২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তুরস্ককে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই : এরদোগান

তুরস্ককে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই : এরদোগান - সংগৃহীত

তুরস্কের প্রথম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে তুরস্ককে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা কার্যকরের মাধ্যমে তুরস্ক তার অগ্রযাত্রা নতুন করে শুরু করেছে।

আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট কমপ্লেক্সে দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে দেয়া বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, আমরা একটি নতুন শাসন ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছি; যেটি আমাদের ১৫০ বছর ধরে গণতন্ত্র অনুসন্ধান থেকে অনেক দূরে এবং আমাদের ৯৫ বছর বয়সী গণপ্রজাতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করব। আমাদের যারা ভোট দিয়েছেন, আমি কেবল তাদের প্রেসিডেন্ট হবো না, তুরস্কের ৮১ মিলিয়ন নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

তিনি বলেন, নতুন এই ব্যবস্থা অতীতের প্রান্তিককরণ, নিপীড়ন, এবং মানুষের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাবে।নুতন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং বৃহৎ বিনিয়োগ সহ সকল ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে তুরস্ক আরো এগিয়ে যাবে। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তুরস্ককে শক্তিশালী করতে কাজ চালিয়ে যাব।

আঙ্কারা: তুরস্কের নতুন শাসন ব্যবস্থার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন এরদোগান। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী আঙ্কারার গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পার্লামেন্টের ভারপ্রাপ্ত স্পিকার দুরমাস ইলমিজের সভাপতিত্বে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরদোগানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের প্রায় ১০ হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।

বিদেশি নেতাদের মধ্যে কাতারের আমির সহ ২১টি দেশের প্রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। দেশগুলো হচ্ছে-বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, মোলদোভা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া, কসোভো, পাকিস্তান, কিরগিজস্তান, সুদান, গিনি, জাম্বিয়া, গিনি বিসাউ, নিরক্ষীয় গিনি, সোমালিয়া, মৌরিতানিয়া, গ্যাবন, শাদ, জিবুতি, ভেনেজুয়েলা, তুর্কি প্রজাতন্ত্রের উত্তর সাইপ্রাস। এছাড়াও, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

শৈশব থেকেই বাধা মোকাবেলায় অভ্যস্ত এরদোগান

২৪ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচন না করেই আরো ১৯ মাস ক্ষমতায় থাকতে পারতেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। কিন্তু তুরস্ককে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া হাত খুলে কাজ করার সুযোগ না থাকায় নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনের ফলফল তার পক্ষেই এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতো বড় চ্যালেঞ্জ নেয়ার সাহস কিভাবে সঞ্চয় করলে তিনি?

এই নেতার অতীত জীবনের দিকে তাকেলে দেখা যায়, শৈশব থেকেই নানা বাঁধা মোকাবেলা করে অবস্থ তিনি। কোস্ট গার্ডের সদস্য বাবা যখন পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ইস্তান্বুলে আসেন, তখন এরদোগানের বয়স মাত্র ১৩ বছর। সবার পড়াশোনার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার তা বাবার বেতন দিয়ে সামলানো যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় জীবনের প্রথম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন নিজের লেখা-পড়ার খরচ জোগার করার জন্য। রাস্তায় রাস্তায় রুটি, তিল আর লেবু বিক্রি করতেন জীবিকা নির্বাহের জন্য! তার শৈশবের অবস্থা তিনি নিজেই বর্ণনা করেন এক সমাবেশে, ‘আমার সামনে তখন লেবু বিক্রি করা ছাড়া আর কোন পথ ছিল না । যা দিয়ে আমি আমার আব্বাকে সাহায্য করতাম এবং আমার প্রাথমিক শিক্ষার খরচ যোগাড় করতাম’।

জীবনযুদ্ধে থেমে না যাওয়া এই মহানায়ক মাদ্রাসার পাঠ চুকিয়ে তুরস্কের মার্মারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন । ছাত্র অবস্থায় ফুটবল খেলা ছিল তার শখ। তুরস্কের বিখ্যাত ক্লাব ফেনারবাচ থেকে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা রাজি না হওয়ায় প্রিয় খেলাকে বিদায় জানাতে হয়েছিল তখন।

কর্মজীবনে তিনি ইমাম হিসাবেও বেশ প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন। তুরস্কের পার্লামেন্ট মসজিদের পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন। এছাড়া এরদোগান পৃথিবীর একমাত্র কোরানে হাফিজ রাষ্ট্রনেতা, তার উদ্যোগে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক হিফজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তুরস্কে।

১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া এই নেতা ২০১৪ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হবার আগ পর্যন্ত এরদোগান ১১ বছর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement