২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তুরস্ককে চিরতরে আইএমএফের দাসত্বমুক্ত করেছি : এরদোগান

রজব তাইয়েব এরদোগান। ছবি - এএফপি

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, তার দেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ বা এ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণ করা থেকে সরে এসেছে। আঙ্কারায় গত রোববার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সমাপনী ভাষণে এরদোগান বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন অনেক ভালো। 

তিনি বলেন, তুরস্ক ভালোর জন্যই আইএমএফ অধ্যায় বন্ধ করে দিয়েছে। যখন আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন আমরা ২৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিলাম। ২০১৩ সালে আমরা তা পরিশোধ করে দেই। আমরা যদি এ বিশাল অর্থ পরিশোধ করতে পারি, তাহলে আমরা কেন আইএমএফের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারব না? 

মূলত তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) এর আগে সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার সমালোচনা করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিনসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তাব দেয়। সিএইচপির শীর্ষ নেতা কামাল কিলিগডারওগলু গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ম্যাককিনসের উচিত প্রতি তিন মাস অন্তর তুরস্ককে কিছু পরামর্শ দেয়া। কারণ তুরস্কের বর্তমান সরকারের মধ্যে কোনো আত্মবিশ্বাস নেই। ভাষণে এরদোগান দলটির সমালোচনা করে বলেন, সিএইচপির সাবেক নেতৃবৃন্দই আইএমএফকে তুরস্কে নিয়ে আসার জন্য দায়ী। তারাই প্রথমে সংস্থাটির সাথে চুক্তি করে আইএমএফের ভূতকে এ দেশে নিয়ে আসে। 

এরদোগান সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা তুরস্কের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পথে দায়ী যেকোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইরত। তিনি বলেন, যত দিন তিনি বেঁচে আছেন, তত দিন তুরস্ককে আর আইএমএফের দাসত্বে ফিরতে দেবেন না। 

এরদোগান বলেন, তিনি তার মন্ত্রিসভাকে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে কোনো প্রকারের পরামর্শ বা উপদেশ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তার সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ওপর ভরসা রাখেন। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারী ও সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, বর্তমানে তুরস্কে অর্থনৈতিক কোনো সঙ্কট নেই।

শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনও কিছু লোকের কারসাজি মাত্র। এসব ক্ষেত্রে তুরস্ক নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যায় নিজেদের পদ্ধতি ব্যবহার করেই সমাধান করবে। আর সে জন্য যারা বাজারের নিয়ম ভঙ্গ করবে তাদের জন্য জরিমানার হুমকি দেন তিনি।

 

আরো দেখুন : এবার তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ ট্রাম্পের
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১১ আগস্ট ২০১৮

চীনের পর এবার তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে নামতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউজ ঘোষণা করেছে, তুরস্ক থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে নতুন করে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে নতুন এই শুল্ক। এর ফলে ন্যাটো মিত্র তুরস্কের সাথে নতুন করে বিরোধী জড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।

এই আইন কার্যকর হলে নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বে তুরস্কের রজব তাইয়েব এরদোগান সরকার। এমনিতেই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্র লিরার মান কমছে ক্রমশ। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জিতলেও এটি তার সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়।


যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণা আসতে পারে সেটি জানাই ছিলো। হোয়াইট হাউজ শুল্ক আরোপের আগে বিষয়টি টুইটারে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছে, তুরস্কের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নয়। দেশটি থেকে আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২০ শতাংশ ও স্টিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আইনে স্বাক্ষর করেছি।

এই টুইটের পরই গত কয়েকদিনে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রার মান কমেছে কয়েক দফা। সব মিলে চলতি বছরের শুরু থেকে তুর্কি লিরা ডলারের বিপরীতে ৩০ শতাংশ মান হারিয়েছে। ফলে এরদোগান আবারো তুর্কি নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন, স্বর্ণ ও ডলারের বদলে লিরা সংরক্ষণ করতে। শুক্রবার এরদোগান, বলেছেন, অর্থনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কৃষ্ণ সাগর পাড়ের শহর রাইজে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ডলার কখনোই আমাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। তাই আমি আবারো বলছি, আপনাদের যাদের কাছে ডলার ও স্বর্ণ মজুদ আছে, ব্যাংকে গিয়ে সেগুলোর বিনিময়ে লিরা সংগ্রহ করুন।

এরদোগান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের যেমন ডলার আছে, আমাদের আছে আল্লাহ ও আমাদের জনগন। আমরা প্রতিদিন উন্নতি করছি। গতকালকের চেয়ে আজ ভালো আছি, আগামীকাল আরো ভালো থাকবো।

যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে, তুরস্ক তার মধ্যে উপরের দিকে। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে একশো কোটি ডলারের বেশি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক শুল্ক বৃদ্ধির ঘটনাকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি বহির্ভূত বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক।


আরো সংবাদ



premium cement