২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রিটেনে নতুন অভিবাসননীতি ঘোষণা : আশাবাদী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা

ব্রিটেনে নতুন অভিবাসননীতি ঘোষণা : আশাবাদী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা - ছবি : সংগৃহীত

ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশের সাথে দীর্ঘ ২৫ বছর জোটবদ্ধ ছিল ব্রিটেন। ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিটের পক্ষে দেশের বেশির ভাগ লোক ভোট দেয় ২০১৬ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের ২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন। ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনের লাভ ক্ষতি নিয়ে হিসাব করছে সকলে। আর বাংলাদেশীরা ভাবছে ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন সরকার অভিবাসন নীতিতে কী পরিবর্তন আনছে এবং এর ফলে তারা কিভাবে লাভবান হতে পারে।

ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যের জন্য নতুন এক অভিবাসন পরিকল্পনা সম্প্রতি অনুমোদন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। নতুন নিয়মের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে কম দক্ষ জনশক্তি আসার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। ব্রিটেন সরকারের এই নিয়মের ফলে বাংলাদেশীরাও লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে । আশার আলো দেখছেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীদের পরিচালিত রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। ব্রিটেনে বাংলাদেশী কারি ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) থেরেসা মে’ র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা ছাড়াও অন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে আশাবাদী।

ব্রিটিশ সরকারের ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকে নতুন ইমিগ্রেশন নীতির প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, কম দক্ষ জনশক্তি ব্রিটেনে আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো রুট থাকা উচিত নয়। আর ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, নতুন পরিকল্পনার আওতায় কৃষি, স্যোশাল কেয়ার ও রেস্টুরেন্টসহ কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে কম দক্ষ জনশক্তি আনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। হোম অফিসের একটি সূত্র জানায়, টিয়ার-২ টাইপ ভিসার ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ ও পরিধি বাড়াবার পরিকল্পনাও রয়েছে ব্রিটিশ সরকারের।]

ব্রিটেনে কারি শিল্পের দীর্ঘ দিনের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বিসিএ বিগত কয়েক বছর থেকে কারি শিল্পের প্রধানতম সমস্যা স্টাফ সঙ্কট নিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে বিসিএ‘র ধারাবাহিক কার্যক্রমে ব্রিটিশ সরকারের সাথে লবিং-এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ ষ্টাফ এনে কারি ইন্ড্রাষ্টির স্টাফ সঙ্কট মোকাবেলা করা। পয়েন্ট ভিত্তিক সিষ্টেমে ইউরোপীয় অঞ্চলের বাইরের দেশ থেকে দক্ষ সেফ আনার সুযোগ দেয়া।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটেনে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন ( বিসিএ) বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শেফসহ কারি ইন্ডাষ্ট্রিতে বাংলাদেশী ক্যাটারার্স ও ষ্টাফদের বিভিন্ন সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিষ্টার পর থেকে ধারাবাহিক কাজ করে আসছে। বিসিএ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশী কারি ইন্ড্রাষ্টির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষে সরকারের বিভিন্ন ফোরামে দাবি দাওয়া তুলে আসছে। ২০১৮ সালের ১০ জুলাই হাউস অব কমন্স এর সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে কারি শিল্পের স্টাফ সংকট ও অন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি-সংবলিত প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএ।

বিসিএ‘ র সভাপতি মোস্তফা কামাল ইয়াকুব এবং সাধারণ সম্পাদক অলি খাঁন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিসিএ‘র দীর্ঘদিনের দাবির জন্য না হলেও ব্রেক্সিটের কারণে সরকার অভিবাসননীতি শিথিল করেছে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে‘ র ঘোষণা তারই ধারাবাহিকতার ফসল।

লন্ডনে বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা-২০১৮ উদযাপিত

লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ৪র্থ বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা-২০১৮ উদযাপন করেছে। ৭ অক্টোবর রোববার পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেসন অডিটরিয়ামে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন মেলা উদযাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত হাইকমিশনার মোঃ নাজমুল কাওনাইন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধ, অবকাঠামো খাতে গৃহীত কার্যক্রম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা এবং পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা, পুস্তক প্রদর্শনী ও বিতরণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী , মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মোঃ নাজমুল কাওনাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ সম্পর্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। হাইকমিশনার বিদ্যুৎ, শিক্ষা, যোগাযোগ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে সরকারের সাফল্যসহ আর্থ-সামাজিক সকল খাতে উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।

হাইকমিশনার বলেন, এ সাফল্য ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে। সরকারের এ গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সকল শ্রেনী ও পেশার প্রবাসীদেরও সক্রিয় অবদান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। প্রবাসীদের বিভিন্ন সহযোগিতার কথা তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকারের সার্বিক উন্নয়নের সুফল সকল সেক্টরে দৃশ্যমান হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা, অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে সরকারের পদক্ষেপসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেসন করা হয়। মেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের তথ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার উন্নয়ন দর্শন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যক্রম, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা, অবকাঠামো প্রকল্প, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিয়ে সমস্যা এবং পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ে প্রকাশিত পুস্তকাদি প্রদর্শন ও বিতরণের নিমিত্তে ও মিশনের কন্স্যুলার সার্ভিস নিয়ে হাই কমিশনের দুটো স্টল স্থাপন করে সেবা অতিথিদের কাছে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement