১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইঁদুর প্রেমে বিড়াল-দৌড়

-

বেশ ভালোই জমে উঠেছে আমার আর নাদিয়ার ইঁদুর-বিড়াল দৌড় খেলা। আমার ইঁদুরমুখী স্বভাবের কারণে আমার বউ সারাণ বিড়াল পায়ে ওঁৎ পেতে থাকে। আমিও নাছোড়বান্দা। সব সময় সতর্ক সাবধান থাকি। কিন্তু কথায় আছে, ‘সাত দিন চোরের এক দিন গেরস্থের’। সেই অনেক কথা। যাক সে প্রসঙ্গে আরো একটু পরে আসছি।
আমি যে তলে তলে সিএনজি (পরকীয়া) চালাই, সেটা আমার বউ নাদিয়া ঘুণারেও জানতে বা বুঝতে পারেনি। অবশ্য জানবে কোত্থেকে? ও তো দুনিয়াদারির খোঁজখবর খুব একটা রাখে না। বিয়ের বয়স হলো তিন বছর। অথচ ভেতরে ভেতরে আমি প্রেম করি ডজনখানেকের ওপরে। এটা আমার এক ধরনের বিকৃত ফ্যান্টাসি বলা যায়। নাদিয়া একটু মোটাসোটা ও বোকা প্রকৃতির হলেও আমি কিন্তু আবার বুদ্ধির সাগর। বুদ্ধির ঠ্যালায় টেকা দুষ্কর। এখানে ভাটার কোনো চান্স নেই, মুহুর্মুহু জোয়ারের ঠ্যালায় সারাণ খৈর মতো ফুটতে থাকে ইঁদুর বুদ্ধি। শুধু ইঁদুরের মতো কুটকুট শব্দ। আমি অবশ্য এসবকে বুদ্ধি বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও নাদিয়া আবার এসবের স্বীকৃতি দিতে চাইত না। বরাবরই ঘোর অস্বীকৃতি জানাত বরং আমার মুখের ওপর শপাং করে বলে বসত, ‘ধুর! এসব বুদ্ধি না ছাই যত্তসব কুবুদ্ধি!’
বউয়ের এসব কথা আমাকে ভেতরে ভেতরে কিঞ্চিৎ আহত ও হতাশ করলেও মনে মনে এটাও ভাবি কথাটা একেবারে যে অমূলক, তা নয়। আমার স্বভাব চরিত্র অতটা ধোয়া তুলসী পাতার মতো নয়। সুযোগ পেলেই আমি মারাত্মক অসভ্যতা ও নোংরামিতে মেতে উঠি। মেয়েদের সাথে অযথা প্যাঁচাল পাড়ি। মেয়েরাও আমার সাথে খেজুরে আলাপে উদগ্রীব থাকে। দেখতেও আমি বেশ হ্যান্ডসাম, নায়কোচিত। কেউ কেউ আমার সুন্দর সুন্দর মায়াবী কথার জালে আটকা পড়ে, কেউবা টুপ করে গিলে ফেলে আমার প্রেমের ছিপ। ব্যস আমার জগৎ দিব্যি কাটছে রঙ্গরসে ও হাসি তামাশায়। তবে আমি ভাবছি অন্য কথা! ইদানীং আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নাদিয়ার বুদ্ধি শুদ্ধি একটু প্রশস্ত হয়েছে। কেমন জানি আমাকে বিড়াল পায়ে পাহারা দিচ্ছে! ভাবগতি এমন, আমি যেন একটা মস্ত বড় ইঁদুর, সারাণ ও তক্কেতক্কে থাকে, সুযোগ ফেলে শাঁ করে ঘাড় মটকে ধরবে! তারপর কেল্লাফতে। দিনভর সন্দেহের চোখে চোখে রাখছে। যদিও এখনতক মুখে সে রকম কিছু বলেনি। ইঁদুরকে জাস্ট হাতেনাতে ধরার অপোয়। আমিও আগের মতো অন্য মেয়েদের সাথে নিশ্চিন্তে ভাব ভালোবাসা করতে পারি না। এমনকি মনের সুখে পারি না রাত জেগে ফেসবুকিং করতে। একজোড়া চোখ আমাকে সর্বণ ফলো করতে থাকে। এটা আমি বুঝতে পারি, কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকি সব সময়। ভাবখানা এমন, যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানি না। অথচ কিছু দিন আগ পর্যন্ত বউ ভুস ভুস করে নাক ডেকে ঘুমাত, আর আমি ননস্টপ ফোনে, মেসেঞ্জারে চ্যাটাংচ্যাটাং চ্যাটিং বা কথাবার্তা চালিয়ে যেতাম। বোকা-সোকা বউটি আগুপিছু কিচ্ছু বুঝতে পারত না। এই তো গত দুই সপ্তাহ আগের কথা, রাত ১২টার সময় হঠাৎ করে গার্লফ্রেন্ড অবন্তীর ফোন আসে। যদিও আমার মোবাইলে ভাইব্রেশন করা থাকে বেশির ভাগ সময়। আমি সানন্দে ফোন রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে ভেসে আছে একটি মিষ্টি মধুর সুরেলা মেয়েলি কণ্ঠ।
