২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সন্ধ্যায়

-

ছোটখালার মনটাই খারাপ হয়ে গেল, যখন জানলেন আমি এখনই তার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি। বেশ অনুনয় করে বললেন, ‘অন্তত রাতটা থাক। এই সন্ধ্যায় যাসনে বাবা। এই দিকের পথঘাট ভালো না। সন্ধ্যার পর একলা চলা নিরাপদ না। ছিনতাইকারীরা ধরে।’ ছোটখালার কথা শোনে কিছুটা ভয় পেলাম বটে, কিন্তু আমাকে যে এখনই বাড়ি যেতে হবে। কাল আমার ফাইনাল পরীক্ষা। যদিও আজ বিকেলে এখানে আসার কথা ছিল না। হঠাৎ ছোটখালাকে মনে পড়ল বলে টানা তিন বছর পর তাকে দেখতে এসেছি। তিন বছর পর বড় বোনের ছেলে এই আমাকে দেখে তিনি যেন আসমানের চান জমিনে পেলেন।
ফাইনালি আজ আমি এখানে থাকছি না জেনে ছোটখালা মুখের হাসি চলে গেল।
‘তাহলে চলেই যাবি?’
‘জি খালা। কিন্তু ছিনতাইকারীর কথা শুনিয়ে ডর লাগিয়ে দিলেন।’
‘বুদ্ধি আছে একটা।’
‘কী?’
কিছু না বলে ছোটখালা কিচেনে চলে গেলেন। মিনিট পাঁচেক পর হাতে এক শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
‘এই ব্যাগে কী?’
‘কিচেনের ময়লার ঝুড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা পেপারে মুড়িয়ে এই ব্যাগে ভরে দিয়েছি।’
‘কিন্তু কেন?’
‘পথে যদি তোকে ছিনতাইকারী ধরে, ওদের হাতে এই শপিং ব্যাগটা ধরিয়ে দিস। ওরা তো প্রথমেই জানবে না এটার ভেতর কী আছে!’
‘হা হা হা।’
২.
এই সন্ধ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভাগ্য জোরে একটি রিকশা পেলাম। ন্যায্য ভাড়ায় রিকশাওয়ালা আমার গন্তব্যে যাবে জেনে রিকশায় চেপে বসলাম। মধুপুর প্রাইমারি স্কুলের মোড়ে আসতেই মুখোশধারী কারা যেন পথ আগলে দাঁড়ায়। ওরা তিনজন। হাতে চকচক করা ধারালো অস্ত্র। একজনে বলল, ‘কী আছে বের করুন।’
বুঝলাম এরাই ছোটখালার বলা সেই কাক্সিক্ষত ছিনতাইকারী। ওদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখে ভয়ে গা ছমছম করে উঠল। ভীতু গলায় বললাম, ‘আমার কাছে কিছু নেই ভাই। আপনারা কারা?’
একজনে হুঙ্কার ছেড়ে বলল, ‘কিছু নেই মানে! হাতে তো ব্যাগ দেখতে পাচ্ছি। ব্যাগে কী আছে?’
হাতের ব্যাগটাকে শক্ত করে ধরার অভিনয় করে বললাম, ‘এই ব্যাগে দামি কিছু বিদেশী চকলেট আছে। ছোটখালু কানাডা থেকে পাঠিয়েছেন।’
লাল শার্ট পরা মুখোশধারী আরেকটা ছেলে বলল, ‘দিয়ে দে এটা। আমরা খাবো।’
চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘না না। এটা আমি দেবো না।’
ততক্ষণে আমার হাত থেকে জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছে সেই ময়লার ব্যাগ, যার ভেতরে বিদেশী চকলেট আছে বলে ওদেরকে ভুয়া খবর জানিয়েছি। ব্যাগটাকে ফেরত দেয়ার আহ্বান জানানোর অভিনয় করে বললাম, ‘আপনাদের পায়ে ধরি। ব্যাগটা দিয়ে দেন।’
না, ওরা ব্যাগ দেয়নি, বরং ধমকের সুরে বলল, ‘এক্ষুণি বিদায় হও। নয়তো পেটে অস্ত্র ঢুকিয়ে...।’
সুযোগ পেলাম আমি। রিকশাওয়ালাকে ছোট্ট করে বললাম, ‘জলদি চলেন ভাই। বড় বাঁচন বাঁচলাম। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে পকেটের আইফোনটা ওদের নজরে পড়লে রেহাই নেই।’
রিকশাওয়ালা ঝড়ের গতিতে স্থান ত্যাগ করলেন। চলন্ত রিকশায় বসে মনে মনে ভাবিÑ ওরা এতক্ষণে নিশ্চয় ব্যাগ খুলে বিদেশী চকলেট বের করতে গিয়ে ময়লা-আবর্জনা পেয়ে বোকা হলো আর আমার বাপ-দাদার নাম ধরে গালমন্দ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement