২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আকরাম গরুচোর নয়

-

শরীরের হাবভাব দেখে আকরাম বুঝে গেল গতবারের মতো এবারের ঈদেও তার শরীরে বাতজ্বরের আবির্ভাব হচ্ছে। গতবার ঈদের সময়ে সর্বনাশা বাতজ্বর তার সব ঈদ আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। আলসেমি করে অবশ্য গতবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়নি সে।
এবারের ঈদকে ঘিরে আকরামের পরিকল্পনা অনেক। এক ডজন বন্ধুকে ইনভাইট করেছে, যাদের সাথে সে এই দিনে তুমুল আড্ডার শিরোমণি হবে বলে আগেভাগে সব প্রস্তুতিপর্ব সমাধা করেছে। কিন্তু শরীরের যে মতিগতি, মনে হচ্ছে বাতজ্বর এবারও তাকে কাবু করে ফেলবে। না, গতবারের মতো হেলাফেলা করে এবারও বাতজ্বরকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না। ডাক্তারের কাছে গিয়ে ভালো চিকিৎসা করে বাতজ্বরের চৌদ্দগোষ্ঠী দমন করতে হবে।
২.
সন্ধ্যায় ডাক্তার সোহরাবের চেম্বারে রোগীর পরিচয়ে এসে আকরাম প্রথম যে কথাটি বলল, তা হলোÑ ‘দোহাই, ইঞ্জেকশন দিয়েন না।’
মৃদু হেসে ডাক্তার বললেন, ‘ক্যাপসুল দিই তাহলে?’
আপত্তির সুরে আকরাম বলল, ‘ওটা তো গলা দিয়ে নামে না। বমি আসে। অন্য কিছু দেয়া যায় না?’
কী যেনো ভেবে ডাক্তার তারপর প্রেসক্রিপশনে কিছু একটা লিখে দিলেন।
সেই প্রেসক্রিপশন পড়ে ফার্মেসি কর্মকর্তা বললেন, ‘শুধু সাপোজিটার দিয়েছেন।’
শুনে আকরাম মনে মনে বলে, ‘যাক বাবা, বাঁচা গেলো।’
ন্যায্যমূল্যে সাপোজিটার কিনে বাড়িমুখি হতেই আকরাম আবিষ্কার করলো আজ কোনো যানবাহন নেই। তাই সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো।
ব্যথায় সারা শরীর ফেটে যাচ্ছে আকরামের। মনে হচ্ছে এখন একটা সাপোজিটার ব্যবহার করতে পারলে ব্যথা কিছুটা নিরাময় হতে পারত। কিন্তু চলার পথে এই সময়ে সাপোজিটার ব্যবহার করবে কিভাবে! আবার ব্যবহার না করেও উপায় নেই। কিন্তু সাপোজিটার ব্যবহারের বেলায় হঠাৎ কেউ যদি টর্চলাইট মারে, তবে যে মান ইজ্জতের তেরোটা বাজবে। আকরাম এসব যতই ভাবে, ততই তার ব্যথার গতি বাড়ছে। না, সাপোজিটারটা ব্যবহার করতেই হবে। ওই তো সামনে খানবাড়ি। খানবাড়ির আমিন চাচা এবার কোরবানির গরুর ব্যবসা করবেন বলে দুই ডজন গরু কিনেছেন। গরুগুলোর জন্য খানবাড়ির সামনে বিশাল গোয়াল বানানো হয়েছে। সেই গোয়াল ঘরের পেছনে গিয়ে একটা সাপোজিটার ব্যবহার না করা ছাড়া আর উপায় নেই।
ভাবতে ভাবতে আকরাম খানবাড়ির সামনের গোয়াল ঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে সাপোজিটার খুলে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে কেউ আড়াল থেকে দেখছে কি না! তারপর...
তারপর কোনো কিছু না বোঝার আগে আকরামের চার পাশ ঘিরে ধরে কয়েকটি ছেলে।
Ñইয়ে, তোমরা কারা?
Ñআমরা তোমার যম। শালা, গরু চুরি করতে এখানে ঢুকেছিস? ভেবেছিস কেউ দেখবে না?
Ñকী বলছো, আমি গরু চুরি করতে আসিনি।
Ñওই শালা, হাতেনাতে ধরলাম, তবু অস্বীকার যাচ্ছিস?
ছেলেগুলো ততক্ষণে আকরামের পিঠে কয়েক দফা কিলঘুষি বসিয়ে দিয়েছে। আকরাম কাতর কণ্ঠে বলল, ‘কসম আমি চোর না। আমি সাপোজিটার ব্যবহার করতে এখানে এসেছি। এই দেখো, আমার হাতে সাপোজিটার।’
ছেলেগুলো মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দেখে সত্যি সত্যি আকরামের হাতে সাপোজিটার দেখা যাচ্ছে।
Ñসত্যি তুমি কোরবানির গরু চুরি করতে আসোনি?
Ñনা ভাই। বিশ্বাস করো।
তারপর ছেলেগুলো কী যেন ভেবে নত কণ্ঠে বলল, ‘ঠিক আছে, আমরা সরে যাচ্ছি, তুমি কাজ সেরে বিদায় হও। যে-কেউ তোমাকে এভাবে দেখলে গরুচোর ভেবে সন্দেহ করবে।’
আকরাম সাপোজিটার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বাতজ্বরের পাশাপাশি ছেলেগুলোর কিল ঘুষি খেয়ে তার ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।


আরো সংবাদ



premium cement