তুরস্কে জোট সরকারের সম্ভাবনা!
- আল জাজিরা, হুররিয়েত ডেইলি নিউজ ও ডেইলি সাবাহ
- ২৪ জুন ২০১৮, ০৬:৩৬
আজ ২৪ জুন রোববার তুরস্কে পার্লামেন্টারি ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত গণভোটে জনগণ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেয়। গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগান ২৪ জুন আকস্মিকভাবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তুরস্কে এবারই প্রথম পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির সমন্বয়ে গঠিত পিপলস জোটের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগান। অন্যদিকে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী হয়েছেন মোহররেম ইন্স, গুড পার্টির (আইপি) প্রার্থী হয়েছেন মেরাল আকসেনার, পিকেকেপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) প্রার্থী হয়েছেন সালাহাতিন ও ফেলিসিটি পার্টির (এসপি) হয়েছেন তেমেল কারামুলাগ্লু। পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪টি দল অপ্রত্যাশিত ভাবে ন্যাশনাল এলায়েন্স নামে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করেছে। তবে তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভিন্ন প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২৪ জুন পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। নির্ধারিত সময়ের এক বছরেরও বেশি সময় আগে তার আগাম নির্বচনের ঘোষণা বিরোধীদের অপ্রস্তুত ও অগোছালো অবস্থায় ফেলে দেয়। দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় রূপান্তরের পক্ষে প্রচারণার কারণে এরদাগান আরেকটি সহজ বিজয় পেতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে দু’মাস পর পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। নির্বাচনী প্রচারণার মওসুম জনগণের বিতর্ককে স্থিতিশীলতার প্রশ্ন থেকে বহুত্ববাদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলকতার দিকে নিয়ে এসেছে।
২০১৭ সালের গণভোটে মৌলিক পার্থক্য থাকার পরও ক্ষমতাসীন একেপির বিরোধী ৪টি দল প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য অনুষ্ঠিত গণভোটে সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে প্রচারণা চালায়। আসন্ন নির্বাচনেও তারা পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার দিকে প্রত্যাবর্তনের অঙ্গীকার করে একজোট হয়েছে। তারা বলেছে, তারা পার্লামেন্টকে শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যা চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স পুনরুদ্ধার করবে। ধারণা করা হচ্ছে যে তারা আসলেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা সম্মিলিত ভাবে কোনো প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরও তারা এরদোগানের জন্য প্রকৃতই এক হুমকি।
১৬ বছরের মধ্যে এরদোগান প্রথমবারের মত জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। ২০ জুন টিভি ও রেডিওতে এক যৌথ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, নির্বাচনে যদি তার নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্টের ৬শ’ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩শ’ আসন না পায় তাহলে তারা জোট সরকার গঠনের কথা ভাবতে পারেন। দু’ কারণে তার এ কথা অনেককে বিস্মিত করেছে। প্রথমত, এরদোগানের মন্তব্য থেকে মনে হয় যে প্রথম দফায় না হলেও ৮ জুলাই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট পুননির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন যে ক্ষমতাসীন একে পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা। দ্বিতীয়ত, এ যাবত এরদোগানের জোর অভিমত ছিল যে অতীতে জোট সরকারগুলো অর্থনীতি ও সরকারী প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। তার সাফল্যের কারণ হচ্ছে তার একে পার্টি প্রথম দিন থেকেই একদলীয় সরকার হিসেবে দেশ শাসন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জোট সরকার গঠনের কথা বলা তার জন্য কঠিন যেহেতু তা তার নির্বাচনী জোটের সাফল্যের ব্যাপারে আস্থার অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে এই যে নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির দিকে সাংবিধানিক পরিবর্তন হলে নির্বাচনের পর কোনো প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীপরিষদ গঠন করবেন । সেখানে আস্থা ভোট থাকবে না। আস্থা ভোটেরই যদি প্রয়োজন না থাকে তাহলে তিনি জোট সন্ধানের কথা বলছেন কেন যখন অন্য কোনো দল থেকে মন্ত্রী নিতে প্রেসিডেন্টের কোনো বাধা নেই?
গবেষণা সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, তুর্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রথম দফায় সিদ্ধান্ত মূলক হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। যদিও এসব জরিপে এরদোগান বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে রয়েছেন বলে দেখা গেছে। কিছুদিন আগে ওআরসি রিসার্চ সেন্টার নামেএকটি গবেষণা সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী, নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ৫৩.৪ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপটিতে তুরস্কের ৩৭ প্রদেশের মোট ৩,৪১০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করে। গত ২৪ মে থেকে ১ জুনের মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
এরদোগানের ঠিক পিছনে অবস্থান করছেন রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহররেম ইন্স। জরিপ অনুযায়ী তিনি ২৪ শতাংশ ভোট পেতে পারেন। ওআরসি মতে, মেরাল আকসেনারের গুড পার্টি (আইপি) ১১.৫ শতাংশ ভোট পাবে, পিকেকেপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) সালাহাতিন ৮ শতাংশ এবং ফেলিসিটি পার্টির (এসপি) তেমেল কারামুলাগ্লু ২.১ শতাংশ ভোট পেতে পারেন।
রিমরেস রিসার্চ সেন্টার নামে আরেকটি গবেষণা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, এরদোগান সর্বোচ্চ সমর্থন পেতে পারেন। তবে, তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হতে পারে। এ সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী, প্রথম রাউন্ডে এরদোগান ৪২.২ শতাংশ, ইন্স ২৪.৬ শতাংশ, আকসেনার ১৬.৯ শতাংশ, দেমিরতাজ ১২.৩ শতাংশ, কারামুলাগøু ৩.৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এএন্ডজি গবেষণা সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার আদিল গুর বলেছেন, যে ৫৫-৬০ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে এরদোগানকে সমর্থন করবেন। নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে যদি বিরোধী জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যদি দ্বিতীয় দফায় যায় সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের একজন প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। অবশ্যই এরদোগান শক্তিশালী অবস্থানে আছেন, কিন্তু বিরোধী দলের প্রার্থীও প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে ভালো অবস্থানে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে সেক্ষেত্রে সিএইচপি’র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মোহররেম ইন্স প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হতে পারেন। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির বিরোধী ও এরদোগান বিরোধী ভোটদাতারা তাদের মতাদর্শগত বিরোধ পিছনে ফেলবেন ও তাকে সমর্থন দেবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা