২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৌলভীবাজারে কোরবানীর পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে

-

মৌলভীবাজারে কোরবানীর পশুর চামড়া রাস্তায় পঁচে নষ্ট হয়েছে। বিনামূল্যেও নিচ্ছে না কেউ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চামড়া সংগ্রহকারীরা, ছালাই কর্মী ও মাদরাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে কয়েক হাজার চামড়া নদীতে ফেলে দেন তারা। অন্যরা মাটিতে পুঁতে রেখেছেন। রাস্তায় ফেলে রাখা পচাঁ চামড়া অপসারণে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মনু নদীর তীরে গর্ত করে চামড়া মাটি চাপা দিচ্ছে। পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করার কারণে এমনটাই হয়েছে বলে স্থানীয় চামড়া ক্রেতাদের অভিযোগ।

মৌলভীবাজারে অন্যান্য বছর কোরবানী দেয়ার সাথে সাথে চামড়া ব্যবসায়ী বাড়ি বাড়ি হাজির হতো। কখনো চামড়ার অগ্রিম টাকা দিয়ে আসত। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। সাড়া দিন চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মিলেনি। তাই কোরবানীদাতা ও সংগ্রহকারীরা চামড়া বিক্রি করতে না পারায় গ্রাম-গঞ্জ থেকে শহরে নিয়ে আসেন। দিনভর অপেক্ষা করার পর কোনো ব্যবসায়ীর দেখা পাননি রাত পর্যন্ত। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মৌলভীবাজার পৌর বাস র্টামিনালে, রাস্তায় চামড়া ফেলে যান। কেউ কেউ ক্ষোভে বাড়িতেই চামড়া গর্ত করে পুঁতে ফেলেন। ঈদের সারা দিন চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে না পেরে অসহায় হয়ে যান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এতিমখানা ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

শত বছরের পুরাতন বৃহত্তর সিলেটের বড় ব্যবসা কেন্দ্র মৌলভীবাজারের বালিকান্দি যাওয়ার পর সারা দিন ধরে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় নিরুপায় হয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন সংগ্রহকারী এতিমখানা কর্তৃপক্ষসহ কোরবানীদাতারা। যার ফলে প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় লক্ষাধিক চামড়া নষ্ট হয়েছে। এতে বেকার সময় পার করছেন চামড়া শিল্পের প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকারী কয়েক হাজার মৌসুমী শ্রমিক।

বিগত কয়েক বছর যাবত ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বালিকান্দি এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আটকিয়ে রাখার কারণে এবার ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে এমনটাই করেছে। অন্য দিকে সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পর চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়ার মজুরী ও লবণ দিয়ে যে টাকা ব্যয় হয় তাতে তাদের পুষাবেনা বলে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

ঈদের পরের দিন প্রচুর পরিমাণ গরু ও খাসির চামড়া মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনালে জমে আছে। সেখানেও দেখা যায়নি কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা। মঙ্গলবার বিকেলে চামড়াগুলো পঁচে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশংকায় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাটি গর্ত করে চামড়াগুলো পুঁতে ফেলে। এ সময় মৌলভীবাজার পৌরমেয়র ফজলুর রহমান বলেন ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য পৌরবাস র্টামিনালে চামড়া রাখার স্থান দেয়া হয়েছিল। সেখানে এত চামড়া জমা হয়ে ছিল যা ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই চামড়াগুলো নিতে কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবেশ রক্ষার জন্য গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলেছি যা কাম্য নয়। তিনি আরো বলেন, এ রকম ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বালিকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ীরা চামড়া না কেনার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বালিকান্দি গ্রামের চামরা ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, আমরা সবসময় ব্যবসা করি আমার প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিক আটকিয়ে রেখেছে। ট্যানারি মালিকরা আমাদের প্রতিবছর চামড়ার মূল্য ঠিক করে দেয়। কিন্তু আমরা চামড়া ক্রয় করে লবণজাত করার পর তার অর্ধেক দাম আমাদের দেয়। এতে আমাদের লোকসান হয়। তাদের সাথে দরকষাকষি করে আমরা পারি না। যার কারণে কাঁচা চামড়া ক্রয় করতে আগ্রহী নয়। আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় কেউ মাটিতে পুঁতেছে আবার কেউ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। এতে আর কিছু না হলেও একটা শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি এ শিল্পটিকে রক্ষার।

ওই গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী এলিন মিয়া বলেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা আটকায় আমরা পাওনা টাকা আদায় করতে গেলে শতকরা দুই ভাগ আমাদের দেয়। এতে না হয় লবণের জোগাড়, না দেয়া যায় শ্রমিকের মজুরী। তাই এবার চামড়া ক্রয় করতে পারিনি।

স্থানীয় এতিমখানার সদস্য জাহেদ বলেন, আমাদের এতিমখানা পরিচালনা জন্য বড় অংকের আয়ের উৎস হলো চামড়া বিক্রির টাকা। এবার কি দিয়ে এতিম খানা চলবে ভেবে পাচ্ছি না।

বালিকান্দি গ্রামের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়া বলেন, রাতের বেলা বিভিন্ন চামড়া সংগ্রহকারী এসে বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে কিন্তু আমরা রাখতে পারিনি। অনেকে রাস্তায় চামড়া রেখে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় আমিরপুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ওয়ালিদুর রহমান বলেন, আমরা বছরে একবার চামড়া সংগ্রহ করি, যা বিক্রি করে এতিম অসহায়দের সাহায্য করি। কিন্তু এবার যে কি হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। স্থানীয় ভাবে বিক্রি করতে না পেরে বালিকান্দি নিয়ে যাই। রাত ২টা পর্যন্ত কোন ক্রেতার দেখা পাইনি। অবশেষে বিনামূল্যে দিতে চাইলেও কেউ তা নেননি। পরে পাশের মনু নদীতে ফেলি।


আরো সংবাদ



premium cement