২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তোমার বাড়ি যাবো

-

রানা আর আমার জন্ম একই মাসে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের জন্ম হলেও রানা আমার সাত বছরের ছোট। দেখতে ভীষণ কিউট এই ছেলের সাথে ফেসবুকে পরিচয় আমার। ভার্চুয়াল এই জগতে খুব খাতির আমাদের। পরম বন্ধুও বলা যেতে পারে।
রানার বাড়ি দুয়ারিপাড়া। দুয়ারিপাড়া আমি চিনি। আমার বাড়ি থেকে দুয়ারিপাড়ার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। ওদিকে আমাদের খুব একটা যাতায়াত নেই। সেই কবে কখন গেছি, জানা নেই।
রানা প্রায়ই আমার সাথে দেখা করতে আসে। খালি হাতে নয়, দুনিয়ার গিফট নিয়ে প্রতিবার সে আমার সামনে হাজির হয়। পরিচয়ের প্রথম দিকে গল্পে গল্পে জেনেছি রানারা খুব একটা অর্থশালী নয়। পারিবারিক টানাপড়েন আর আর্থিক সঙ্কট ওদের বরাবরই। তাই আমার সাথে দেখা করতে আসার বেলায় এত পদের গিফট আনাটা আমি কখনো সাপোর্ট করি না। এমনিতেও স্টুডেন্ট মানুষ, পয়সা খরচ করে গিফট কেনার কোনো মানে হয় না।
অনেকদিন থেকে রানার আবদার, ‘ভাইয়া, একদিন আমাদের বাড়ি আসেন।’
যখনই রানা এ আবদার করে, ম্লান হেসে বলি, ‘যাবো। একদিন যাবো তোমার বাড়ি।’

২. শেষ পর্যন্ত রানার অনুরোধ রক্ষা করে আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছি। দুপুরের দিকে পৌঁছি দুয়ারিপাড়া বাজারে। বাজার থেকে রানার জন্য কিছু গিফট কিনে ফল দোকানে গেলাম ফলফলাদি কিনতে। জানি ফলে ফরমালিন মেশানো থাকে, তার পরও পাঁচ কেজি আপেল কিনলাম। ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে জেনেছি রানা আপেল বড় ভালোবাসে।
পাঁচ কেজি আপেল কিনেছি, তার পরও বিক্রেতা ইয়াং ছেলেটি টাকা কম রাখতে অনীহা প্রকাশ করেছে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বুঝলাম এই বেটা উগ্র মেজাজের। কথা বাড়িয়ে অযথা ক্যাঁচাল করার দরকার নেই। টাকা পরিশোধ করে এখান থেকে প্রস্থান করলেই হয়! টাকা দিতে গিয়ে মাথায় কুবুদ্ধি আসে। এই বেটা আমার সাথে এমন অসভ্য আচরণ করেছে কেন, এর একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। মানিব্যাগ খুলে ন্যায্য মূল্য থেকে একশত টাকা কম দিয়ে বললাম, ‘এই নেন টাকা। এখানে একশত টাকা কম আছে, আমার কাছে টাকা শেষ। ওই যে কাপড়ের দোকান দেখছেন, ওখানে আমার বাবা আছেন, তার কাছ থেকে এক শ’ টাকা নিয়ে আসি?’
বিক্রেতা আমার দিকে তাকিয়ে কী যেন ভেবে তারপর বলল, ‘ঠিক আছে নিয়ে আসেন।’
কাপড়ের দোকানের সামনে এসে ফল দোকানের দিকে তাকাই। হারামজাদার আমার দিকে নজর নেই। অন্য কাস্টমারের সাথে কমলার দরকষাকষিতে মগ্ন, সুযোগ এখনই। হারামজাদার অগোচরে এখান থেকে পালাতে হবে।

৩. রানার বলে দেয়া ঠিকানানুসারে ওদের বাড়িতে এলাম। আমার আগমনে ওরা সবাই এত খুশি হবে ভাবিনি। রানার বাবা আমার সাথে এমনভাবে গল্প জুড়ে দিলেন, যেন আমায় অনেক আগে থেকে চেনেন। বড় যতœ করে শরবত বানালেন রানার মা। রানার মায়ের সাথে আমার বড়চাচীর চেহারার এক আশ্চর্য মিল।
দুপুরে খেতে বসেছি। এত পদের খাবারের আয়োজন দেখে আমি মুগ্ধ। আমরা খাচ্ছি, হঠাৎ কে যেন বাসায় এলো।
যে এসেছে, তাকে দেখে আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। রানা বলল, ‘উনি আমার বড় ভাই। নাম ফখরুল। বাজারে ফলের ব্যবসা করেন।’
আমি ফখরুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনিও আমার দিকে।
Ñএই আপনি না আমার দোকান থেকে আপেল কিনে এক শ’ টাকা দিয়ে যাবেন বলে পালিয়ে গেছেন? কত খুঁজেছি আপনাকে।
Ñইয়ে মানে...
Ñআপনি এখানে কেন?
Ñনা মানে...
রানা, রানার বাবা-মায়ের সামনে আমার লজ্জায় মাথা কাটা পড়ে।
Ñভাইয়া, তুমি ভুল দেখছ।
Ñনা রানা, এই লোকই আমার এক শ’ টাকা মেরে হাওয়া হয়ে গেছে।
ইজ্জত বাঁচাতে মাঝে মাঝে মিথ্যে বলতে হয়। তাই ঘটনা অস্বীকার করে বললাম, ‘আপনি ভুল দেখছেন ভাই। আমি আপনার দোকানে যাইনি।’
হারামজাদা টেবিলের ওপর থেকে আপেলের প্যাকেট এনে বলল, ‘এই তো, এগুলোই তো আমার দোকান থেকে কিনেছেন।’ হাতেনাতে ধরা পড়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমি আবারো লজ্জা পেলাম।

 


আরো সংবাদ



premium cement