২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খাশোগি হত্যার আরো প্রমাণ আছে তুরস্কের হাতে : এরদোগান

বক্তৃতা করছেন রজব তাইয়েব এরদোগান - ছবি : এএফপি

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, জামাল খাশোগি হত্যার বিষয়ে তুরস্কের হাতে আরো তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সঠিক সময়ে এসব তথ্য প্রকাশ করা হবে।

রাজধানী আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির প্রাদেশিক সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবের প্রতি আহ্ববান জানান খাশোগি হত্যার নির্দেশদাতার নাম প্রকাশের জন্য। এই সাথে এরদোগান জানান, আগামী রোববার সৌদি আরবের প্রধান কৌশুলি ইস্তাম্বুল যাবেন এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তুর্কি প্রধান কৌশুলির সাথে বৈঠক করতে। হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের মধ্যে বৈঠকটি হবে।

এরদোগান বলেন, সৌদি আরবযে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে খাশোগির হত্যাকারী থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আর কোন ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়, ওই ১৮ জনের মধ্যেই অপরাধী রয়েছে, যদি তা না হয় তাহলে আপনাদের বলতে হবে কারা স্থানীয়(রিয়াদে) ষড়যন্ত্রকারী’।

গত ২ অক্টোবর ইস্তম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে আর বের হননি ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তিনি নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশ হলেও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হয় খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গেছেন। কিন্তু তদন্তে বের হয়ে আসে যে খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বের হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে বিভিন্নি মিডিয়ায় গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ হয় যে, খাশোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। 

তুর্কি পুলিশের তদন্তেও ক্রমশ উন্মোচিত হতে থাকে রহস্য। এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দুই সপ্তাহ পর সৌদি আরব শিকার করে যে, খাসোগি কনস্যুলেটের ভেতরে হাতাহাতির এক পর্যায়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের সেই স্বীকারোক্তি হালে পানি পায়নি। তদন্তে জানা যায়, ঘটনার দিন সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুল যাওয়া ১৫ সদস্যের একটি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায়। অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যার পর খাসোগির শরীর টুকরো টুকরে করে ব্যাগে ভরে দূতাবাস থেকে বের করা হয়। তবে সেই লাশের খোজ এখনো পাওয়া যায়নি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ওই সাংবাদিককে হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। গত মঙ্গলবার তুরস্কের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘নগ্ন সত্য’ প্রকাশ করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন এরদোগান।

এরদোগান তার ওই বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘তিন সদস্যের একটি সৌদি দল হত্যাকাণ্ডের এক দিন আগে ইস্তাম্বুল আসে। তারা ইস্তাম্বুল ও ইয়ালোভার বনাঞ্চলেও গিয়েছিলো।’ তিনি বলেন, আরো দুটি পৃথক দলে ভাগ হয়ে কনস্যুলেটে আসে হত্যাকারীরা।

এরদোগান বলেন, ‘সৌদি কনস্যুলেটের ক্যামেরাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। হার্ড ডিস্ক থেকে সব ভিডিও ও ছবি সরিয়ে দেয়া হয়। খাশোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বেড়িয়ে গেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সৌদি সরকার এই ঘটনার কথা ৪ অক্টোবর অস্বীকার করে, কনসাল জেনারেল রয়টার্সের এক সাংবাদিককে আমন্ত্রণ করে দেখানোর চেষ্টা করে যে কিছুই ঘটেনি সেখানে’।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তবে ভুললে চলবে না যে এটি হয়েছে তুরস্কের মাটিতে। ..... প্রমাণ বলছে, পরিকল্পিত কাজের ফল হিসেবেই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই দলটি কেন ইস্তাম্বুল এসেছিলো? তাদের কে নির্দেশনা দিয়েছে? কনস্যুলেট কেন এতদিন পর আমাদের তদন্ত করার অনুমতি দিয়েছে? কেন তাদের বক্তব্যের মধ্যে একেক ধরনের তথ্য ছিলো? হত্যার শিকার মানুষটির লাশ কোথায়? আমাদের সেসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানাই খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ইস্তাম্বুলেই বিচারের আওতায় আনার সুযোগ দিতে।’


আরো সংবাদ



premium cement