২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনে ভোট দিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান

রোববার তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান - সংগৃহীত

তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। রোববার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার দিকে স্ত্রী এমিনি এরদোগানসহ ইস্তাম্বুলের ওসকাডার এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন তুমুল জনপ্রিয় এই তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

এসময় ইস্তাম্বুলের মেয়র আলি ইয়ার্লি কায়া, ওসকাডারের মেয়র হিলমি তুর্কিমান ও ক্ষমতাসীন একে পার্টির ইস্তাম্বুলের প্রধান শিন আওজাকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়ো হওয়া হাজারো সমর্থককে প্রেসিডেন্ট এরদোগান হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট এরদোগান জানান, ইস্তাম্বুলে নির্বাচনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে আঙ্কারায় যাবেন তিনি।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় জনগণকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, আজ নির্বাচনের দিন। ভোটের সারাদিন ও রাতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের দিকেও আপনারা ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত নজর রাখুন।

আরো পড়ুন : তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচন : কতটা চ্যালেঞ্জে এরদোগানের দল?

তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের সিটি মেয়র, পৌর মেয়র, সিটি কাউন্সিল সদস্যসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিভিন্ন পদে ভোট গ্রহণ চলছে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭ টা থেকে চারটা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। ৩০টি মহানগরী ও ৫১টি প্রাদেশিক শহরে মোট ভোটার সাড়ে ৫ কোটিরও বেশি।

এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট (একে) পার্টি ও প্রধানবিরোধী দল রিপাবলিক পিপলস পার্টির(সিএইচপি) মধ্যে। প্রেসেডন্ট এরদোগানের নিজ শহর ও সাবেক রাজধানী ইস্তাম্বুলে তার দল একে পার্টি থেকে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার বিনালি ইলদিরিমকে। তুরস্কের রাজনীতিতে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদটি সব সময়ই বাড়তি গুরুত্ব বহন করে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেও ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন, সেখান থেকেই তিনি প্রবেশ করেছেন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল নিজ নিজ সমমনা সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। ন্যাশনালিস্ট মুভেমেন্ট পার্টির(এমএইচপি) সাথে পিপলস অ্যালায়েন্স নামে জোট গঠন করেছে একে পার্টি।

অন্যদিকে বিরোধী দল সিএইচপি জোট গঠন করেছে ডানপন্থী আইওয়াইআই পার্টির সাথে। বিভিন্ন নগরীত উভয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দিয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, এবারের নির্বাচনে তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে প্রেসিডেন্টের দলকে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অর্থনীতিতে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত বছর দুই ধরে দেশটির মুদ্রা লিরার মান অবনতি হচ্ছে মার্কিন ডলারের বিপরীতে। এটিই তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের জন্য চ্যালেঞ্জ ডেকে আনতে পারে এবারের নির্বাচনে।

তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাহা আকোল আল জাজিরাকে বলেছেন, ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর এটির সবচেয়ে কঠিন সময় এরদোগানের দলের সামনে। তিনি বলেন, ‘দলটি সত্যিকারের অর্থনৈতিক সঙ্কটের আলোচনাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে।’

রজব তাইয়েব এরদোগান বা তার ক্ষমতায় আসার পর দলটির জনপ্রিয়তা শুধুই বেড়েছে। নানাবিধ সমস্য পাড়ি দিয়েও দলটির জনগনের কাছে প্রিয় ছিল সব সময়। যে কারণে জনগণই গণভোটে এরদোগানকে নির্বাহী প্রেসিডেন্সি দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা সরকারগুলোর সাথে বিরোধীতার কারণে ‍তুরস্কের অর্থনীতি কিছুটা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

এক সময়ের ঋণে জর্জরিত তুস্কের অর্থনীতিকে সাবলম্বী করেছিল একে পার্টি। কিন্তু গত দুই বছরে সেই উন্নয়নের গতিতে কিছুটা বাধা এসেছে আর এটিই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও অন্যান্য সকল ক্ষেত্র বিবেচনা করলে নির্বাচনে একে পার্টির জয়েল সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষ করে সামরিক ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ক সকল পদক্ষেপে জনগনের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে একে পার্টির সরকার। কুর্দিপন্থী সন্ত্রাসীদের দমনে এরদোগান সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে গত কয়েক বছরে। স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্য অনেক খাতেও এসেছে গুণগত পরিবর্তন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সরাসরি খামার থেকে সবজি এনে বাজারে বিক্রি করেছে ক্রেতাদের হাতে। এসব কারণে স্থানীয় নির্বাচনে জনগন একে পার্টির প্রতিনিধিদের ওপরই আস্থা রাখতে পারেন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।


আরো সংবাদ



premium cement