‘হ্যালো সোহেল! ঘুমিয়ে পড়েছ নাকি?’
‘আরে না, ঘুমিয়ে পড়লে ফোন রিসিভ করলাম কিভাবে?’
‘ও তাই তো! তোমার মোটকু বউটার কী খবর?’
‘আরে ওর কথা আর বলো না, তুমি কোনো প্রকার শব্দ শুনতে পাচ্ছ না?’
‘পাচ্ছি তো। কেমন জানি একটা অদ্ভুত পিকুলিয়ার শব্দ। কিসের শব্দ ওটা?’
‘হাঁ হাঁ হাঁ... আমার বউর ভুস ভুস করে নাক ডাকার শব্দ!’
‘বলো কী’!
‘তবে আর বলছি কী! এটাই সত্যি।’
‘ওম্মা কও কী? তুমি কিভাবে ওর সাথে সংসার করো? চোখ থেকেও তুমি একটা আস্ত অন্ধ। আমার মতো একটি লাস্যময়ী সুন্দরী রূপসীকে তুমি দেখতে পাচ্ছ না?’
এরই মধ্যে রুপা ফোন দিচ্ছে বারবার। আমি অবন্তীকে কোনোমতে ম্যানেজ করে রুপার ফোন রিসিভ করি। রুপাকে ম্যানেজ করে নিপাকে, তারপর সোমা ও নাদিয়াকে। কথা চলে ননস্টপ। গভীর রাত পর্যন্ত। তারপরও ওয়েটিং লিস্টে থাকে আরো কয়েকজন। এভাবে প্রায় অর্ধরাতভর চলতে থাকে আমার তথাকথিত প্রেমিকাদের সাথে ভাব ভালোবাসা। এদের মধ্য অবন্তী আর নিপা ছাড়া বাকি প্রায় সবাই জানে আমি ব্যাচেলর। এখনো বিয়েটিয়ে করার ফুরসত হয়নি। মূলত পেজগিটা বাধে আমার ছোট শ্যালিকা টুম্পা যখন বেড়াতে আসে তখন। একদিন রাতে অবন্তীর সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতার সময় শ্যালিকার হাতে খপ করে ধরা পড়ে যাই। টুম্পা পাশের রুমে শুয়েছিল। সে আমার প্রেমিকাদের সাথে টেলি কনফারেন্সের সব কথাই রাতভর শুনেছে। হঠাৎ টুম্পা আমাকে উদ্দেশ করে বলে, ‘কী ব্যাপার দুলাভাই! কেসটা তো সুবিধার মনে হচ্ছে না!’
ব্যস তার পর থেকে আমার বউটি আমাকে ঘোর সন্দেহ আর অবিশ্বাসের চোখে দেখতে থাকে। বোকা মানুষের একটু বুদ্ধি হলে যা হয় আরকি! এক লাফে মগডালে চড়ে বসে! উঠতে বসতে কৈফিয়ত আর কৈফিয়ত! রাতে প্রকৃতির ডাকে বের হওয়ারও জো নেই। কিছুণ পর দেখি, পেছন পেছন নাদিয়া কোমর বেঁধে হাজির! বাথরুম থেকে আমার বের হতে একটু দেরি হতে দেখলে হুঙ্কার ছাড়ে!
‘এই কই তুমি? এতণ বাথরুমে বসে বসে কী বদ ধান্ধা করছ?’
আমি চমকে উঠি! মনে মনে ভাবি, সেকি! নাদিয়া তো ঘুমেছিল, মাগার এখানে এলো কেমনে? অগত্যা কোনো মতে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলি, ‘জান পাখি, এই তো আমি এখানে আছি। একটু হিসাব-নিকাশ বিস্তর বাকি রয়েছে। তুমি যাও, আমি এুনি আসছি সোনা! এই খবরদার! এুনি বের হও। রাত জেগে প্যাঁচাল পাড়ো কার সাথে? ভাবছ আমি কিচ্ছু বুঝি না? ফিডার খাই? খবরদার, মোবাইল আমি কমোডে চালান করে দেবো, কথা দিলাম!’
ভ্রু কুঁচকে তাকাই আমি! এসব কয় কি নাদিয়া? কথা না বাড়িয়ে আমি দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। বউ আমাকে হাতে ধরে এক প্রকার টেনেহিঁচড়ে রুমে নিয়ে যায়।
