২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুপ্তধন

-

বিস্তৃত জায়গাজুড়ে আমাদের বাড়িটি সেই ব্রিটিশ আমলের। কাঠের পাটাতনে চুন সুরকিতে তৈরি এই বিশাল বাড়িটি নিয়ে আজো চালু আছে নানা মিথ, বিচিত্র রূপকথা এবং নানা ভৌতিক গল্প!
আমাদের ছোটবেলাটাও তাই কেটেছে রহস্যে ভরা এই বাড়িটির প্রতিটি রুমে রুমে মূল্যবান জিনিসপত্রের খোঁজে, প্রতিটি কুঠুরিতে লুকোচুরি খেলে!
আংশিক দ্বিতল বাড়ির চতুর্দিকে প্রাচীর ঘেরা ছিল। মাঝখানে পাকা উঠোনে চলত নানা উৎসব পার্বণ। সাপখোপে ভরা ছিল প্রতিটি অলিগলি!
বাড়ির একপাশে ছিল বড় বড় মটকা! সেগুলোতে গৃহস্থ বাড়ির ধান রাখা হতো। তবে বিশেষ কয়েকটি মটকা ছিল যেগুলোতে গাছে উৎপাদিত ফলফলাদি জাগ দেয়া হতো! সেখানে আম, কাঁঠাল, কলা পাকলে আমরা ছোটরা খুব সহজেই সেগুলোর ভেতরে ঢুকে পাকা ফল উদ্ধার করতে পারতাম। সেই সময় সেই প্রতিটি মটকাকে আমাদের মনে হতো এক একটি গুপ্তধনের ভাণ্ডার! আম কাঁঠালের সিজন এলেই আমরা সর্বদা এই গুপ্তভাণ্ডারের আশপাশে ঘুরঘুর করতাম! সে যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসি! একদা আমার দাদাজান, যিনি এই বাড়ির মালিক তিনি প্রায় প্রতি রাতেই স্বপ্নে দেখতে লাগলেন যে, এই বাড়ির সিঁড়িকোটার নিচে যেখানে বালুর বস্তা রাখা আছে, সেখানে কাঁড়ি কাঁড়ি গুপ্তধন সঞ্চিত আছে! এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে তিনি যখন অতিষ্ঠ, কান্ত; তখন সহ্য করতে না পেরে জরুরি ভিত্তিতে একদিন তিনি আমাদের দুই ভাইকে ডাকলেন। হাতে দুটি কোদাল ধরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে বললেন, ভাইয়েরা আমার, আমরা আজ এবং এুনি একটি বিশেষ অভিযানে নামছি! গুপ্তধন উদঘাটনের অভিযান! ঠিক এই জায়গায় এইখানেই অঢেল গুপ্তধন আছে! এই নাও খোন্তা-কোদাল! এবার তোমরা কোপাও! কোপাইয়া ফালা ফালা কইরা ফালাও!
যেহেতু তিনি বয়স্ক মুরুব্বি তাই আমরাও তার স্বপ্নে পাওয়া গুপ্তধন সংবাদকে ১০০ শতাংশ বিশ্বাস করলাম! গুপ্তধনের আশায় এদিকে আমরা দুই ভাই সমানে কোপাতে লাগলাম! কোপাতে কোপাতে এক সময় আমরা কান্ত হয়ে ছন্দ ও উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। কোমরে হাত দিয়েও কোমর সোজা করতে পারছিলাম না।
ওদিকে মানুষসমান গর্ত করেও যখন কোনো গুপ্তধন মিলছে না, তখন দাদাজানকে বললাম, ও দাদাজান! তুমি কি স্বপ্নে দেখলা? গুপ্তধন তো দূরের কথা; একখান চাঁড়াও তো মিলছে না!
অগত্যা দাদাজান সেদিনের মতো আমাদের উদ্ধার অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু আশা ছাড়লেন না! শেষে নিরাপত্তাস্বরূপ কয়েকটি ঘন কাঁটাযুক্ত মান্দার গাছের ডাল দিয়ে জায়গাটি ঢেকে রাখলেন!
পরদিন আমরা আবার সকাল সকাল স্বউৎসাহে খোঁড়াখুঁড়ি, কোপাকোপি শুরু করলাম। দিন শেষে অবশেষে ভাগ্য এসে ধরা দিলো মনে হয়! ইউরেকা ইউরেকা বলে আমরা চিৎকার করে উঠলাম। ওই দিকে দাদাজান আমাদের ধীরলয়ে ধমকাতে লাগলেন। এই চুপ কর, চুপ কর! মানুষজন জেনে যাবে তো! আহ! কী সুন্দর মুখ আটকানো একটি পিতলের কলসি! না জানি কত হীরা জহরত আর মণিমুক্তা লুকিয়ে আছে এতে! তড়িঘড়ি করে দাদাজান সেটির মুখ পরিষ্কার করতে লাগলেন! কিন্তু হায়! হায়! তাতে সোনাদানা, হীরা জহরত কিছুই নেই! মুখ অংশে শুধু লালমাটি এবং সবশেষ অংশে দেখা গেল চা পাতাসদৃশ গুঁড়া গুঁড়া কালো মিহি দানার মতো বস্তুবিশেষ! সাথে বিকট দুর্গন্ধ! কে বলবে, সেগুলো হয়তো সেই প্রাচীনকালের রাজা বাদশাহদের মলমূত্রের শুকনা বিষ্ঠার কিছু অংশ! মনে মনে হাসি আর বলি, আহারে! কী সুদূরপ্রসারী চিন্তাশীল আর বুদ্ধিমান ছিলেন তারা! তারাও হয়তো জানতেন, এককালে এই বাড়িতেই অবস্থানরত কিছু আহাম্মক, নির্বোধ এবং উল্লুকা পাটঠে শ্রেণীর মানুষরা একটি হুদাই কাল্পনিক এবং স্বপ্নে পাওয়া অবাস্তব ও ভুয়া বিষয়কে নিয়ে এমন লাফালাফি মাতামাতি করবে! হ

 


আরো সংবাদ



premium cement