২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লন্ডনে সিনাগগে ইহুদীবিদ্বেষী ও মসজিদে ইসলামবিদ্বেষী গ্রাফিতি

লন্ডনে সিগাগগ ও মসজিদের গায়ে ধর্মবিদ্বেষী গ্রাফিতি এঁকে রাখে অজ্ঞাতনামারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

তিন দিনের ব্যবধানে রাতের আঁধারে লন্ডনের এক এলাকায় ইহুদীবিদ্বেষী এবং আরেক এলাকায় ইসলামবিদ্বেষী গ্রাফিতি এঁকেছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। এসব কাজকে হেইট ক্রাইম বা ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির আহবান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্তৃপক্ষ। একই সাথে ইহুদী ও মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ তৈরী করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজ করছে কিনা সে বিষয়েও তদন্তের আহবান জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।

জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে উত্তর লন্ডনের ইহুদীদের উপাসনালয় সিনাগগে এবং কয়েকটি দোকানে গ্রাফিতি আঁকে কে বা কারা। দক্ষিণ হ্যাম্পস্টেড ও বেলসাইজ পার্ক এলাকায় আঁকা ওই গ্রাফিতিতে ইহুদীদের পবিত্র চিহ্ন স্টার অব ডেভিড এবং ৯১১ (নাইন ইলেভেন) লেখা ছিল। পুলিশ ওই গ্রাফিতিকে বর্ণবাদী হেইট ক্রাইম হিসেবে গণ্য করে তদন্ত করছে।

পুলিশের ধারণা, ইহুদীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ওই গ্রাফিতিতে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় ইহুদীরা জড়িত। অথবা ১৯৩৮ সালের নভেম্বরের ৯ তারিখে জার্মানীতে সারা দেশে ইহুদী নিধন শুরু করেছিল ক্রিস্টালানচাট নামে একটি সংগঠন, সেটাও প্রকাশ করা হতে পারে ওই গ্রাফিতিতে। সারা বিশ্বে ইহুদীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হানুক্কাহ উদযাপনের ছয় দিন পরই ইহুদীবিদ্বেষী ওই গ্রাফিতি গোপনে আঁকা হলো। আর হানুক্কাহ উদযাপনের সময় নিউ ইয়র্কে ছুরিকাঘাতে পাঁচজন আহত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই ওই গ্রাফিতি আঁকা হয়। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

ওই ঘটনার পর পরই লন্ডন মেয়র সাদেক খান এক টুইট বার্তায় প্রচণ্ড নিন্দা প্রকাশ করে জানিয়েছে, শুধু লন্ডনই নয় কোনো স্থানেই ইহুদী বিদ্বেষী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আরো পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

যে এলাকায় ইহুদীবিদ্বেষী গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে ওই এলাকার আশপাশের সংসদ সদস্য ও কাউন্সিল নেতারা নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, হলবর্ন ও সেন্ট পেনক্রাস এলাকার এমপি কেইর স্টার্মার এবং কেমডেন কাউন্সিল লিডার জর্জিয়া গ্লাউড এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, আগে ও বর্তমানে কখনোই কেমডেনে ঘৃণার কোনো স্থান ছিল না। এখানকার পুরো কমিউনিটি ও আমরা এই এলাকার ইহুদী কমিউনিটির পাশে আছি। কাপুরুষের মতো ওই ঘটনা কখনোই আমাদের মূল্যবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে না। শান্তিপ্রিয় ও সুন্দর এই বারাতে উজ্জীবিত ও শক্তিশালী ইহুদী কমিউনিটি আমাদের গর্ব। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা দেশে ইহুদী বিদ্বেষী ও হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধের সময়। আমাদের সবাইকে হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান নিতে হবে। তারা জানান, কেমডেন কাউন্সিলের রাস্তা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রাফিতিগুলো মুছে ফেলার দায়িত্ব পালন করেছে।

‘দ্যা স্টোরি অব দ্যা জুইস’ বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ সাইমন স্কামা ইহুদীবিদ্বেষী গ্রাফিতির বিষয়ে এক মন্তব্যে বলেছেন, নিউ ইয়র্কে ছুরিকাঘাতের পর পরই গ্রাফিতি আঁকার বিষয়টি একত্রে সামনে আনলে সত্যিই বিরাট ঘটনা বলতে হবে। খুবই ধীর গতিতে বিরাট কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

এদিকে, নতুন বছরের প্রথম দিনে বুধবার দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটন এলাকায় একটি মসজিদ ও কালচারাল সেন্টারের দেয়ালে ইসলাম বিদ্বেষী স্লোাগান গ্রাফিতির মাধ্যমে এঁকেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লেমবেথ কাউন্সিলের পুলিশ এ ঘটনা জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, নর্থ ব্রিক্সটন ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের দেয়ালে কে বা কারা ইসলামবিদ্বেষী গ্রাফিতি এঁকে চলে যায়। স্থানীয়রা জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লেমবেথ কাউন্সিলের সাথে একত্রে গ্রাফিতিগুলো মুছে ফেলেন।

এঘটনার পর পরই লন্ডন মেয়র সাদিক খান এক টুইট বার্তায় ইসলামিক সেন্টারে গ্রাফিতির ঘটনায় বিরক্ত প্রকাশ করে জানায়, এটি একটি কাপুরুষের মতো ঘটনা। এই ঘটনায় জড়িতদের পূর্ণ আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় এমপি ফ্লোরেন্স ইশালমি ওই ঘটনাকে বিরক্তিকর বলে অভিহিত করে গ্রাফিতির সাথে জড়িতদের কেউ চিনে থাকলে স্থানীয় পুলিশকে জানানোর আহবান জানিয়েছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের এক মুখপাত্র মিকদাদ ভারসি মসজিদের দেয়ালে ইসলামবিদ্বেষী গ্রাফিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি একটি বর্ণবাদী ঘটনা।

এদিকে, ব্রিটেনের কয়েকজন মুসলিম কমিউনিটি নেতার ধারণা, ইহুদী ও মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ তৈরী করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ কয়েক দিনের ব্যবধানে গ্রাফিতিগুলো এঁকেছে। তাদের ধারণা কয়েকদিন আগে ব্রিটেন ফার্স্ট নামে উগ্রবাদী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য ক্ষমতাসীন টোরি পার্টিতে যোগ দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে। কারণ ব্রিটেন ফার্স্ট প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধিতা করে। ব্রিটেনে ইসলামের জাগরণ ঠেকাতে ইহুদীদের সাথে মুসলিমদের বিরোধ তৈরী করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সিনাগগ ও মসজিদে তিন দিনের ব্যবধানে গ্রাফিতি আঁকতে পারে তারাই।


আরো সংবাদ



premium cement