২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাবাকে হাসপাতালে রেখে ফেরার পথে মাঝরাতে তরুণীকে অপহরণ

অপহরণের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি আটক করা হয় - ছবি : নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজারে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে ফেরার পথে অপহৃত হয়েছেন এক তরুণী (১৮)। দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে একটি চা বাগান থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। এ ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি আটক করা গেলেও পালিয়ে গেছে চার অপহরণকারী।

জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে অসুস্থ বাবাকে রেখে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে নবীগঞ্জ উপজেলার রামলোহ গ্রামের ওই তরুণী শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায় নানার বাড়ি যাচ্ছিলেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে রওয়ানা হওয়ার কিছু সময় পর মেয়েটির নম্বর থেকে হাসপাতালে থাকা তার মামা জহিরুল ইসলামের কাছে কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে ভাগ্নির কন্ঠে- ‘আমাকে বাঁচাও, ড্রাইভার আমাকে নামিয়ে দিচ্ছে না, আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে’- এসব বলে চিৎকার করতে থাকে তরুণী। এ সময় মামাকে লাইনে রেখেই মেয়েটা চালককে আকুতি করে বলতে থাকে- ‘আল্লাহর দোহাই আমাকে নামিয়ে দেন, আমার আব্বা হাসপাতালে মারা যাবে যদি আমার কিছু হয়’। এর পরপর লাইন কেটে যায় এবং মেয়েটির নম্বর বন্ধ হয়ে যায়।

পরে মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের এক সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রাত ৪টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় দেওড়াচরা চা বাগান থেকে মেয়েটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় গাড়িটি আটক করা গেলেও চারজন অপহরণকারী পালিয়ে যায়।

ঘটনার বিবরণে ওই তরুণীর মামা জহিরুল বলেন, তার বোন জামাইয়ের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর এলাকার রামলোহ গ্রামে এবং তার বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায়। বোনজামাই (তরুণীর বাবা) খুব অসুস্থ তাই দুই দিন আগে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বোন জামাইয়ের সাথে তার ভাগ্নিও হাসপাতালে ছিলো। শনিবার রাতে ক্লান্ত ভাগ্নিকে নিজের বাড়িতে (ভৈরব বাজারে) চলে যেতে বলেন জহিরুল। রাত দশটার দিকে ভাগ্নিকে একটি গাড়িতে তুলে দেয়ার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের গেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এমন সময় একটি প্রাইভেটকার আসে। প্রাইভেটকার চালক ভৈরব বাজারের দিকে যাবে বলে জানায়। কারটি থামে এবং ড্রাইভার জানান, তিনি লোকাল যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় গাড়ির পেছনে একজন বসা ছিলেন। ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভাগ্নিকে প্রাইভেটকারে তুলে দিয়ে হাসপাতালে বোন জামাইয়ের কাছে ফিরে যান জহিরুল। কিছু সময় পর মেয়েটির নম্বর থেকে জহিরুলের কাছে কল আসে। তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতি করে এবং এর পরপরই মেয়েটির নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। জহিরুল ইসলাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এমন সময় তার পরিচিত জাগো নিউজের মৌলভীবাজারের প্রতিনিধি রিপন দে’কে ঘটনাটি জানান জহিরুল। পরে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামকে জানান ওই সাংবাদিক। তিনি বিষয়টি জেনে সাথে সাথে ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। মধ্যরাতেই শুরু হয় অভিযান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির ভাগ্য ভালো যে, ঠিক সময় তথ্য পেয়েছিলাম। ঘটনাস্থলের আলামত দেখে বুঝতে পারছি তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তারা চা বাগানে নিয়ে এসেছিল। প্রথমে গাড়িতে দুজন থাকলেও পরে আরো দুজন যুক্ত হয়। চারজন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হয়তো মেরে ফেলত। পুলিশের গাড়ির উপস্থিতি বুঝতে পেরে চার অপরাধী পালিয়েছে তবে প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে।

তিনি আরো জানান, উদ্ধারের পর মেয়েটি জানিয়েছে সে বাঁচার জন্য প্রচুর চিৎকার করেছে, কিন্তু নির্জন স্থান হওয়াতে তা কারো কানে পৌঁছায়নি।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement