২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আধুনিক ছেলে!

-

নাম রকিবুল হলেও সবাইকে রকি নামে পরিচয় দিতে ভালোবাসে সে। ইদানীং রকি নামটাও নাকি সেকেলে হয়েছে, তাই নামকে আরো কেটেছেঁটে করেছে রক্। কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে সে বিজ্ঞের মতো একবাক্যে বলা শুরু করে, ‘দেখ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মাইক্রো-সিম বের হয়েছে আর এখন আরো ছোট হয়ে বের হয়ে ন্যানো-সিম। সিমের যদি হয় এত পরিবর্তন তাহলে নামের হতে দোষ কোথায়?’
বন্ধু চুপ যায় না। বলে, ‘তাইলে বন্ধু তোকেও আমরা ন্যানো-রক্ বলেই ডাকব। কি বলিস তোরা?’
সবাই একবাক্যে বলে ওঠে, ‘হ। আজকে থেইকা রকিবুল আমগো ন্যানো-রক্।’
রকিবুল ভ্রƒ বাঁকিয়ে ছন্দযুক্ত কণ্ঠে ‘মন্দ না তোদের বন্দনা’ বলে সশব্দে হেসে ওঠে।
রকিবুলের মুখে এমন আদিখ্যেতা ছন্দ শুনে সবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
২.
নামে রক্ হলে চলবে না। আরো আধুনিক হতে হবে। চালচলনের উন্নতি ঘটাতে হবে। এ ভাবনা থেকে ঢিলেঢালা ড্রেস ফেলে দিয়ে টাইট-ফিট ড্রেস জড়িয়েছে। পার্লারে গিয়ে চুলের উপরি ভাগ বড় রেখে, নিচে ও পাশে একদম ছোট করে কেটে এক পাশে ক্ষুর দিয়ে লম্বা সিঁথি মেরেছে। এটাকে নাকি ‘আন্ডার কাটিং’ বলে!
মুখে হালকা ফেশিয়াল করে আয়নায় নিজেকে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে রকিবুল। বার্বি চেয়ার ছেড়ে শরীরে মূল্যবান ভাব এনে সেলুন ত্যাগ করে সে।
দুই কানে এয়ারফোন জড়িয়ে সমানতালে গা দুলিয়ে বাসায় ঢুকতেই রকিবুলের বাবা সামনে দাঁড়িয়ে, ‘এ ভাই আপনি কে? কাকে চাচ্ছেন?’
‘আব্বা! আমি আফনের পোলা রক্!’
‘ফাইজলামী করেন! রক্ নামে আমার কোনো পোলা নাই!’
‘ওহ বাবা! আমাকে চিনতে পারছ না! সো ডিসগাস্টিং।’
‘ওই তোরে আমার চিনতে হইবে না! আমার বাড়ি থেকে দূর হ্ বদের হাড্ডি!’
বাবা-ছেলের বাকবিতণ্ডা দেখে হাতে খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসেন রকিবুলের মা। বলেন, ‘ও...রে আমার সোনা ছেলে রে! তোর মুখটা এত শুকনো লাগছে কেনরে?’ বলেই ছেলেকে কাছে টেনে নেন। স্বামীর দিকে অগ্নি মুখ করে ফিরে তাকান। রাগান্বিত স্বরে বলেন, ‘ওই! তোমার কত্ত বড় সাহস! আমার ছেলেরে আমার বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছ?’
এই বলে স্বামীকে সাইডে সরিয়ে ছেলেকে আদর করতে করতে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান।
রকিবুলের বাবার গা জ্বলে যাচ্ছে মা-ছেলের এমন ঢঙ দেখে। কিন্তু স্ত্রীর ভয়ে তিনি চুপসে আছেন।

৩.
সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে জলিল কাকুর টং। সবাই মামার টং বলে ডাকে। রকিবুল তার বন্ধুদের নিয়ে ওইখানে আড্ডা মারছে। আজ চোখে তার রোদচশমা, বাঁ কানে ছোট ম্যাগনেট দুল পরা। হাতে এন্ড্রয়েড ফোন নাড়াচাড়া করছে ব্যস্ততার ভঙ্গিতে।
চশমার ফাঁকে নজর রেখেছে স্কুলের মূল ফটকে এই বুঝি কোনো বালিকা বের হবে! প্রেম একটা তার হওয়া লাগবেই। নইলে রক্ নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সুমন রকিবুলের মতলব বুঝতে পেরে বলল, ‘মামা! আইজকাতো তুমি পুরাই মাইকেল হইছো! প্রেম ঠেকায় কোন শালা!’
কিছু বলতে গিয়ে রকিবুল থেমে যায়। চোখ যায় রাস্তায়। অতিরিক্ত সাজসজ্জা করা দুই তরুণী রিকশা করে হাওয়ায় উড়ে চলে যাচ্ছে। বাতাসে তাদের লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে উড়ছে। রকিবুলের এবার নজর গেল একজনের ওড়নাতে ! রিকশার পাশে ঝুল পড়ে আছে।
যেকোনো মুহূর্তে চাকায় প্যাঁচ খেয়ে কেলেঙ্কারি কাণ্ড ঘটে যাবে।
এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। ফিল্মি স্টাইলে উদ্ধার করে হিরো সাজতে হবে! পরে ভাব বিনিময়...
রকিবুল আর চিন্তার সময় নেয় না। বোল্ট মার্কা একটা দৌড় লাগাল রিকশার পিছে!
আধা কিলো হাঁপানি দৌড় শেষে রিকশার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ড্রাইভার অনেক কসরত করে ব্রেক চাপল! তারা অবাক দৃষ্টি করে তাকিয়ে আছে রকিবুলের দিকে।
রকিবুল ক্লান্তি চাপা দেয়। মুখে লাজুক ভাব এনে মাথা নিচু রেখে বলে, ‘ম্যাডাম! আরেকটু হলে তো মরতে বসেছিলেন!’
বলেই ওড়না চাকার পাশ থেকে সরিয়ে তরুণীকে দিতে যাবে, তখন রিকশা থেকে একজন চিল্লায়ে বলে ওঠে, ‘ওরে বাবা। কি আধুনিক ছেলেগো! ওই তোকে আমার ভালো লেগেছেরে! তোকে আমাদের সাথে রাখবোরে! কোলে তুলে আদর করবরে!’
এই বলেই সে দুই হাতে তালি বাজাতে শুরু করে। অন্যজন কোমর দুলিয়ে মুখে ছিটি মারছে!
রকিবুলের আর বুঝতে বাকি থাকে না। সে কিসের পাল্লায় পড়েছে! ‘ও আব্বাগো’ বলেই দেয় দৌড়।
একটু পরপর রকিবুলের প্যান্ট নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে! এক হাত দিয়ে তুলে আবার দৌড়াচ্ছে! পিছে তৃতীয় লিঙ্গের তারাও দৌড়াচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement