২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিবাহ

-

বিয়ের পরিপূর্ণ বয়স হয়েছে আমার। কিন্তু আব্বার চোখে এই বিশেষ বয়সটা ধরা পড়ছে না। তিনি মনে করেন, আমি এখনো সেই ছোট্ট খোকাই আছি। কিন্তু এই ছোট্ট খোকা যে বিয়ের জন্য মনে মনে মরিয়া, সে কথা আব্বাকে কী করে বোঝাই! মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আব্বাকে উঁচু গলায় বলি, ‘এই ঘরে কি বউ লাগবে না?’ মনের কথা মনেই জমা থাকে। আর বলা হয় না।
আমার যে বিয়ে করার বড় শখ, এ কথা প্রথম জানাই ওহাবকে। ওহাব আমার জানের দোস্ত। মনের গোপন বাসনার বয়ান শুনে ওহাব বলল, ‘বিয়ের কথা বলতে লজ্জা পেলে আকার ইঙ্গিতে বোঝা যে, তোর একজন নিজের মানুষ দরকার।’
চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘কী রকম আকার ইঙ্গিত দোস্ত?’
ওহাব মোবাইলখানা পকেটে রাখতে রাখতে বলল, ‘গভীর রাতে বাড়ি ফের। এক রাত নয়, দুই রাত নয়, রোজ রাতে দেরি করে ঘরে ফের। খাট বিছানা আগোছাল রাখ। রান্না ভালো হচ্ছে না বলে তোর আম্মাকে ঝাড়ি দে। এসব দেখে তোর বাবা চালাক হলে ঠিকই বুঝে নেবে তোর বিয়ের ভীমরতি এসব এবং এটাও বুঝবে যে, ঘরে বউ থাকলে বউয়ের টানে রাত না করে ঘরে ফিরবি।’
ওহাবের সাজেশন মন্দ নয়। ফাইন। আজ থেকে ওহাবের এসব ফন্দি আমাকে আমলে নিতে হবে। আজ রাত থেকে রোজ রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরব। আব্বাকে দেখিয়ে দেব কত ধানে কত চাল!

২.
আমি সাধারণত সন্ধ্যার খানিক পরেই বাড়ি ফিরি। আজ থেকে এই নীতি বাদ। এখন রাত সাড়ে ১০টা। এরই মধ্যে আব্বার তিনটি কলও এসেছে। রিসিভ করিনি। চতুর্থ কলটি রিসিভের পর আব্বা বললেন, ‘তুমি কোথায় বাবা? ঘড়িতে কয়টা বাজে, খবর আছে?’ আব্বাকে বললাম, ‘একটু পর আসছি।’
সেই ‘একটু পর’ এলো সাড়ে ১১টায়। বাড়ি এসে দেখি আব্বা দুয়ারে চেয়ার পেতে আমার অপেক্ষায় বসে আছেন। আমার আগমন টের পেয়ে উঠে এসে বললেন, ‘বাবা, কখনো তো এত রাতে বাইরে থাকিস না।’
আব্বার পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম, ‘বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে লাভ কী? কার সাথে আড্ডা দেবো?’
আব্বা কিছু বললেন না।
পরের দিন রাত সাড়ে ১২টায় ঘরে আসার পর আব্বা বললেন, ‘তোর অভ্যাস দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এত রাতে বাইরে কী করিস? কার সাথে আড্ডা দিস?’
আব্বাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘আমার কি বন্ধুর অভাব আছে? তা ছাড়া বাড়িতে এসে লাভ কি একা একা বসে থেকে! কার সাথে গল্প করব? গল্প করার জন্যও তো একজন মানুষ লাগে। তুমি আমি আর আম্মা ছাড়া কে আছে এই ঘরে?’
আব্বা চুপ করে রইলেন। আমার কথার অর্থ বুঝলেন কিনা, কে জানে!

৩.
এভাবে চলতে লাগল আমার রাত করে বাড়ি ফেরার মহড়া। আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাত ৩টায় বাড়ি ফিরব। পাড়ার পশ্চিম রাস্তার শেষ মোড়ে যে বটগাছটি, তার তলে বসে রইলাম রাত ৩টা বাজার অপেক্ষায়। এরই মধ্যে আব্বার কয়েক দফা ফোন এলো। রিসিভ না করেই প্রতিবার লাইন কেটে দিয়েছি।
৩টা বাজার অপেক্ষায় এই নিশুতি রাতে আমি বসে আছি বটতলায়। হালকা ভয় লাগছে। ভূতের কথা ভাবতেই গা চমচম করে উঠল। হঠাৎ আমার চোখ গেল সামনের রাস্তার দিকে। কারা যেন আসছে! কে ওরা এত রাতে!
পাঁচজন লোক আমার সামনে। ভীতু কণ্ঠে বলি, ‘কে আপনারা?’
একজন বলল, ‘হারামজাদা হাতে নাতে ধরা পড়েছিস। আমরা পুলিশ। রাতে টহল দিচ্ছি মদ গাঁজা ইয়াবা পাচারকারীদের ধরতে। তোকে এভাবে পেয়ে যাব, ভাবিনি।’
আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘না না, আমি ওসব দলে নেই। আমি এখানে এমনিতে বসে আছি।’
ওদের মধ্যে একজনে আমাকে ঠাস করে চড় মেরে বলল, ‘এত রাতে এখানে এমনিতে বসে আছিস? কারে বোঝাস? আমরা শিশু? দুধ খাই? ওই ওরে হাতকড়া পরা।’
আমি ওদের পায়ে পড়লাম। লাভ হয়নি। ইয়াবা কেলেঙ্কারিতে জড়িত ভেবে ওরা আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে একজনে তেড়ে এসে আমাকে থাপ্পড় মারতে মারতে বলল, ‘হারামজাদা, বাপ মা তোদের জন্ম দিয়েছে ইয়াবা খেতে?’ আমি কোনোভাবেই বোঝাতে পারি না, আমি ওদের ধারণার আসামি নই। ওরা আমাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নিয়ে নিশ্চয় গরু পিটুনি দেবে।
রাত করে বাড়ি ফিরে আব্বাকে বিয়ের ইঙ্গিত দেখাতে গিয়ে এভাবে পুলিশের কবলে পড়ব, এটা আগে জানলে কি জীবনেও এমন কাজ করতাম! ওহাবের শিখিয়ে দেয়া সাজেশন আমাকে পুলিশের কবলে ফেলল। ইচ্ছে করছে ওহাবকে এখনই ঠাস করে একটা চড় মারিÑ এসব ভাবছি। হঠাৎ পুলিশের একজন আমার গালে কষে এক চড় মেরে বলল, ‘কত বছর ধরে ইয়াবা খাস?’


আরো সংবাদ



premium cement