২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শুভেচ্ছা!

-

শহরের বিলাসবহুল এসি মার্কেটে হোসাইনের কসমেটিকস দোকান। নাম ‘ইচ ডে’। রাত অবধি ভিড় থাকে। কিন্তু আজ ভিড় উপেক্ষা করে বাসায় রওনা দিয়েছে সে। অন্য দিন হলে আরো কিছু উপার্জনের আশায় বসে থাকত। আজ আর বসে থাকা যাবে না। কারণ আজ ১ তারিখ। রাত ১২ হলেই ২ তারিখ হবে। সে জানে ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘরে এলেই লাবণ্য হাসি মুখে তাকে ‘শুভ জন্মদিন’ বলে শুভেচ্ছা জানাবে। শুধু শুভেচ্ছা জানিয়ে বসে থাকবে না! ফ্রিজ থেকে কেক বের করে তার সামনে নিয়ে আসবে। মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা হবে। পরে আলমিরা থেকে অনেক রকমের গিফট এনে সারপ্রাইজ দেবে।
গত বছরের জন্মদিনে লাবণ্যের দেয়া পাঞ্জাবিটা এখনো হোসাইনের গায়ে জড়ানো। পকেটে খঙঠঊ লেখা মানিব্যাগটাও পাঞ্জাবির সাথে পাওয়া। জন্মদিন নিয়ে তার বাড়তি কোনো আগ্রহ নেই। তবুও স্ত্রীর ভালোবাসাযুক্ত এমন শুভেচ্ছায় মন ছুঁয়ে যায় তার। সে মনে মনে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ২ তারিখের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

২.
হোসাইন বাসায় ফিরে টেবিলে খেতে বসে যায়। তার মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। লাবণ্য প্রতিদিনের মতো স্বামীর জন্য খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। দু’জনের খাবার শেষে লাবণ্য শোবার কক্ষে গিয়ে বিছানা তৈরি করছে। পরে মশারি টানিয়ে ‘গুড নাইট ডার্লিং’ বলে শুয়ে পড়ে।
হোসাইন কিঞ্চিৎ অবাক হয়। একটু পর জন্মদিনের উৎসবে পুরো ঘর মুখরিত হওয়ার কথা! তাহলে লাবণ্য ঘুমিয়ে পড়ার জন্য এত ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল কেন?
কিন্তু পরক্ষণে ভাবে লাবণ্য খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। দুষ্টও বটে। ১২টা বাজলে সে নিশ্চয়ই চমকিয়ে দেবে বলে ভেবে রেখেছে!
লাবণ্যের কারসাজি বুঝতে পেরে হোসাইন স্ত্রীর তালে তাল মিলিয়ে ‘ওকে ঘুমাও’ বলে সেও খাটে উঠে ঘুমের মতো পড়ে থাকে।
একটু পরপর লুকিয়ে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে টাইম দেখে নেয়।

৩.
হোসাইন বড় রকমের একটা ধাক্কা খায়। ১২টা বেজে এখন ৫ হয়েছে। লাবণ্য মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। মুখ দিয়ে বড় বড় শ্বাস নেয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
হোসাইনের কপালে চিন্তার ভাঁজ। লাবণ্য তাকে শুভেচ্ছা না জানিয়েই ঘুমিয়ে গেল! গত তিন বছরের সংসারে এমন হয়নি কখনোই।
অস্থির হয়ে খাট ছেড়ে ডাইনিং রুমে যায়। ফ্রিজটা একটু দেখা দরকার। ফ্রিজ খুলে হতাশ হয় হোসাইন। পুরো ফ্রিজ কাঁচা তরকারিতে ভরা। কেকের কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। মনে খটকা লাগে। তার প্রতি কি লাবণ্যের ভালোবাসা কমে গেল? নাকি অন্য কারো সাথে লাবণ্যের রিলেশন চলছে?
এমন ভাবনাচিন্তা করে সে আবার ফিরে আসে রুমে। আলো জ্বালিয়ে শব্দ করে চেয়ারে বসে সিগারেট ধরায়! ক্রমেই তার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কী করবে বুঝে উঠছে না।
সিগারেটের ধোঁয়ায় লাবণ্যের ঘুম ভেঙে যায়! ঘুমঘুম চোখে লাবণ্য হোসাইনকে দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে।
‘কী ব্যাপার! তুমি এখনো জাগনা! ঘুমাচ্ছ না?’
‘না ঘুম আসছে না।
‘এত রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে যে!’
‘আমার খারাপ ভালোতে তোমার কী?’
লাবণ্য হোসাইনের উগ্র মেজাজ বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়! প্রশ্রয় দেয়া ভঙ্গি করে বলে, ‘সত্যি করে বলো কী হয়েছে তোমার?’
হোসাইন গলার শব্দ উঁচু করে বলে, ‘তোমাকে বলে আর কী হবে! তুমিতো আমাকে আর আগের মতো ভালোবাস না। আজ আমার জন্মদিন অথচ তুমি কোনো প্রকার উইশ ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়েছ!’
লাবণ্য ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় নেয়! তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। চোখ মুখ বাঁকিয়ে বলে, ‘আরে বুদ্ধু তোমার জন্মদিনতো আজ নয়, আগামীকাল! আজ তো কেবল ১ তারিখ হয়েছে!’
এখনো লাবণ্য পুরো ঘর কাঁপিয়ে হাসছে আর হোসাইন বোকাসোকা ভাব নিয়ে ক্যালেন্ডারের সাথে নিজের মোবাইলের তারিখ মিলিয়ে নিচ্ছে!

 


আরো সংবাদ



premium cement