২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দাঁড়িয়ে আছেন তিনি

-

এবারের বইমেলায় আমার একটি বই এসেছে। নাম দুয়ারে দাঁড়িয়ে। প্রকাশ করেছে সমাহার প্রকাশনী। ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুক খুললেই অনেক কবি-সাহিত্যিক এবং তাদের বইয়ের পোস্ট চোখে পড়ে। তাদের সেসব পোস্টে ম্যালা লাইক কমেন্ট আসে। বলা যায়, সেই লোভ থেকে এবার নিজের টাকায় বইমেলায় বই বের করেছি।
প্রকাশক ফোনে জানালেনÑ ‘আপনার বই এক কপিও বিক্রি হয়নি।’
প্রকাশকের কথায় ভারী লজ্জা হলো আমার। আমার বই বিক্রি হবে না, এটাই স্বাভাবিক। বই বিক্রি হোক আর না হোক, আমার লেখা কোনো বই বের হয়েছেÑ এটাই আনন্দ।
এই আনন্দে মাতাল হয়ে রোজ ফেসবুকে আমার বইয়ের ব্যাপারে দুই চারটা পোস্ট দেয়াটা এখন খানিক নেশার দিকে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আমি একজন লেখকÑ এই নতুন পরিচয় জেনে সবাই ফেসবুকে আমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। লাইক-কমেন্টে এসে বারবার জানায়Ñ ‘আপনার বইয়ের জন্য শুভ কামনা।’ অথচ তারা জানে না আমার বই এক কপিও বিক্রি হয়নি। যারা ইনবক্সে এসে বই সম্পর্কে তথ্য জানতে চায় বই কেমন চলছে, তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করে বলিÑ ‘ভালোই চলছে।’
আমার বই নিয়ে যারা বেশি আগ্রহ দেখান ইনবক্সে এসে, তাদের মধ্যে সেলিম ভাই একজন। আমাদের পাশের মহল্লার বড় ভাই তিনি। বই কেমন চলছে, বই পড়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া কী, রোজ বই বিক্রি হচ্ছে তো, এসব নিয়ে সেলিম ভাইয়ের কৌতূহলের শেষ নেই। তার কাছে আমি একজন অসাধারণ সাজার জন্য মিথ্যা করে বলি, ‘আমার বইটি মেলায় হিট এবং সমাহার প্রকাশনীর এখন পর্যন্ত বেস্ট সেলার।’ এসব অবান্তর খবর জেনে সেলিম ভাই খুশি হন। খবরাখবর ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারেই চলে। তবে আজকাল আমি ফেসবুকে অ্যাক্টিভ কম থাকি বলে সেলিম ভাই আমার ফোন নম্বর চেয়ে নিয়ে ফোনকলেও এখন বইয়ের খবরাখবর নিতে শুরু করেছেন। ফলে তার কাছে অবলীলায় আমি একজন ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠি। সেলিম ভাই ফোন দিলেন।
‘তুমি বইমেলায় যাবে না রঞ্জু?’
‘যাবো।’
‘কবে?’
‘কাল।’
‘সত্যি?’
‘জি।’
‘বাহ। পাঠকদের সাথে দেখা হবে, এটা ভাবতে কেমন লাগে?’
‘ভালো।’
আমি যে কাল বইমেলায় যাবো, এটাও মিথ্যা বলেছি। মিথ্যে বলার কারণÑ তার কাছে আমাকে ‘অসাধারণ’ সাজতে হবে। তাতে ধরা খাওয়ার ভয় নেই। সেলিম ভাই সহজ সরল মানুষ। এত কিছু তালাশ করতে যাবেন না।

২.
বিকেলে বাবা বাজারে পাঠালেন মশার কয়েল কিনতে। বাজারে ঢুকতেই প্রথমে চোখ পড়ল ফুচকার দোকানে। এই খাবারটির প্রতি যথেষ্ট ঝোঁক আমার। ঝটপট খেয়েও নিলাম একপ্লেট। একপ্লেট খাওয়ার পর আরেক প্লেটও খেলাম। মনটা ভরে গেল।
ফুচকার বিল পরিশোধ করে মশার কয়েল দোকান খুঁজতে গিয়ে অনুভব করলাম মারাত্মক পেট ব্যথা শুরু হচ্ছে। সর্বনাশ ফুচকা ডেকে এনেছে আমার পেটব্যথা।
ওমা! পেটব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। কী করি এখন! টয়লেটও পেয়েছে। টয়লেটে গেলে ভালো হতো। ছুটলাম বাজারের পাবলিক টয়লেটের দিকে। হঠাৎ পকেটের ফোনটাতে কে যেন মিসকল মারল। স্ক্রিনে ভাসছে সেলিম ভাইয়ের নাম। ব্যাপার কী! সেলিম ভাই মিসকল দিলেন কেন! ব্যাক করলাম। প্রথম রিং হতেই রিসিভ করলেন।
‘ইয়ে রঞ্জু, ভুলে মিসকল চলে গেছে। কিছু মনে করো না।’
‘ও আচ্ছা। নো প্রবলেম।’
‘তুমি বইমেলায় যাওনি?’
‘আমি এখন বইমেলায়ই। পাঠকরা আমার বই কিনে অটোগ্রাফ নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছে। এখন রাখি ভাইয়া। সবাইকে অটোগ্রাফ দিতে হবে।’
‘বাহ্। বেশ ভালো। ঠিক আছে পরে আলাপ হবে। সবাইকে ভালো করে অটোগ্রাফ দাও। আমি আবার রাতে ফোন করে খবর নেবো।’
লাইন কেটে দিলাম। সেলিম ভাই জানেন না আসল ঘটনা। এসব বলে তার কাছে আমাকে ‘অসাধারণ’ সাজতে হবে।
প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে বাজারের পাবলিক টয়লেটে ঢুকতেই দেখি ভেতরে লম্বা সিরিয়াল। সবাই টয়লেটের সামনে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পরম ধৈর্যে। তৃতীয় টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে যিনি অপেক্ষা করছেন, তাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠি। তিনি স্বয়ং সেলিম ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
‘আরে রঞ্জু তুমি! তুমি না এখন বইমেলায় পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছো?’
‘ইয়ে মানে...’
‘মিথ্যে বললে কেন?’
কী জবাব দেবো বুঝতে পারছি না। লজ্জায় আর পেটব্যথায় আমার মরি মরি দশা। অসাধারণ সাজার জন্য এমন মিথ্যা বলে ধরা পড়ব, কে জানত!

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪ সুইডেনে বসবাসের অনুমতি বাতিল কুরআন পোড়ানো শরণার্থীর ভালো আছেন খালেদা জিয়া

সকল