২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফেসবুকীয় প্রেম কাহিনী

-

ফেসবুককে রঙ-বেরঙের নামের ডিকশনারি বলা যেতে পারে। আপনার কী নাম চাই? কোন মডেলের নাম চাই? অজস্র যুক্তিহীন হ-য-ব-র-ল মার্কা নাম রয়েছে ফেসবুকে। এখন বাচ্চা-কাচ্চাদের নাম রাখতে আর কোনো বই-খাতা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে হয় না ফেসবুকে ঢুকলেই হাজার হাজার নাম। একটা পছন্দ করে রাখলেই হলো। পানির সাথে ট্যাং গুলিয়ে সেটাকে আবার আলাদা করা গেলেও ফেসবুকে ঢুকে নাম দেখে ছেলেমেয়ে আলাদা করা যাবে না। অনেক দিন পর গ্রামে গেছিলাম। গিয়ে শুনতে পারলাম আমার এক বাল্যবন্ধু ঠনা পাগল হয়ে গেছে। ফেসবুকে নাকি খুব সুন্দরী একটি মেয়ের সাথে প্রেম করেছে। কিছু দিন পর ফেসবুকেই দু’জন কবুল বলেছে। কয়েক দিন পরই ঠনার ফেসবুক আইডি ব্লক হয়ে গেছে। ব্যস তার সাথে বউটা হারিয়ে গেছে। পরে বউয়ের কথা ভেবে ভেবে এখন রাস্তার পাগল হয়ে গেছে। এখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় আর বলেÑ ফেসবুক কই! আমার বউ কই! ফেসবুক কই? বউ কই?
অফিসের এক ছোটভাই অনেক দিন ধরে বলছে তার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। সময় করে সে দিন ওকে বললাম। বের হলাম দু’জনে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, বেতন-টেতন পেয়েছে হয়তো ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াবে। নিয়ে গেল হাতিরঝিলে। সারা পথ ফেসবুকে চ্যাটিং করতে করতে গেল। হাতিরঝিলের ভেতরে হাঁটছি দু’জনে। একটি ব্রিজের ওপর আমরা উঠতেই হঠাৎ ছোট ভাই পেছনের দিকে বাক নিয়েই খিচে দৌড় শুরু করলেন। কিছু না বুঝে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু হিজড়া আমাদের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে আর হাত থাবড়াচ্ছে। বলছে, খাড়া। দৌড়াস ক্যান? লিটনের ফ্ল্যাটে নিবি না। কিশমিশ খাবি না।
পরে দৌড়াতে দৌড়াতে এদিক-ওদিক ঢুকে কোনো মতে প্রাণে বেঁচেছিলাম সেদিন। পরে সেই ছোট ভাইয়ের কাছে জানতে পারলাম, এই হিজড়াকে মেয়ে ভেবে গত কয়েক মাস দমিয়ে ফেসবুকে প্রেম চলেছে।
সেদিন প্রবাসী এক বন্ধুর ফোন! ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতেই খুব বড়সড় অসংখ্য হাই ছেড়ে বলল, খুব টেনশনের মধ্যে আছি। আমি বিস্তারিত জানতে চাইলে ও জানাল, ওরা ফেসবুকে প্রেম করা প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে। কয়েক দিন ধরে প্রায় হাজারখানেক ফেসবুকে প্রেম করা যুগোলদের বিয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে নয় শ’ সামথিং হলো ছেলের সাথে ছেলের বিয়ে হয়েছে। ওদের ওখানে নাকি কেউই আসল নাম দিয়ে ফেসবুক খোলে না। সুন্দরী মেয়েদের ছবি আর কেউ বা ফুল, ফল আর ন্যাচারাল ছবি দিয়ে ফেসবুক খোলে। আর কেউ কাউকে অফার করলেই কোনো কথা ছাড়াই চুটিয়ে প্রেম শুরু করে। বোঝাই মুশকিল কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে। আমি বললাম, তা তোর সমস্যা কোথায়। ও বলল, ওটা আর বলিস না। তোর ভাবীকে ফোন দিলে কথা বলে মজা পায় না। তোর ভাবীর কানে সমস্যা। এক কথা কয়েকবার বলার পর তয় সেন শোনে। তাই সময় কাটার জন্য ফেসবুকে একটা প্রেম করেছিলাম। এখন টেনশনে আছি, ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টওয়ালা যদি পুরুষ হয় তাহলে তো শেষ বন্ধু। তা আমি ওকে একটু পরামর্শ দিলাম। বললাম, তোর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তোর বউকে দিয়ে দে। দেখ কালো মাল কোনোভাবে ট্রান্সফার করা যায় কি না। সেদিন বাসা থেকে রিকশায় করে অফিসে যাচ্ছিলাম। রিকশাওয়ালা চাচার বয়স ভালোই। কী একটা কথায় যেন ফেসবুক প্রসঙ্গ চলে এলো। ফেসবুকের কিছু খারাপ সাইড বলছিলাম চাচাকে ভেবেছিলাম চাচা আগের দিনের মানুষ ফেসবুকের খারাপ দিক নিয়ে কথা বললে সায় দিতে। কিন্তু চাচা দেখি তার উল্টো। তিনি আরো ফেসবুকের পক্ষে শ’খানেক গুণ গাইলো। একটু রহস্য নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শুনতে থাকলাম আর চেষ্টা করতে লাগলাম চাচার ফেসবুক প্রেমের কারণ। চাচার সাত পিস মেয়ে। ছয় পিসেরই বিয়ে হয়েছে। কোনো খরচ লাগেনি চাচার। বাকি আছে ওয়ান পিস। তা-ও নাকি বিনা খরচে বিয়ে হতে চলেছে। আমি জানতে চাইলাম চাচা আপনি কি কোনো মন্ত্র জানেন নাকি। এই যৌতুকের যুগে বিনা টাকার মেয়ে বিয়ে দেয়া আর আকাশ দিয়ে উড়ে বেড়ানো তো সমান কথা। চাচা বলল, আরে বাবা ওই যে তুমি সেই সময় ফেসবুকের কথা বললে না। ওই ফেসবুকেই আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমি বললাম, কিভাবে চাচা? ফেসবুকে কি বিয়ের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন? কাকা একটু রেগে বললেন, কেন আমার মেয়েরা কি একেবারে পচে গেছে নাকি যে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে দিতে হবে? আমি অনুনয়ের সুরে বললামÑ চাচা তাহলে একটু খুলে বলেন না ব্যাপারটা। চাচা বললেন, আমার মেয়েরা ফেসবুকে প্রেম করে করেই সব অবিবাহিত জীবনের বর্ডার পাস হয়ে সাংসারিক জীবনে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement