১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেই অবাধ্য মেয়ের কাণ্ড

সেই অবাধ্য মেয়ের কাণ্ড - ছবি : সংগৃহীত

দু’বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন। ছুরিকাহত হয়ে কেরিয়ার শেষ হতে পারত। হতে দেননি চেক টেনিস তারকা পেত্রা কিতোভা।

সালটা ১৯৯৩। পিঠে ৯ ইঞ্চির ছুরি গেঁথে দিয়েছিল জনৈক ব্যক্তি। হামবুর্গে কোর্টের মধ্যেই!‌ সেরা ফর্মের মনিকা সেলেস দু’‌বছর কোর্টেই ফিরতে পারেননি। ফেরার পর আরো একটা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের সেই বিধ্বংসী ফর্ম ফিরে পাননি।

সালটা ২০১৬। ক্রিসমাসের আগে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রোসতেজভে নিজের বাড়িতে আক্রান্ত হলেন পেত্রা কিতোভা। ডাকাতির জন্য তার বাড়িতে হানা দিয়েছিল এক দুষ্কৃতিকারী। ছুরি–হাতে। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন কিতোভা। দুষ্কৃতিকারীর ধারালো ছুরিতে রক্তাক্ত হলো বাঁ–হাতের চার–চারটে আঙুল।
বাঁ–হাতের মুঠোয় ধরা র‌্যাকেট থেকেই তার বৈচিত্র্যময় গ্রাউন্ডস্ট্রোক আছড়ে পড়ত বিপক্ষের কোর্টে। এরপর কি আর সেই বাঁ–হাত আবার র‌্যাকেট ধরতে পারবে তার?‌ গোটা টেনিসবিশ্ব জুড়ে প্রশ্নটা উঠেছিল সেইসময়। প্রবলভাবে।

এতটাই গভীর ছিল ছুরিকাঘাত, যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিতোভার টেন্ডন আর স্নায়ু। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার হয়েছিল কিতোভার বাঁ–হাতে। মনে হয়েছিল, তার কোর্টে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। যদি আদৌ ফিরতে পারেন। কিন্তু পেত্রা কিতোভা অন্যরকম ভেবেছিলেন। অস্ত্রোপচারের পর টানা ছয় মাসের রিহ্যাব। ২০১৭ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনেই কামব্যাক। এবার অন্য প্রশ্ন উঠল। ফিরলেন তো কোর্টে। কিন্তু থিতু হতে পারবেন কি ২০১১ এবং ২০১৪ সালের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন?‌ নিজেকে আবার চেনাতে পারবেন আগের মতো?‌

সময় গড়িয়েছে। পেশাদার সার্কিটে একটু একটু করে পায়ের তলার জমি শক্ত করেছেন কিতোভা। লড়াইয়ের রসদ সঞ্চয় করে রেখেছেন। অবশেষে আবার তার প্রতিভার বারুদে আঁচ লাগল। জ্বলে উঠলেন সদ্যসমাপ্ত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। তার ওপর হামলাকারী এখনো ধরা পড়েনি। কিন্তু বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল পর্যন্ত অব্যাহত থেকেছে তার অগ্রগতি। শেষরক্ষা হয়নি। দাপটের সঙ্গে ফাইনালে পৌঁছেও প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফাইনালে হেরেছেন জাপানের নাওমি ওসাকার কাছে। তবু এই প্রত্যাবর্তন টেনিস ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায়ে অনায়াসে জায়গা পেয়ে গেছে।

দুষ্কৃতিকারীর হামলার পর বেঁচে যাওয়াটাই আশ্চর্যের ছিল কিতোভার কাছে। তখন বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে তার র‌্যাঙ্কিং ১১। লড়াইয়ের সোপান বেয়ে এখন কিতোভা ২ নম্বরে। অবশ্য ২০১১–র অক্টোবরেও মহিলা সিঙ্গল্‌স র‌্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বরে পৌঁছেছিলেন তিনি।

এখনো সেই বাঁ–হাতেই র‌্যাকেটটা শক্ত করে ধরেন। কোর্টে নিজেকে উজাড় করে দেন। তবু কিতোভার উপলব্ধি, হাতটা ১০০ শতাংশ স্বাভাবিক হয়নি। হবেও না। অবশ্য তাতে আক্ষেপ নেই মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে আদর্শ করে বেড়ে ওঠা আঠাশের কন্যার। সেমিফাইনালে উঠে প্রাক্তন টেনিস তারকা, অধুনা কমেন্টেটর জিম কুরিয়রের সেই হামলা পরবর্তী লড়াইয়ের প্রশ্ন শুনে কান্নায় গলা বুজে এসেছিল তার। সেই তিনিই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হেরে বলেছেন, ‘‌এখানেই সব শেষ হয়ে গেল, তা নয়। আবার ফিরে আসব।’

স্কুলশিক্ষক বাবাই ছোট্ট কিতোভাকে টেনিসে উৎসাহিত করেন। পেশাদার টেনিসে আগমন ২০০৬ সালে। এখনও পর্যন্ত সিঙ্গলসে ফাইনালে উঠেছেন ৩৩ বার। ২৬টিতেই চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬ সালটা কিতোভার জীবনে ঘটনাবহুল। রিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়। চেক সতীর্থদের নিয়ে জয় ফেড কাপে (‌মোট জয়ের সংখ্যা ৬)‌। বছর শেষের আগে ছুরিকাহত। তার আগে কিতোভাকে কাঁদিয়েছিল মানসিক যন্ত্রণাও। ২০১৬ সালেই ভেঙে গিয়েছিল জাতীয় আইস হকি দলের তারকা রাদেক মেডলের সঙ্গে সম্পর্ক। ২০১৪ সালে ডেটিং শুরু। পরের বছর ডিসেম্বরে চেক মিডিয়া জানিয়ে দেয়, এনগেজমেন্ট সেরে ফেলেছেন তাঁরা। যার সত্যতাও স্বীকার করে নেন যুগলে। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি সম্পর্কটা। সেই ধাক্কাই কি তাকে মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী করে দিয়েছিল? নইলে ‌সারা দুনিয়ার সন্দেহাকুল মন যখন বলছিল এক কথা, তখন অধুনা ছিপছিপে টেনিস–কন্যার হৃদয় কেন অবাধ্য হল?

গত বছর চারটে গ্র্যান্ড স্লামেই তৃতীয় রাউন্ডের বেশি এগোতে পারেননি। গত বছরই তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন মনিকা সেলেস। সাক্ষাতের পর কিতোভা বলেছিলেন, তিনি সম্মানিত।
কামব্যাকের প্রেরণা কি মনিকা সেলেসই দিয়েছিলেন পেত্রা কিতোভাকে?‌ ‌‌

 


আরো সংবাদ



premium cement