২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অভিনন্দন এরদোগান, অভিনন্দন তুরস্ক

অভিনন্দন এরদোগান, অভিনন্দন তুরস্ক - সংগৃহীত

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এর মধ্যে রয়েছেন কাতারের আমির শেখ হামিম বিন হামাদ আল থানি, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান এবং বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাকের, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়াভ।

আরো একবার রজব তাইয়েব এরদোগানের ওপর আস্থা রাখলেন তুরস্কের ভোটাররা। রোববার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এরদোগান। একই দিন অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনেও অর্ধেকের বেশি আসন লাভ করেছে এরদোগানের দল জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট (একে) পার্টি।

বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, এরদোগান ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাররম ইনজে পেয়েছেন ৩১ শতাংশ ভোট। পার্লামেন্ট নির্বাচনেও এরদোগানের দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায় জোটগতভাবে পার্লামেন্টে তারা ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে জোটগতভাবে বিজয়ী হলেও পার্লামেন্টে একে পার্টির একাধিপত্যের অবসান হয়েছে। এখন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তাদের জোট সঙ্গী এমএইচপির সমর্থন প্রয়োজন হবে। আর কোনো সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রধান বিরোধী জোট সিএইচপি অথবা কুর্দি সমর্থিত দল এইচডিপির সমর্থন প্রয়োজন হবে। 

এককভাবে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে এরদোগানকে দ্বিতীয় দফায় ভোটে অবতীর্ণ হতে হতো। তখন ১৫ দিনের ব্যবধানে মুহররম এনজের সঙ্গে এককভাবে লড়াইয়ে নামতে হতো তাকে। এখন সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় তুরস্কের বিভিন্ন শহরে এরদোগানের সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করছে। রাতে তারা আলো জালিয়ে নেচে গেয়ে বিজয় উদযাপন করছে। 

এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি যুগে প্রবেশ করল তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কার্যকর হবে নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে। গত বছর এক গণভোটে তুরস্কের জনগন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অর্জনের পক্ষে রায় দেয়। এর ফলে দেশটির শাসন ক্ষমতা আরো জোরদার হবে বলে দাবি করছেন এরদোগান ও তার দল একে পার্টি। এই ক্ষমতা অর্জনের ফলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে।

দীর্ঘ শাসনামলে তুরস্ককে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার কারণেই এরদোগানকে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়েছে দেশটির জনগন-এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিড্টে নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ নূন্যতম পঞ্চাশ শতাংশ ভোট না পেলে, নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের পনের দিন পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। যদিও ইতোমধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গেছেন দেশটির তুমুল জনপ্রিয় নেতা এরদোগান। তাই দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।

ইস্তাম্বুলের ভোটার হওয়ার কারণে নির্বাচনের দিন নিজ শহর ইস্তাম্বুলেই অবস্থান করেছেন এরদোগান। এই নগরীর মেয়র হিসেবেই জাতীয় রাজনীতির পথে শুরু হয়েছিলো তার যাত্রা। ভোটের ফলাফল পাওয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, তুরস্কের ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সমৃদ্ধির এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে আমাদের। জনগন আমাদের প্রেসিডেন্সি ও নির্বাহী ক্ষমতা পালনের দায়িত্ব দিয়েছে। আশাকরি গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেব’।

৬৪ বছর বয়সী এরদোগানের জনপ্রিয়তা কতখানি তার প্রমাণ বিশ্ববাসী দেখেছে ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই সেনাঅভ্যুত্থান চেষ্টার সময়। শুধুমাত্র তার একটি একটি ভিডিও বার্তার ডাকে সাড়া দিয়ে ট্যাঙ্ক, কামানের সামনে রুখে দাড়িয়েছে নিরস্ত্র জনতা। রাষ্ট্রনেতাকে কতখানি ভালোবাসলে ট্যাঙ্কের পথ রোধ করতে রাস্তায় শুয়ে পড়ে মানুষ!

গত দেড় দশকে ১৪টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিটিতে জয়ী হয়েছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে ইস্তাম্বুলের কাশিমপাশায় জন্ম এরদোগানের। বাবা ছিলেন তুর্কি কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন। মারমারা ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। যোগ দেন কমিউনিজম বিরোধী ন্যাশনাল টার্কিস স্টুডেন্ট ইউনিয়নে। ফুটবলও খেলতেন স্থানীয় একটি নামকরা ক্লাবে। ছাত্রজীবন শেষে যোগ দেন নাজিমউদ্দিন আরবাকানের ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির যুব সংগঠনে। ১৯৮০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দলটি বিলুপ্ত করা হলে আরবাকানের নতুন দল ওয়েলফেয়ার পার্টির সাথে যুক্ত হন। এই দল থেকেই ১৯৯৪ সালে নির্বাচিত হন ইস্তাম্বুলের মেয়র।

১৯৯৮ সালে সেক্যুলার সরকার ওয়েলফেয়ার পার্টি নিষিদ্ধ করে। কয়েক মাস জেল খাটতে হয় তাকে, সেই সাথে পড়তে হয় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি সংক্ষেপে যা একে পার্টি নামে পরিচিত। ২০০২ সালে প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েই জয়লাভ করে দলটি।


আরো সংবাদ



premium cement