২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সেই শামীমার ছেলের মৃত্যু খবরে ব্রিটেনে সরকারের সমালোচনা

সেই শামীমার ছেলের মৃত্যু খবরে ব্রিটেনে সরকারের সমালোচনা - সংগৃহীত

যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শামীমা বেগমের শিশু সন্তানটি মারা যাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। জারাহ নামের শামীমার তিন সপ্তাহেরও কম বয়সী ছেলে সন্তানটি নিউমোনিয়ায় ভুগে বৃহস্পতিবার মারা যায় বলে মেডিকেল সনদের বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।

ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকা দখল করে আইএস ‘খেলাফত’ ঘোষণার পর চার বছর আগে লন্ডন থেকে পালিয়ে সিরিয়া গিয়ে আইএসে যোগ দেন ১৫ বছরের স্কুলছাত্রী শামীমা। সেখানে এক ডাচ আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন তিনি।

যুদ্ধে ইসলামিক স্টেট কোণঠাসা হয়ে পড়লে সিরিয়ার একটি আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই হয় শামীমা বেগমের। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে তাকে খুঁজে পায় ব্রিটিশ দৈনিক টাইমসের এক সাংবাদিক। সন্তানসম্ভবা শামীমা তাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অনাগত সন্তানের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে লন্ডনে পরিবারের কাছে ফিরতে চান তিনি।

ওই খবর প্রকাশের পর শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদ। এরমধ্যে শামীমার সন্তান হয়ে রোগভুগে তার মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এক প্রতিক্রিয়ায় জারাহর মৃত্যুকে ‘নির্মম ও নিষ্ঠুর’ সিদ্ধান্তের ফল হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা।

যুক্তরাজ্য ওই শিশুটিকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শামীমার পরিবারের একজন বন্ধু। যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, যে কোনো শিশুর মৃত্যুই ‘শোচনীয়’।

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ও সাবেক বিচারমন্ত্রী ফিলিপ লি এই শোচনীয় ঘটনায় ‘তাদের নৈতিক দায়িত্বের প্রতিফলন’ দেখানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শামীমার ‘ঘৃন্য দৃষ্টিভঙ্গি’ সত্ত্বেও তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া এবং তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত ‘কোনো আদর্শের কারণে নয় জনপ্রিয়তার মোহে নেওয়া হয়েছে’ বলে তিনি মনে করছেন।

যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড মিলিব্যান্ড জানিয়েছেন, আইএসের শাসন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ হাজার মানুষ, যারা ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে’, ওই শরণার্থী শিবিরে তীব্র সংকটের মুখে আছে।

সাবেক মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রধান সুপার ও শামীমাদের পরিবারের বন্ধু ডাল বাবু বিবিসি নিউজনাইটকে বলেছেন, ‘একটি দেশ হিসেবে ওই শিশুটিকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা।’

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করার পর তার পরিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, তারা শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে। পাশাপাশি শামীমার শিশুটিকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসতে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিল করার আগেই যেহেতু শামীমার ছেলের জন্ম হয়েছে তাই সে ব্রিটিশ বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।

‘একজন ব্রিটিশ নাগরিকের এ মৃত্যু পুরোপুরিই এড়ানো যেত,’ বলেছেন বাবু।

তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাহায্য করার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা করেছেন আমার ধারণা তা অতিশয় বেদনাদায়ক ছিল।’

শামীমার ছেলের মৃত্যুর জন্য যুক্তরাজ্যের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেবার এমপি ডায়ান অ্যাবোটও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বলেছেন, কাউকে দেশহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।

২০১৫ সালে স্কুলের দুই বান্ধবীসহ যুক্তরাজ্য ছেড়ে পালিয়েছিলেন শামীমা। টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আইএসে যোগ দেয়ার জন্য তার কোনো অনুশোচনা নেই। তবে আইএসের ‘খিলাফত’ শেষ হয়ে গেছে বলে অনুভব করছেন তিনি।

শামীমা জানান, আইএসযোদ্ধা ডাচ স্বামীর সাথে একটি ঘাঁটিতে বসবাস করতেন তারা। এর আগেও তাদের দুটি সন্তান হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের বৈরী পরিস্থিতিতে ওই সন্তান দুটি মারা যায়।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যে শিবিরে সন্তান নিয়ে শামীমা ছিলেন সেখানে পর্যাপ্ত খাবার, কম্বল ও তাবু ছিল না। তিন মাসে এই শিবিরে যাওয়ার পথে বা শিবিরটিতে পৌঁছানোর পরপর একশজনেরও বেশি লোক মারা যায় যাদের দুই-তৃতীয়াংশেরই বয়স পাঁচ বছরের নিচে ছিল।


আরো সংবাদ



premium cement