২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে খাশোগির খুনিরা : এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান - সংগৃহীত

সৌদি লেখক ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো। এক বছর পার হয়ে গেলেও তার হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ায় সৌদি আরবের তীব্র সমালোচনা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। এক বছর পূর্তি হওয়ার প্রাক্কালে সোমবার তিনি বলেন, সৌদি আরবে রাষ্ট্রের ভেতর একটি ‘ছায়ারাষ্ট্র’ রয়েছে। এই ছায়ারাষ্ট্র খাশোগি হত্যাকারীদের মুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমনটা লিখেছেন তিনি।

এই পত্রিকার জন্যই লেখালেখি করতেন খাশোগি। তার লেখায় প্রায়ই ফুটে উঠতো সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সমালোচনা। ঠিক এক বছর আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ঢুকেন তিনি। এরপর আর দেখা যায়নি তাকে। পরবর্তীতে জানা যায়, দূতাবাসের ভেতরেই সৌদি আরবের একদল আততায়ীর হাতে খুন হন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা খাশোগি। তার লাশ আজো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, এসিড দিয়ে গলিয়ে দেয়া হয়েছে দেহের প্রত্যেকটা অংশ। অভিযোগ উঠেছিল, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরব প্রাথমিকভাবে এই হত্যার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার দাবি অস্বীকার করে। তবে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে স্বীকার করে যে, একজন সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে এই হত্যা অভিযান পরিচালনা করে। এর সাথে ক্রাউন প্রিন্সের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এই অভিযানের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ১১ জনের বিচারকার্যও শুরু হয়।

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই আসামি সৌদি গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান জেনারেল আহমদ আল আসসিরি ও ফরেনসিক প্যাথোলজিস্ট সালাহ আল-তুবাইগি মুক্তভাবে সৌদিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, আল-তুবাইগির বিরুদ্ধে খাশোগির লাশ দূতাবাসের ভেতর কেটে টুকরো টুকরো করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৌদ আল-কাহতানিকে কখনো প্রেফতারই করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কাহতানিই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের নিবন্ধে এরদোগান লিখেছেন, খাশোগিকে হত্যাকারী ১৫ সদস্যের আততায়ী দল কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে তুরস্কে ঢুকেছিল। তাদের কাছে কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকার তথ্যটিই একটি বিপজ্জনক বার্তা ছড়ায়। খাশোগির হত্যাকারীরা দায়মুক্তি নিয়ে সৌদি আরবে যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে তা হয়তো ওই পাসপোর্টের চেয়েও বিপজ্জনক।

এরদোগান লিখেছেন, এটা কোনো গোপন কথা নয় যে, সৌদি আরবের খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য অনেক দিক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। পুরো বিচারকার্যে স্বচ্ছতার দারুণ অভাব রয়েছে। শুনানিতে জনসাধারণের প্রবেশ সীমিত ছিল। তার মধ্যে খাশোগির খুনিদের মুক্তভাবে জীবনযাপনের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব প্রত্যাশা শেষ করে দিয়েছে। সৌদির ইমেজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ দিকে, সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস-এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে খাশোগি হত্যার দায় নিজের ঘাড়ে নেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। তিনি বলেন, তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এর দায় তার ওপর বর্তায়। তবে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স।


আরো সংবাদ



premium cement