সাাৎ সাধু সন্ন্যাসীর মতো বউয়ের পাশে গিয়ে আমিও ইঁদুরের মতো ঘাপটি মেরে থাকি। মুখে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ করি না। ভাবছি, নাদিয়ার সন্দেহটা কিভাবে দূর করা যায়। যা হোক যেই ভাবা সেই কাজ। মনে মনে একটা সুন্দর প্ল্যান ফাইনাল করে ফেলি। পর দিন বউ নাদিয়াকে কিছু না বলে, বাসা থেকে হুট করে বেরিয়ে পড়ি শপিং করতে। শহরের একটি বিপণিবিতানে গিয়ে নাদিয়ার জন্য কিছু দামি শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ ও প্রসাধনী ইচ্ছামতো কিনে নিই। বাসায় ফেরার পথে একজোড়া লাল গোলাপও কিনতে ভুল করিনি। বাসায় ঢুকতেই দেখি নাদিয়া কলতলায় গোসল করছে। আমিও কিছু না বলে নাদিয়াকে চমকে দেয়ার উদ্দেশ্যে অপো করতে লাগলাম। এরই মধ্যে আমার আরেক গার্লফ্রেন্ড সোমার বিরক্তিহীন কল আসতে শুরু করে। আমাকেও শয়তানে নাড়াচাড়া করতে থাকে। নাদিয়ার আসার একটু লেট দেখে আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটু বেরিয়ে পড়ি। প্রায় মিনিট বিশেক কথা বলার পর পেছনে তাকিয়ে দেখি, নাদিয়া আগুন চোখে তাকিয়ে রয়েছে! খাইছেরে... তবে কি নাদিয়া সবকিছু শুনে ফেলেছে! এভাবে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যাবো, ভাবতেও পারিনি। শেষ পর্যন্ত তাহলে বিড়ালের হাতে ইঁদুর ধরা পড়ে গেল!
‘এই, তুমি এখানে তলে তলে সিএনজি চালাও! কত দিন ধরে এটা চলছে? ভেবেছ আমি কিচ্ছু বুঝি না। ন্যাকা, বোকা ষষ্ঠী? তবে টুম্পার কথাই তো তাহলে পুরো সত্যি!’
আমার মুখে কোনো রা নেই। করাত কলে আটকা পড়া ইঁদুরের আবার কিসের কথা। কোনো মতে আমতা আমতা করে বলি, ‘সোনা বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে সত্যি সত্যি খুব ভালোবাসি। তোমার জন্য আজ স্পেশাল গিফট নিয়ে এসেছি।’
‘চুপ একদম চুপ! খবরদার! কোনো কথা বলবে না। একদম সাইজ করে ফালামু!’
নাদিয়ার বিশাল সাইজের শরীরের কথা ভেবে ভয়ে আমি ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাই। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কোনো প্রকার টলতে টলতে বাসায় গিয়ে ঢুকি। নাদিয়াও বিশাল সাইজের শরীর নিয়ে আমার পিছু পিছু আসে। রুমে ঢুকে দেখি শাড়ি কাপড় ও প্রসাধনীগুলো এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পুরো ঘরময়। এখানেও আমাকে আরেক প্রস্থ হুঙ্কার ছাড়ে নাদিয়া।
‘এই লম্পট! তলে তলে তাহলে এগুলো বিলিবণ্টন করে বেড়াচ্ছ? গাঁটের পয়সা এভাবে নষ্ট করছ?’
আমি অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে থাকি। কিছু বলার মতো মুখ নেই আমার। আমার অবস্থাও হয়েছে মিথ্যাবাদী রাখালের মতো। আমার কোনো কথা থাকতে পারে না। আজ নাদিয়ার কথা বলার দিন। এই দিনটির জন্যই তো সে দীর্ঘ দিন তক্কেতক্কে ছিল। আমি মুখ বুজে হজম করতে থাকি নাদিয়ার মুখনিঃসৃত একের পর এক উত্তপ্ত বাক্য। একই সাথে অবসান হলো আমার আর নাদিয়ার তথাকথিত ইঁদুর প্রেমে বিড়াল দৌড় দৌড় খেলা! হ


আরো সংবাদ



premium cement
ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প পেনাল্টিতে সাফল্য রিয়ালের জয়ের মানসিকতার প্রমাণ কিমিচের একমাত্র গোলে আর্সেনালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন বিরোধী দলকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার : ড. মঈন খান মোস্তাফিজের বিকল্প ভাবছে চেন্নাই, দলে ভিড়িয়েছে এক ইংলিশ পেসার

সকল