ করলেই কেবল আমরা সবার জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ অর্জন করতে পারবো। এই কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম সফর মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে হওয়াতে আমি গর্বিত। সেখানে আমি পঞ্চাশটিরও বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতাদের সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছি। এটা ছিল অনেক বড় বিষয়।

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইফতারে যোগদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন, ট্রাম, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন ও ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার। ইফতারে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত দিনা কাওয়ারের পাশে বসেন ট্রাম্প। অন্যান্য আরব দেশের মধ্যে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, তিউনিসিয়া ও ইরাকের রাষ্ট্রদূতেরা ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।

অথচ আমেরিকার মুসলমানদের বৃহত্তর সংগঠনও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেনি। এতে আমেরিকার মুসলমানদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক যে খারাপ, সেটাই আবার বোঝা গেল। ক্লিনটনের আমল থেকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে রমজান উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোয় বিদেশি কূটনীতিক, মন্ত্রিপরিষদের কর্মকর্তা ও মুসলিম সংগঠনের অংশগ্রহণে ইফতার পার্টি আয়োজন করার রীতি চলে আসছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতে মুসলিমদের নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এ কারণে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি দেশের মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তিনি।গত বছর ট্রাম্প এ আয়োজন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি বলেছিলেন, মুসলিমরা আমাদের ঘৃণা করে। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। তবে চলতি রমজানের শুরুতে বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বার্তায় তিনি বলেন, আমেরিকার সমাজ জীবনে ধার্মিকতায় রমজান আমাদের মুসলিমদের প্রাচুর্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


অতীতে সচরাচর দাওয়াত পাওয়া মুসলিম সংগঠনগুলো আগেই জানিয়েছিল, তারা এবার আমন্ত্রিত হননি। দেশটির সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তর মুসলিম সংগঠন ‘দ্য ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা’হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দাওয়াত পায়নি। সংগঠনটির আন্তধর্মীয় পরিচালক কলিন ক্রিস্টোফার জানান, তিনি মনে করেন, প্রাথমিকভাবে শুধু কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কলিন ক্রিস্টোফার লিখেছেন, ‘জনগণের মৌলিক চাহিদা এবং মানবাধিকারকে পাশ কাটিয়ে তাঁরা তাঁদের সময়টা ভালোই উপভোগ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

মানবাধিকার সংগঠন দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশসন জানায়, এর আগের প্রশাসনের আমলে তারা হোয়াইট হাউস, স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং পেন্টাগনের ইফতার পার্টিগুলোয় যোগদান করেছে। কিন্তু ট্রাম্প আয়োজিত ইফতার পার্টিতে তাদের কোনো প্রতিনিধিকেই দাওয়াত দেয়া হয়নি।

এর আগেও ওবামা প্রশাসনের আমলে মুসলিমরা হোয়াইট হাউসের ইফতার পার্টি বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধ এবং মুসলিম নেতাদের নজরদারিতে ওবামার ভূমিকায় মুসলিমরা ইফতার পার্টি বর্জন করেছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement